ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাঁচ শিশু-তরুণকে ভাটায় আটকে রেখে কাজে বাধ্য করার অভিযোগ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
পাঁচ শিশু-তরুণকে ভাটায় আটকে রেখে কাজে বাধ্য করার অভিযোগ 

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রামজীবনপুর জেলে পাড়ার তিন শিশু ও দুই তরুণকে ভোলার চরফ্যাশনের রনক ইটভাটাসহ অপর একটি ইটের ভাটায় আটকে রেখে কঠোর পরিশ্রমের কাজে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শ্রমিক সর্দার মিজানুর রহমান স্বল্প পরিশ্রমের শর্তে বাড়ি থেকে নিয়ে যেয়ে এসব শিশু ও তরুণকে কৌশলে আটকে রেখে চরম কষ্টের কাজে লাগাচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী শিশু ও দুই তরুণের পরিবারের দাবি।

পূর্ণ বয়স্কদের সমান কাজ করতে না পেরে মোবাইলে পরিবারের কাছে নিজেদের উদ্ধারের আকুতি জানানোর পর সন্তানদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছে তাদের স্বজনরা।

এমনকি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলাসহ পরক্ষণে দুই ভাগে বিভক্ত করে এসব শিশু ও তরুণকে পৃথক দুটি ইটভাটায় রেখে কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।  

এদিকে ইটভাটার কাজে নিয়োজিত অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের ফিরে পেতে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পাঁচ শিশুর পরিবার।

তারা সমবেতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেনের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত সন্তানদের উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

এসময় তারা জানান, সন্তানরা নিজেদের ওপর নির্যাতনের তথ্য বাড়িতে ফাঁস করে দেওয়ায় তাদের কাঠের চ্যালা (পোড়া কাছ) দিয়ে গত রোববার রাতে বেপরোয়া মারধর করা হয়েছে। এমনকি তাদের সন্তানদের সঙ্গে চুক্তিপত্রের সাদা স্ট্যাম্প কাজে লাগিয়ে পরিবারসহ কর্মরত শিশুদের মামলা দিয়ে হয়রানি করারও হুমকি দিচ্ছে সর্দার ও তার লোকজন।

ইটভাটায় আটকে পড়া শিশু ও তরুণদের স্বজনরা জানান, করোনার সময়ে স্কুল ও মাদরাসা বন্ধ থাকায় লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নয়ন, আশিক ও আল আমিন। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের মিজানুর রহমান তাদের ছয় মাসে বায়ান্ন থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ইটভাটার কাজে নিয়ে যান। এর আগে ভিম ও অসীম নামের দুই তরুণকে যথাক্রমে ১ লাখ ১৫ ও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে একই ইটভাটার কাজে নিয়ে যায় মিজানুর রহমান।

তাদের অভিযোগ, স্বল্প পরিশ্রমের (ইট উল্টানো) কথা বলে ইটভাটায় নেওয়া হলেও সেখানে নিয়ে কঠোর পরিশ্রমের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে ছোট্ট এসব শিশু ও তরুণদের। এছাড়া ইটভাটা থেকে কয়েকজন পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিক পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিক সংকটের সুযোগে তাদের বড়দের ভারি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অগ্রীম নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও শ্রমিক সর্দার তা মানছেন না বলেও পরিবারগুলোর দাবি।

ভিমের বাবা সিন্ধু ধিবার জানান, কষ্টের কাজ করতে না পেরে তার ছেলে গত রোববার পালানোর চেষ্টা করে। এসময় ভিমকে আটকের পর তার প্রতিবেশীর ছেলে অসীমের সঙ্গে বেঁধে বেপরোয়া মারধর করেছে। ওই ঘটনার পর থেকে সর্দার মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সে ফোন ধরছে না।  

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বাদল জানান, এসব বিষয়ে থানা পুলিশকে কেউ কিছু জানায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন জানান, নিজ সন্তানদের উদ্ধারে সিন্ধু, শম্ভু ও সারথী ধিবার নামে কয়েকজন তার কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত অপ্রাপ্ত বয়স্কদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।