ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ফাঁসির রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে এ রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ এ রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা মীর কাসেমের মামলার আইনি লড়াই। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টিও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছালো। সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় ফাঁসির রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হচ্ছে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলের নির্যাতনকেন্দ্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে হত্যার দায়ে। আপিল মামলার রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। রিভিউ আবেদনের রায়েও এ সাজা বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৮ মার্চ চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। গত ০৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরদিন ০৭ জুন সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।

গত ১৯ জুন ৬৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। এরপর শুনানির দিন ২৫ জুলাই ধার্য হলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে একমাস পিছিয়ে ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ।

গত বুধবার (২৪ আগস্ট) ও রোববার (২৮ আগস্ট) রিভিউ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এটি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া সপ্তম আপিল মামলা, যার একটির রিভিউ আবেদনের শুনানি বাকি রয়েছে।

এর মধ্যে আপিল ও রিভিউ আবেদনের রায়ের ভিত্তিতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে পাঁচ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর। তারা হলেন- একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ বলে পরিচিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নৃশংস যুদ্ধাপরাধের হোতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর প্রধান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম যুদ্ধাপরাধের হোতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী।

অন্যদিকে আপিলে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে রিভিউ শুনানির অপেক্ষায় আছেন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্লা রাজাকার। সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিলেও সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর খালাস চেয়ে সাঈদী এবং সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে রিভিউ অাবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষ।    

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
ইএস/এএসআর

**
‘মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণে এ সাজা’
** বুধবার সকাল-সন্ধ্যা জামায়াতের হরতাল
** ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা নেই’
** মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের রায়ের অপেক্ষা
** মীর কাসেম আলীর রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন অ্যাটর্নি জেনারেল
** মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের রায় কার্যতালিকায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।