ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আপনার জান্নাত কি বৃদ্ধাশ্রমে বন্দি?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৮
আপনার জান্নাত কি বৃদ্ধাশ্রমে বন্দি? ফাইল ছবি/ বাংলানিউজ

আল্লাহ ও রাসুলের পর মা-বাব দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্মানী ব্যক্তি। মহান আল্লাহ তাআলা তাদের সম্মান-শ্রদ্ধা ও সর্বাত্মক দেখাশোনার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের সম্মানে কোরআনে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে।

আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো। ’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৪)

পিতা মাতার শুকরিয়া আদায় করতে হয় তাদের সেবা-শ্রদ্ধা ও খেদমতের মাধ্যমে। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কোনো সাহাবিকে যুদ্ধে না নিয়ে মা-বাবার খেদমতের হুকুম করেছিলেন। একবার এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের উভয়ের (খেদমত করে) সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর। (মুসলিম)

মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি জিহাদ-সংগ্রাম করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন?  তিনি বললেন, আছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত। ’ (মুসলিম)

বাংলনিউজ ফাইল ছবি

যেখানে আল্লাহর নবী একজন সাহাবিকে যুদ্ধ-সংগ্রামে না নিয়ে তার মা বাবাকে সময় দিতে বলেছেন, সেখানে কীভাবে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ ইত্যাদির বাহানা দেখিয়ে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাই? তাদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে কেউ যত বড় সমাজসেবক কিংবা পুণ্যবান অথবা যত বড় দানশীলই হোক না কেন, সেগুলো কি আদৌ আমাদের জান্নাতে নিতে পারবে? কেননা ‘জান্নাত’তো তখন বৃদ্ধাশ্রমে বন্দি!

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো আমাদের জান্নাত। ’ (ইবনে মাজাহ-মিশকাত, পৃষ্ঠা: ৪২১)

অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন। ’ (বায়হাকি-মিশকাত, পৃষ্ঠা: ৪২১)

লাখ টাকা খরচ করে হাজার বার হজ-ওমরাহ করে আসলেও কেউ এই নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবে না যে, তার কোনো হজ আদৌ কবুল হয়েছে কিনা। কিন্তু মা বাবার দিকে একবার অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকালেই আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি কবুল হজের সাওয়াবের সুসংবাদ দিয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রম অনেকের কাছে স্বাভাবিক একটি বিষয়। বাংলাদেশে খুব বেশি পুরোনো না হলেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ শতকে। প্রথম ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এই উদ্যোগ নিয়েছিল শান রাজবংশ।

পরিতাপে বিষয় হলো, যে মা-বাবার হাত ধরে আমরা দুনিয়ার আলো দেখেছি, যাদের রক্ত ঘামকে জ্বালানি করে জীবনযুদ্ধে শত বাধা জয় করে একটি এলিট সোসাইটির সদস্য হয়েছি, তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো কি কোনো বাবা-মা স্বানন্দে গ্রহণ করেন? যারা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তারা কি মা-বাবার মনের কথাটা বুঝার চেষ্টা করেছি? নাকি বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করে নিজেদের জন্যও এমন একটি দিনকে প্রস্তুত করছি? আল্লাহ আমাদের এসব মন্দ থেকে রক্ষা করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএমইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।