ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কপি রাইট নিয়ে লেখকদের বেশি সচেতনতা দরকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
কপি রাইট নিয়ে লেখকদের বেশি সচেতনতা দরকার ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: চলমান কলকাতা বইমেলা পরিদর্শনে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মিনিস্ট্রি অব কালচারাল অ্যাফেয়ার্সের যুগ্ম সচিব মোহম্মদ মনজুরুর রহমান।

বইমেলায় বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উঠে এলো কপিরাইট থেকে আধুনিক কবিতা, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে জীবনানন্দ, দুই বাংলার সাহিত্যিকদের যোগাযোগ, বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়া, জাল বইয়ের বিক্রি বন্ধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপসহ নানা কথা।



বাংলানিউজ: কলকাতা বইমেলা কেমন লাগছে?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: দারুণ। বই নিয়ে এতো মানুষের উৎসাহ আমাকে আগেও অভিভূত  করেছে, এ বছরও আনন্দ দিচ্ছে।

বাংলানিউজ: কপি রাইট ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি  নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের চিন্তা-ভাবনা কী?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয় জানেন, পাইরেটেড বই ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশাসন বেশকিছু সফল অভিযান করেছে।

এছাড়াও একুশে বইমেলায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি আলাদা স্টল করা হয়, যেখানে কপি রাইট ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়।

বাংলানিউজ: শুধু বইয়ের ক্ষেত্রে নয় গানের ক্ষেত্রেও পাইরেসি বিপুল ক্ষতি করছে। এ বিষয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কি?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: অবশ্যই, গানের ক্ষেত্রে পাইরেসি খুবই ক্ষতিকর। সবার আগে সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে আইনটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সে তিনি সঙ্গীত শিল্পী, রেকর্ড কোম্পানি, এফএম চ্যানেল, গীতিকার, সুরকার যাই হোন না কেন। তাকে কপিরাইট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

বাংলানিউজ: লেখকরা কতোটা এ নিয়ে সচেতন?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: সবাই সচেতন নন, তেমন নয়। কিন্তু বেশিরভাগ লেখকরা এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। তাদের সচেতন হওয়ার দরকার সবচেয়ে বেশি। সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। জাল বই বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। কিন্তু লেখক, প্রকাশক, প্রচ্ছদ শিল্পী, ইলাস্ট্রেটরসহ সবাই যথেষ্ট সচেতন না হলে এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। পাঠকের সচেতনতাও একান্ত জরুরি।

বাংলানিউজ: আপনি বিশ্বের অন্য দেশগুলি দেখেছেন, ইউরোপ, আমেরিকায় এই সচেতনতা কতোটা?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: অনেক বেশি। এটি মুখে বলে হয়তো বোঝানো সম্ভব নয়। প্রতিটি স্তরে তারা এই বিষয়টিকে নিয়ে সচেতন। প্রকাশকের সঙ্গে লেখকের চুক্তি থেকে লেখকের মৃত্যুর পর তার পরিবারের রয়্যালটির অধিকার, পুরো বিষয়টি এই আইনের মধ্যে পড়ে।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে অনলাইন ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পড়ার চল অনেক বেশি। এ পরিপ্রেক্ষিতে 'কপিরাইট' কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: আমরা কিন্তু খবর পাওয়ার জন্য পরের দিনের খবরের কাগজের জন্য অপেক্ষা করি না। খবর জানার থাকলে আমরা অনলাইনে চোখ রাখি। আপনার কথা ঠিক, ডিজিটাল মাধ্যমে কপিরাইট ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি নিয়ে সচেতনতা ভীষণ জরুরি।

বাংলনিউজ: দুই বাংলার বই একে অন্যের দেশে পাওয়ার বিষয়টি কিন্তু এখনও সহজলভ্য হয়ে উঠলো না।
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে বাংলাদেশের লেখকদের বই কলকাতায় কলেজ স্ট্রিটের বেশ কিছু দোকানে পাওয়া যায়। ঢাকায় কিন্তু কলকাতার প্রকাশকদের বই ভালোই বিক্রি হয়। সরকারের পক্ষ থেকে পথ খোলা রয়েছে। বাকিটা ব্যবসায়িক প্রচেষ্টার দরকার।

বাংলানিউজ: জাতীয় কবি নজরুলের প্রভাব আজকের বাংলাদেশের যুব সমাজের কাছে কতোটা?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: অনেকটাই। বাংলাদেশের যুব সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে বাংলাদেশে অনেক কাজ হচ্ছে। আশা করি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষও সেটি জানেন। নজরুল একাডেমির সঙ্গে সঙ্গে জেলাগুলোতেও নজরুলকে নিয়ে কাজ হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক।

বাংলানিউজ: সরকারি প্রশাসকের পাশাপাশি আপনি নিজে একজন কবি। জানতে চাই, আধুনিক কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব কতোটা?

মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: ঠিক যেমন চর্যাপদকে বাদ দিয়ে বাংলাভাষার ইতিহাসের কথা বলা যায় না, তেমনই নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশকে বাদ দিয়ে বাংলা কবিতার কথা ভাবা যায় না। আমার মনে হয়, এই তিন কবি তিনটি নদীর সৃষ্টি করেছেন। যার স্রোত আবহমানকাল ধরে বয়ে যাবে।

বাংলাদেশে ‘বাংলা একাডেমি’ বাংলা ভাষা নিয়ে নানা ধরনের কাজ করছে। সেকথা আপনার সবাই জানেন। একুশে বইমেলায় ব্যবহারিক বাংলার উপর একটি অভিধান প্রকাশ করতে চলেছে বাংলা একাডেমি।

বাংলানিউজ: সাহিত্য কি রাজনীতি মুক্ত হওয়া কাম্য?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: আমি অতোটা বিশুদ্ধবাদী নই। আমি মনে করি, কবিতা কখনও প্রতিবাদ আবার কখনও ইশতেহার। সাহিত্য, ভাষা কখনও রাজনীতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

বাংলানিউজ: একজন কবির সাক্ষাৎকার কবিতা ছাড়া কি শেষ করা সম্ভব?
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: একটি দুই লাইনের কবিতা, সমকালীন প্রেক্ষাপটে লেখা, কিন্তু পাঠক তার জীবনের প্রেক্ষাপটে সেটি বিচার করুক এটিই আমি চাই।


 
দেওয়ালের ছবি নামালে বটে
হৃদয়ের ছবি নামাবে কে?

বাংলানিউজ: অনেক ধন্যবাদ
মোহম্মদ মনজুরুর রহমান: ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
ভিএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।