ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী

মো. আমিরুজ্জামান, ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরের হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় মনসুরী মিঠাই। বেসন, ছোলার ডাল আর চিনি দিয়ে বানানো এই মিষ্টি সংরক্ষণ করা যায় বেশ কয়েক দিন।

 

মোঘল আমলের এ মনসুরী শহরের আনাচে-কানাচে শতাধিক রেস্তোরাঁয় ময়রারা তৈরি করতেন মনসুরী মিঠাই। শহরের গোলাহাট রেলকলোনির বাসিন্দা মো. ভোলা। বংশ পরম্পরায় তিনি মনসুরী মিঠাইয়ের কারিগর।

ভোলা, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বিহারী অধ্যুষিত জনপদ সৈয়দপুরে চলে আসেন। ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, সৈয়দপুরে তিনিই প্রথম মনসুরী মিঠাই বানিয়েছেন। ধীরে ধীরে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ভোলা জনান, মনসুরী মিঠাই বানাতে প্রয়োজন হয় সয়াবিন তেল, চিনি, বেসন ও ছোলার ডাল। প্রথম প্রথম যখন মনসুরী মিঠাই বানাতাম তখন কিন্তু সয়াবিন তেল ব্যবহার হতো না। খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি হতো মনসুরী মিঠাই।  

আরেক কারিগর আব্দুল জলিল জানান, আমি হোটেলের কারিগর। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাড়িতে মনসুরী মিঠাই তৈরি করে সৈয়দপুর ও আশেপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি করে আসছি। এ মিষ্টিটি সবার কাছে খুব প্রিয়।

সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টি ভাণ্ডার। পাকিস্তান আমলে ওই রেস্তোরাঁটির নাম ছিল দিলকুশা সুইটমিট। এর মালিক কামরানও এসেছিলেন বিহার থেকে। তার রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মনসুরী মিঠাই তৈরি হয়। ২০০৪ সালে মালিক কামরুদ্দিন মারা যান। এরপর ওই দোকান পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে একমাত্র ছেলে মো. কাওসারের ওপর।

মিষ্টি ব্যবসায়ী কাওসার বলেন, যতদূর জেনেছি মনসুরী মিঠাই প্রথম দিল্লীতে তৈরি হয়। মোঘল সালতানাতে স্বাস্থ্যকর ওই মিষ্টান্নটি পরিবেশন করা হতো। ময়রারা খুব যত্নে করে মনসুরী বানাতেন। আফগানিস্তানের কাবুলের একজন ময়রার নাম ছিল মনসুর পাঠান। পরে সেই মনসুরের নামে মিষ্টির নাম হয়ে যায় মনসুর বা মনসুরী। তবে এ নিয়ে ভিন্নমত আছে বলে জানান তিনি।

অনেকের মতে, মিষ্টিতে আছে মন চুরি করার মতো স্বাদ। তাই এর নাম মনসুরী। যার অপভ্রংশ মনসুরী মিঠাই।

সৈয়দপুর পাহলয়ান সুইটসের স্বত্বাধিকারী সখেন ঘোষ বলেন, মনসুরঅ মিঠাই মূলত সস্তা দামের মিষ্টি। সয়াবিনসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়লেও মনসুরী বিক্রি হয় ২২০ কেজি দরে। আমরা কম দামের ওই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিটির উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছি। এখনও সৈয়দপুরে শতাধিক রেস্তোরাঁয় কমপক্ষে ১০০ মণ মনসুরী তৈরি হয়।  

স্থানীয়ভাবে তো বেচাকেনা আছে, এরপরও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা নিজেদের রেস্তোরাঁয় মনসুরী কিনে নিয়ে যান। রাজধানী, ঢাকাতেও যাচ্ছে আমাদের মনসুরী মিঠাই।

সৈয়দপুর শহরের দিলশাদ হোটেল, সিরাজ হোটেল, জিআরপি ক্যান্টিন, বনফুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নাটোর দই ঘরসহ ফুটপাথ ও রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা চা-মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন মনসুরী মিঠাই তৈরি হয়। যেকোনো উৎসবে মনসুরী মিঠাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে মনসুরী মিঠাই থাকা চাই।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরী মিঠাই টিকিয়ে রেখেছেন হোটেল মালিক ও কারিগররা। দারুণ স্বাদের এই মিষ্টি আত্মীয়-স্বজন কিংবা সৈয়দপুরে কেউ বেড়াতে এলে সঙ্গে করে নিয়ে যান। বাঙালি-বিহারী অধ্যুষিত সৈয়দপুরে বিয়ে বাড়িতে কিংবা মিলাদ মাহফিলে মনসুরীর কদর সবচেয়ে বেশি।  

কারিগরদের সহযোগিতা করতে পারলে ঐতিহ্যবাহী মনসুরী মিঠাই টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।