ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

রাজ্জাক ভেবেছিলেন ৫শ’ উইকেটের অভিনন্দন!

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৮
রাজ্জাক ভেবেছিলেন ৫শ’ উইকেটের অভিনন্দন! ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের বাংলাদেশ স্কোয়াডে আব্দুর রাজ্জাকের অন্তর্ভুক্তির পর চট্টগ্রামের টিকিট নিশ্চিত করেই তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা সজিব ফোন করেছিলেন। ফোন করেই বলেন, ‘অভিনন্দন।’

কিন্তু তখনও দেশের এই শীর্ষ বাঁহাতি স্পিনার জানতেন না, তার দলে অন্তর্ভুক্তি। তাই সজিবকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কিসের জন্য।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেট শিকার করেছি বলে?’ তখন সজিব বলেন, না, ‘আপনি স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি হয়েছেন বলে। আপনার চট্টগ্রাম যাত্রার টিকিট কনফার্ম। ’

কিন্তু তখনও ঘোরের মধ্যে রাজ্জাক, ভাবছেন আসলে হচ্ছেটা কি? তবে পরে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর এক ফোনেই কেটে যায় সকল অনিশ্চয়তা।

চট্টগ্রাম টেস্টকে সামনে রেখে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকও।

অনুশীলন শুরুর আগে স্বয়ং রাজ্জাক নিজেই শুনিয়েছেন আগেরদিন নিজের কাছেই চমক হয়ে আসা সেই খবরের গল্প।

অনেকদিন পর দলে ফিরছেন, কেমন অনুভূতি হচ্ছে-এমন প্রশ্নে রাজ্জাক ধীর গলায় বলে গেলেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগার ব্যাপার আছে। কিন্তু আমি খুব অবাক হয়েছি, চিন্তাও করিনি এই সময়ে এমন কিছু হবে। তাই মাথায়ও ছিল না ব্যাপারটা। হঠাৎ যখন জানতে পারলাম আমাকে বলার পর, তখনও বুঝতে পারছিলাম না, আসলে কি হচ্ছে? যা শুনলাম তা ঠিক আছে কিনা সবকিছু। ’

প্রথমেই তাকে ফোন করেন বিসিবির পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান। তবে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। পরে টিকিট নিশ্চিত করে ফোন করেন বোর্ডের কর্মকর্তা সজিব। এর পরেই আসে নান্নুর ফোন কল।

রাজ্জাক বলেন, ‘আকরাম ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তবে তা পরিষ্কার কিছু না। তারপর সজিব ভাই ফোন করে অভিনন্দন জানালেন, টিকিটের বিষয়ে জানালেন। এরপর নান্নু ভাইয়ের ফোন পেয়ে সবকিছু নিশ্চিত হই। ’

হঠাৎ ডাক পাওয়ার বিষয়ে বিস্মিত রাজ্জাকের অভিমত, ‘জাতীয় দলে ফিরবো সেই লক্ষ্য ছিল। ভাগ্য যখন আসবে তখন ডাক পড়বে সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু এই সময়ে, এভাবে এরকমভাবে হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। ’

অনেকদিন পর রাজ্জাকের এই ফিরে আসা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করাদের কাছেও বড় বার্তা বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের এক সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘কখনও শেষ হয় না। সুযোগ হচ্ছে না, হবে না ভেবে ফেলা উচিত না। ভালো খেললে টিমের এক সময় প্রয়োজন পড়তে পারে। অপেক্ষাটা তাই কতদিনের হবে তা চিন্তা করা উচিত নয়। আমার বিষয়ে তো ৯৫ শতাংশ মানুষই ভেবে নিয়েছিল রাজকে দিয়ে হয়তো আর হবে না। কিন্তু আমার ভেতরে এটা কাজ করতো যে-ভালো খেললে একদিন আমি হয়তো ফিরবোই। ’

ছবি: সংগৃহীতসাকিব আল হাসান না থাকাটা বাংলাদেশ দলকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিয়েছে। কারণ সাকিব না থাকা মানে একজন ব্যাটসম্যান আর একজন বোলার কমে যাওয়া। আব্দুর রাজ্জাকও মানেন সেটা।

তার কথায়, ‘সাকিব শুধু দেশের না, ওয়ার্ল্ডের বেস্ট অলরাউন্ডার। ওর জায়গা পূরণ করা কঠিন। কারণ ওর জায়গা পূরণ করতে হলে, একজন ব্যাটসম্যান নিতে হবে, নিতে হবে একজন বোলারও। সেটা দিয়েও যে পুরোপুরি সাকিবের অভাব পূরণ হবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। সে অনেকদিন ধরে নিয়মিত খেলছে, অনেক পরিণত ছেলে। টিমের জন্য এখন কাউকে ম্যানেজ করতে হবে। ’

সাকিবের না থাকার সময়ে দলে সুযোগ পেলে বাড়তি কি প্ল্যান করবেন এমন প্রশ্নে রাজ্জাক অবশ্য নিজের শক্তির ওপরই থাকতে চান, বাড়তি কিছু করতে গিয়ে মূল জিনিসটাই হারাতে চান না।

‘স্বাভাবিক প্ল্যান করছি। আলাদা কিছু ভাবছি না। সুযোগ পেলে নিজের সর্বোচ্চটাই দিতে চেষ্টা করবো। আর আমি বড় প্ল্যান নিয়ে কখনও এগোই না। বর্তমানের কথা ভাবি। তাই বর্তমানেই সেরাটা দিতে চেষ্টা করবো। ’

সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে যে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন আর ফেরা হয়নি তার সময়ে, এখন যখন আবার সুযোগ আসলো হাথুরু তখন শ্রীলঙ্কার কোচ। তাকে কোনো কিছু দেখিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ভেতরে ভেতরে পুষেছেন কিনা? এমন প্রশ্নে শান্তই থাকলেন দেশের এক সময়ের এই নাম্বার ওয়ান বাঁহাতি স্পিনার।

বলেন, ‘ওসব নিয়ে ভাবছি না। এসব আমার ভেতরে কাজ করে না। সেসব আমি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি। আমি চেষ্টা করবো ভালো খেলার জন্য-তা আমার জন্য, আমার টিমের জন্য। কাউকে দেখিয়ে দিতে নয়। ’

বড় বিস্ময় হয়েই স্কোয়াডে ঢুকে পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক। অবশ্য সাকিব না থাকার এই সময়ে প্রথম টেস্টের একাদশে আব্দুর রাজ্জাককে দেখলে বিস্ময় হওয়ার তেমন কারণ থাকবে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে উইকেট নিয়েছেন-তাকে তো একবার বাজিয়ে দেখতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট!

প্রসঙ্গত, গত ২৫ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচের আগে রাজ্জাকের হাতে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের স্মারক তুলে দেয় বাংলাদেশ দল। ১০ হাজার রানের স্বীকৃতি পান তুষার ইমরান।

শ্রীলঙ্কার কাছে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে হারের হতাশা ভুলে টেস্ট সিরিজ মিশন নামছে টিম বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে হাতে চোট পেয়ে ব্যাটিং নামতে না পারা সাকিব ছিটকে গেছেন প্রথম টেস্ট থেকেও।

আগামী বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়াবে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শুরু সকাল সাড়ে ৯টায়। ঢাকায় দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। টেস্টের পর রয়েছে দু’টি টি-টোয়েন্টি (১৫ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে ঢাকা ও সিলেটে)।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৭
টিএইচ/টিসি/এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।