ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘আমরা চেষ্টা করি, চূড়ান্ত ন্যায়বিচার আল্লাহই করবেন’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
‘আমরা চেষ্টা করি, চূড়ান্ত ন্যায়বিচার আল্লাহই করবেন’

ঢাকা: ‘আমরা ন্যায়বিচারের চেষ্টা করি। সবসময় শতভাগ পারি তা বলব না, অনেক সময় আমাদেরও ভুল হতে পারে।

চূড়ান্ত ন্যায়বিচার একমাত্র আল্লাহ করবেন। ’

দুর্নীতির এক মামলার শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের মামলায় পুলিশের সাবেক উপ-মহাপদির্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের মামলার শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।  

আলোচনার অবতারণা করেন ডিআইজি মিজানের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। তার পক্ষে এই আইনজীবী এদিন যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করেন। শুনানিতে মিজানুর রহমানকে নির্দোষ দাবি করে তিনি ন্যায়বিচার চান।

যুক্তিতর্কের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াত উদ্বৃত করেন। প্রথমে তিনি আরবিতে আয়াতটি পাঠ করেন। এরপর বাংলা অনুবাদ পড়ে শোনান। ওই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা বাবা-মা অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র। তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত। ’

তখন বিচারক বলেন, আমি বিচারের ক্ষেত্রে আপনার উদ্ধৃতি বিবেচনায় রাখলেও এটি যক্তিতর্ক হিসেবে নোট নিতে পারছি না। কারণ আমরা যখন শপথ নেই তখন কিন্তু ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ নেই না। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি আইনপ্রণেতারা এখানে কি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথের বিষয়ে বাদ দিয়েছেন, নাকি অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়েছে? তবে আমার মনে হয়, উনারা ইচ্ছা করেই এই বিধান রাখেননি। কারণ ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করলে তখন অনিচ্ছাকৃত ভুলটাও অন্যায়ের মধ্যে পড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আপনারা আমাদের সৃষ্টিকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ন্যায়বিচারক বলেন। কিন্তু আমার মতে শুধু আমার চেয়ার নয়, আপনারাসহ প্রত্যেকে যে দায়িত্বে আছেন, তারাও একজন ন্যায়বিচারক। এখানে বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর সাহেবের কাছে একজন মানুষ কোনো বিপদে পড়ে আসলে, তিনিও তাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন—এটাও ন্যায়বিচার। শুধু পাবলিক প্রসিকিউটর নয়, আপনি আমি সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে একজন বিচারক। তাই আমরা ন্যায়বিচারের চেষ্টা করি, তবে এক্ষেত্রে অনেক সময় ভুলভ্রান্তিও হতে পারে। তবে চূড়ান্ত ন্যায়বিচার আল্লাহই করবেন।

এ সময় দুদকের প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ন্যায়বিচার হলো একটা ভারসাম্য। এ সময় তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা আররহমানের ৮ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করেন। প্রথমে আরবিতে ওই আয়াতটি পাঠ করার পর তিনি বলেন, ন্যায়বিচার হলো ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। একজন বিচারকের দায়িত্ব হলো ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। আমরা যদি সেই দায়িত্ব পালন করি তবে ভুল হলেও বাকিটা আল্লাহ হয়তো মার্জনা করে দেবেন।

এরপর বিচারক এই মামলায় বৃহস্পতিবার দিনের মতো কাজ মুলতবি করেন। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। এরপর বিচারক এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
কেআই/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।