ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢামেক চত্বরে প্রতিদিন ধূলিঝড়, দেখার কেউ নেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
ঢামেক চত্বরে প্রতিদিন ধূলিঝড়, দেখার কেউ নেই

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরে শুকনো মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল দেখা যায় ধূলিঝড়। তবে এ ধূলিঝড় প্রাকৃতিক কোনো বিষয় নয়।

জরুরি বিভাগ চত্বরের সামনে হাসপাতালের লোকজন একযোগে ঝাড়ু দেওয়ার কারণে এ ধূলিঝড় হতে দেখা যায়। এ সময় হাসপাতালে আসা লোকজন ধুলা থেকে বাঁচতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরে প্রতিদিনের মতো দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজনকে হাসপাতালে আসা রোগী ও অন্যদের উপেক্ষা করে একযোগে ঝাড়ু দিতে দেখা যায়। প্রতিদিন সকাল-বিকেল ঘণ্টা দুয়েক এ ধূলিঝড় হতে থাকে। হাসপাতালে কে প্রবেশ করলো, কে বাইরে চলে যাচ্ছে তাদের দেখার বিষয় না। তারা পারলে লোকজনের ওপর দিয়েই ঝাড়ু দিতে থাকে।

হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগের সামনের চত্বর অনেক বড়। পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে শুরু করে পুরোটা ঝাড়ু দিতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লেগে যায়। এ সময় হুরহুর করে উড়তে থাকে ধুলো। অথচ গত ৭/৮ বছর আগেও সরকারি কর্মচারী জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি পাইপের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে প্রায় একাই ঝাড়ু দিতেন জরুরি বিভাগ। কয়েক বছর আগে সর্দার হওয়ার কারণে এ কাজ থেকে তিনি এখন বিরত আছেন। তিনি হাসপাতালের নতুন ভবনে এখন ডিউটি করেন।

সূত্র আরও জানায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বাথরুম আছে। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে ঝাড়ু দিতে পারে। এছাড়া জরুরি বিভাগের পাশেই একটি পানির পাম্প আছে। সেখান থেকেও পানি নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কারো কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন দুই বেলা এভাবে ঝাড়ু দিয়ে যাচ্ছে। আর ঘণ্টা দুয়েক ধূলিঝড় থাকছে জরুরি বিভাগ চত্বর। এভাবে চত্বরে পানি না ছিটিয়ে ঝাড়ু দেওয়ার সময় হাসপাতালে রোগী ও অন্যরা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কেউ মুখে কাপড় আবার কেউ ধূলিঝড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাসপাতালে ভেতরে দৌড়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। অথচ এগুলো ছোট একটি বিষয়। একটি নির্দেশেই সবকিছু পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু কারো দেখার নেই।

নারায়ণগঞ্জ থেকে রোগী নিয়ে হাসপাতালে নাজমা আক্তারসহ আরও কয়েকজন জানান, জরুরি বিভাগের সামনের চত্বরে প্রবেশ করে থমকে যাই, দেখি প্রচণ্ড ধুলা উড়ছে। পরক্ষণে দেখতে পারি কয়েকজন মিলে সেখানে ঝাড়ু দিচ্ছে। কী আর করা তখন নাকে-মুখে কাপড় দিয়ে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ভেতরে দ্রুত প্রবেশ করি।

নাজমা আক্তার জানান, ঝাড়ু দেওয়ার সময় ঝাড়ুদাররা কোনো কিছুই লক্ষ্য করে না। কে এলো বা গেলো তাদের কিছুই করার নেই। তারা ঝাড়ু দিতেই থাকে।

এভাবে জরুরি বিভাগের সামনে ঝাড়ু দেওয়ার সময় দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দ্বীন ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জরুরি বিভাগের জিল্লুর রহমান স্যারের নির্দেশনা এভাবেই আমরা ঝাড়ু দিয়ে থাকি। আমাদের পানির বিষয়ে কোনোদিন কিছু বলেনি।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব জানান, শুকনো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ধুলোর মধ্যে পড়তে হয় মানুষদের। এতে হাঁপানি রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়। এছাড়া স্কিন ড্রাই হওয়ার কারণে চুলকানি হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।

এ ব্যাপারে হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে অবশ্যই পানি ছিটিয়ে ঝাড়ু দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পানি ছিটানোর জন্য প্লাস্টিকের পাইপ তার রুমে রাখা আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।