ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মশালডাঙা বিলে শুয়ে নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধারা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫
মশালডাঙা বিলে শুয়ে নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধারা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মধ্য মশালডাঙা (কুচবিহার) থেকে: ছিটমহলের বুকে দীর্ঘ দিন ধরে চাপা পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ছিটমহল হস্তান্তরের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই দিকটিকে খুঁজে পাওয়া গেলো।



একটি জলাশয় বা বিল, সেই বিলকেই মাঝখানে রেখে তার চারপাশে গড়ে উঠেছে ছিটমহলগুলি। একেবারে বিরাট আকারের মজা পুকুর বলতে যা বোঝায় এই বিলটি ঠিক তাই। সংস্কারের অভাবে প্যাঁক আর কচুরিপানা জমে এমন অবস্থা হয়েছে যে, কেউ বলে না দিলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়- এই বিল এক সময় ছিল টলটলে পানিতে পরিপূর্ণ। মধ্যে মধ্যে পলি জমে জেগে উঠেছে চর। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন এক দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠ।

এই বিলেই চারদশকের কিছু আগে কাঁচের মত স্বচ্ছ পানিতে খেলে বেড়াতো মাছের ঝাঁক, জলাশয়কে ঘিরে গ্রামের মেয়ে-ঝিদের কলরবে মুখর হয়ে থাকত বিলপাড়ের ঘাটগুলি। কিন্তু বহু যুগ ধরে এই বিলে আর কেউ নামে না। অনেকে কথা না শুনে নেমে বা মাছ ধরতে গিয়ে প্যাঁকে ডুবে মারাও গেছেন। কিন্তু কেন?

এই বিলকে ঘিরে থাকা ছিটমহলগুলিতে ঘুরে সেই প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া গেল একটাই কল্প কাহিনী। এই বিলে নামলে নাকি আর উঠে আসা যাবে না। দেবতার অভিশাপ। একমাত্র মাঝি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এখনও এই বিলে মাছ ধরতে নামেন।

খোঁজ করে পাওয়াও গেল সেই মাঝি সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে। তারা জানালেন, মারাং দেবতার পূজা করে এই বিলে নামলে তবেই কোন মাঝি সম্প্রদায়ের মানুষ সুরক্ষিত। তারা নিয়েও গেলো মারাং দেবতার মন্দিরে।

ছোট্ট একটি মন্দির, অনেকটা কলকাতার শনি ঠাকুরের মন্দিরের সঙ্গে মিল আছে। অনান্য আদিবাসী দেবতার চেহারার গঠনের সঙ্গে অনেকটা মিল আছে এই মাঝি সম্প্রদায়ের মারাং দেবতার।

কিন্তু একটি বিলকে ঘিরে এ ধরনের লোককথার উৎস কি? যখন জানা যাচ্ছে আজ থেকে ৪৫ -৫০ ছর আগেও এই বিল ছিল ব্যবহারযোগ্য। ইতিহাসের উপর থেকে কল্পকাহিনীর মোড়ক সরালেন মশালডাঙ্গা ছিটের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা।

তারা জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে এই বিলে এনে ফেলেছিল খান সেনারা। একটি দুটি নয়, অনেক মৃত দেহ বিভিন্ন সময়ে এই বিলে তারা ফেলেছিল। যাদের পরিচয় কোনো দিনই জানা যায়নি। এদের সঙ্গে যোগ ছিল এলাকার কিছু মানুষের।

তারাই তারপর রটিয়ে দেয়, এই বিলে নামলে মৃত্যু অবধারিত। ব্যবহার না করার ফলে দশকের পর দশক ধরে পানা পচে নষ্ট হয়ে যায় বিলটি।

পেটের তাগিদে কিছু মাঝি সম্প্রদায়ের মানুষ আজও মাছ ধরতে নামেন এই বিলে। তার আগে প্রচলিত রীতি মেনে হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষই মারাং দেবতার পূজা করেন। কিন্তু এই বিলকে ঘিরে ভয় আর মিথের চাদর পরিকল্পিতভাবে তৈরি করেছিল খান সেনা আর তাদের সহচররা। যাতে তাদের কুকর্মের কথা কেউ জানতে না পারে।

জমে যাওয়া বিল থেকে হয়তো কোন দিনও সেই মুক্তিযোদ্ধাদের দেহগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগের কথা কখনই ভোলা যায় না। তাদের দেহ, তাদের পরিচয় বিলের গভীরে মিলিয়ে গেলেও তারা অমর এবং অবিনশ্বর হয়ে আছেন সব শহীদ মুক্তি যোদ্ধার মতই।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫
ভি.এস/জেডএম

** ওই তো বিপ্লব ....
** বিজয় উৎসবে কম নন ভারতে যুক্ত হওয়া ছিটবাসীরাও
** আনন্দাশ্রুতে সিক্ত ছিটমহলের মাটি
** গোতামারীতে লাল-সবুজের পতাকা
** বিজয় উৎসবে কম নন ভারতে যুক্ত হওয়া ছিটবাসীরাও
** বাংলাদেশে যুক্ত হওয়া ৩৬ ভূখণ্ডে একযোগে পতাকা উড়লো
** অবসান হলো বঞ্চনার
** অন্ধকার থেকে মঙ্গল আলোয়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।