ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বন্যায় ফুলগাজী-পুরশুরাম বাসীর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২৩
বন্যায় ফুলগাজী-পুরশুরাম বাসীর অবর্ণনীয় দুর্ভোগ 

ফেনী: গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে  প্লাবিত হয়েছে ফেনীর ফুলাগজী-পরশুরামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

ডুবে আছে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাছের ঘের-পুকুর। নদীর পানি কমলেও লোকালয়ে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভোগান্তি কাটেনি ১৫ গ্রামের ১২ হাজার মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে পানি কমা ছাড়া বাঁধ মেরামতের কোন উপায় নেই।  

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে ভর্তি ছিলেন ষাটোর্ধ্ব হাফেজ আহম্মদ। মেয়ে সুস্থ্য হওয়ার পর ফেরার পথে পড়েছেন আরেক দুর্ভোগে। কোমার পানি মাড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে হেঁটেই রওনা করেছেন।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। কোমর পানিতে জামা-কাপড়, বই-পত্র ভিজলেও পরীক্ষা থাকায় যেতে হচ্ছে স্কুলে। ফুলগাজী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা খাতুন বলেন, কলেজে সমাপনী পরীক্ষা চলছে। যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।  

এদিকে তিনদিনের বেশি বন্যা থাকায় ডুবে গেছে ধান-ফসল। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। সব ধরনের শাকসবজির দাম বেড়েছে। বেড়েছে মাছের দামও৷ গনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা আফসার উদ্দিন বলেন, মাঠের শাকসবজি ঢলের পানির নিচে। বাজারে সবজির দাম বাড়ছে অসহনীয় ভাবে।  

ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পরশুরামের অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। সাহাব উদ্দিন নামের এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, মালামাল নিয়ে যাচ্ছিলাম বন্যার পানিতে ডুবে গাড়ি বিকল হয়ে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে মুহুরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। নদীর পরশুরাম পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনই বাঁধ মেরামত সম্ভব নয়। পানি আরও কমলে মেরামত কাজ শুরু হবে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফেনীর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভূঞাঁ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ফুলগাজীতে ৩শ হেক্টর ও পরশুরামে ১৬৫ হেক্টর রোপা আমন নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। এছাড়াও নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে সবজি ক্ষেত।

ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানান, বন্যার পানিতে দুই উপজেলার ৩৭৫ পুকুর ও ঘেরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।  ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নির্ণয় ও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহযোগিতা করতে মাঠপর্যায়ে মৎস্য বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জল বনিক ফুলগাজী। এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, প্রতিবছর বন্যায় আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়। এই এলাকার মানুষ বন্যার স্থানী সমাধানের জন্য নদী খনন ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ চায়।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন- বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে আমরা আছি। প্রয়োজনীয় শুকানো খাবার দেয়া হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো।

বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বাড়ার ফলে জেলার সীমান্তবর্তী এ দুই উপজেলায় নদীর ভাঙন দেখা দিলে মানুষের দুর্ভোগ লাগামহীন হয় প্রতি বছর। টেকসই বাঁধ মেরামতের জন্য ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে নিরীক্ষণ শেষে। নদীতে পানির প্রবাহ কিছুটা কমে আসলে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হবে বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।  

প্রতিবছর এমন অবর্ননীয় দুর্ভোগ থেকে রেহায় পেতে মুহুরী-কহুয়া, সিলোনীয়া নদী তীরে স্থায়ী বাঁধের দাবী বানভাসি লাখো মানুষের৷ 

বাংলাদেশ সময় ১৫৪৫ ঘণ্টা,আগস্ট ১০, ২০২৩
এসএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।