ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বাঙালির ভাই ফোঁটা ও কলকাতায় মিষ্টির বৈচিত্র্য 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
বাঙালির ভাই ফোঁটা ও কলকাতায় মিষ্টির বৈচিত্র্য  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: দুর্গাপূজা কিংবা কালীপূজা; এবার ভাই ফোঁটাতেও বাঙালির কোনো উৎসবকেই ছাড় দিচ্ছে না বৃষ্টি। শনিবার (২১ অক্টোবর) ভাই ফোঁটার দিনও নিম্নচাপের জেরে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাতেও কী থেমে থাকতে পারে ভাই-বোনের সম্পর্ক!

ভাইদের পাটভাঙা পাঞ্জাবি, বোনদের বাহারি নকশার কড়কড়ে তাঁতের শাড়ি, উপহার আর প্রদীপের আলোর আবেশে ভরা থালাময় মিষ্টির সাজ। বাঙালির বড় আবেগের দিন! আজ ভাই ফোঁটা।

 

সেই দিনে মিষ্টির বাহার যদি একটু চমকদার না হয়, তাহলে কি বোনদের মন ভরে? হয়তো ভাইদের মনও ওঠে না! 
 
মিষ্টির দোকানগুলোতেও তাই উৎসবের আমেজ। কারিগররা ব্যস্ত পাকঘরে, দোকানিরা ব্যস্ত ক্যাশ বাক্সে। আর থালা ভরা সারি সারি মিষ্টির আসর কাঁচের বাক্সগুলোয়। যেখানে সাবেক আর আধুনিক বৈচিত্র্যের যুগলবন্দি।  

ছবি: বাংলানিউজমোদির জিএসটি নিয়ে এমনিতেই মন ভালো না মিষ্টি ব্যবসায়ীদের। তাতে হাত মিলিয়ে সেই মন খারাপ আরও দীর্ঘতর করছে বৃষ্টি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ‘রাধারমণ মল্লিক ও বলরাম মল্লিক’এর অন্যতম কর্ণধার সুদীপ মল্লিক।  

বললেন, জন্মাষ্টমী, রাখীপূর্ণিমা বৃষ্টির যেন অন্ত নেই। দুর্গাপূজাতেও ভাসালো। এবার কালীপূজা-ভাইফোঁটাতেও একই রকম আবহাওয়া।  নরেন্দ্র মোদির জিএসটি’র পাশাপাশি বৃষ্টিও ব্যবসা মাটি করে দিয়েছে।  
 
এবারে ‘রাধারমণ মল্লিক ও বলরাম মল্লিক’এর স্পেশাল ভাই ফোঁটার থালা। ২০০ রুপি থেকে ৫০০ রুপির থালায় থাকছে পাঁচ, সাত কিংবা ১১ রকমের মিষ্টি। তার মধ্যে আছে চিত্রকুট, ভাই ফোঁটা সন্দেশ বা খাজার মতো ঐতিহ্যের মিষ্টি।  

পাশাপাশি আছে ডাব সন্দেশ, আতার পায়েস, আতা সন্দেশ বা আঞ্জিরের মিশেলে নলেনগুড়ের সন্দেশ।
 
কে সি দাশ প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তা ধীমান দাস বলেন, রসগোল্লা বা কালোজামের মতো চিরাচরিত মিষ্টির কদর সারাবছর যেমন থাকে, ভাই ফোঁটাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবু এখানেও আছে ভাই ফোঁটা স্পেশাল কয়েক ধরনের মিষ্টি।  
 
‘হিন্দুস্থান সুইটস’ মিষ্টি আর মেডিসিনের একটা বৈচিত্র্য এনেছে! গত কয়েক বছর ধরেই নানা রোগ উপশমকারী সন্দেশ বেচে সুনাম কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে গবেষণা করে তারা সেসব মিষ্টি তৈরি করেছে। তার কোনোটি খেলে ঘুম পাবে, আবার কোন মিষ্টি মুখে পড়লে হার্ট ভালো থাকবে। এসব মিষ্টি আবার একমাত্র তাদের দোকানেই পাওয়া যাবে, সেকথা গর্ব করে বলেন এখানকার কর্ণধার রবীন পাল।  

তার কথায়, সবকটি মিষ্টির পেটেন্ট নিয়ে বসে আছি। নকল করে, কার সাধ্যি! এবারও তিনি বাজারে এনেছেন আনকোরা দুটি মিষ্টি। একটি অ্যালোভেরা ভরা, অন্যটিতে থানকুনির কেরামতি! অ্যালোভেরা মিষ্টির নাম অল ইন ওয়ান।  

মূলত সন্দেশ জাতীয় এই মিষ্টিতে আছে অ্যালোভেরার জুস। রবীন পালের কথায়, এই প্রাকৃতিক উপাদানটিতে ত্বক ও চুল ভালো থাকে। আবার পেটও ভালো থাকে। তাই সন্দেশ খেলে জৌলুস বাড়তে পারে। দাম ১৫ রুপি থেকে শুরু। আর আছে থানকুনি পাতার সবুজ রসগোল্লা।  

১২ টাকার এই মিষ্টির গুণগান গাইতে গিয়ে তিনি বলেন, অ্যান্টি-ডিসেন্ট্রি রসগোল্লা খেলে পেট ভালো থাকবে। তবে খাওয়ার নিয়ম আছে। সকালে পানি খাওয়ার আগে দুটি, দুপুরে ভাত খেয়ে দুটি আর রাতে শুতে যাওয়ার আগে দুটি। মোট ছটি রসগোল্লা খেলেই হবে। সঙ্গে খানিকটা করে রসগোল্লার রস। তবে খেতে হবে গরম করে।
 
ছবি: বাংলানিউজহুগলী জেলার রিষড়ার ‘ফেলু মোদক’ এবার স্পেশাল ক্রিসপি খাজা আর গজা। খাজা নাকি এতটাই মচমচে যে তা মুখে দিলেই মিলিয়ে যাবে। যাদের দাত নেই, তারাও অনায়াসে খেতে পারবেন এই মিষ্টান্ন। সঙ্গে আছে ডার্ক চকোলেটে ভরা সন্দেশ ও বেকড ছানার কেক। পাশাপাশি এখানে আছে ম্যাঙ্গো চমচম।  

আমের সঙ্গে মালাই মিশিয়ে তৈরি হয়েছে আম-রাবড়ি। নারকেলের ফুল নিংড়ে যে রস তৈরি হয়, তার স্বাদও মিষ্টি। সেই রস দিয়ে এখানে তৈরি হয়েছে ‘নীরা’ সন্দেশ, যা প্রাকৃতিকভাবে সুগার ফ্রি। আছে নীরা রাবড়িও।  
 
হাওড়ার ‘ব্যাতাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ এর এবার বাজি মরিশাসের লিচু। ক্ষীর হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে দুধের সঙ্গে লিচুর রস মিশিয়ে এখানে তৈরি হয়েছে লিচুমুড। মুখে দিলে পাওয়া যাবে লিচুর এক আধটা টুকরো। আর আছে ফ্রুট চমচম। সেখানে শুকনো ফলের সঙ্গে  বেদানা আর পেস্তা। কিউই বাস্কেটে আছে ছানার মিষ্টির উপর ক্রিমের পরত। সঙ্গে উপরে কিউই ফলের অঙ্গসজ্জা।  
 
বাঙালি যে চিরকালই খাদ্য রসিক তা পরতে পরতে বোঝা যায়। যত না আয়োজন ভাই ফোঁটার নিয়ম-কানুনে, তার আশি ভাগ আয়োজন থাকে পাশে রাখা প্লেটে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।