ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ৮ বছরের বেতন ৪ সপ্তাহে ফেরতের নির্দেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৪
চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ৮ বছরের বেতন ৪ সপ্তাহে ফেরতের নির্দেশ

কলকাতা: নির্বাচনের মধ্যেই বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট।

ওই শিক্ষকদের চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ বেতন ফেরত দিতে বলেছেন আদালত।  সোমবার (২২ এপ্রিল) এ রায় ঘোষণা করা হয়।

গত তিন বছর ধরে বাংলার রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোড়ন ফেলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে অনেক অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছিল। টেট (প্রাথমিক স্কুল) এবং এসএসসির (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের (টেট) মামলা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

হাইকোর্ট জানিয়েছেন, ভুয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করা হলো। যারা ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বেতন ফেরত দিতে হবে। কারণ তাদের জনগণের টাকা থেকে বেতন দেওয়া হয়েছে। ১২ শতাংশ সুদসহ চার সপ্তাহের মধ্যে সেই বেতন ফেরত দিতে হবে সবাইকে এবং এই টাকা উদ্ধারের জন্য ছয় সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। অর্থাৎ ২০১৬-২০২৪ এই আট বছরের যে বেতন ভোগ করেছেন, তা সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে।

এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশ দিয়েছেন, এসএসসি মামলায় তদন্ত চালিয়ে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) এবং তারা মনে করলে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তাতে খুশি হবেন যোগ্যপ্রার্থীরা।  

এর আগে অযোগ্যদের চাকরি বাতিল এবং যোগ্যদের নিয়োগের দাবিতে এক হাজার ১৩৫ দিন ধরে কলকাতার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। দ্রুত বিচার এবং নিয়োগ চাইছিলেন তারা। সবাই আজ আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

যোগ্যপ্রার্থীদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার দ্রুত শুরু হোক। যেভাবে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, যেভাবে নম্বর মেনুপুলেশন করে চাকরি দেওয়া হয়েছে, যত দুর্নীতি ছিল সব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে চাকরি। অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি কিনেছেন। ফলে হাইকোর্টে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমরা অত্যন্ত খুশি।

এর আগে এসএসসি মামলায় প্রায় আট হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। মামলা যায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। পরে সুপ্রিম কোর্ট এসএসসির এই চাকরি বাতিলের মামলা আবার হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়েছিলেন।

বর্তমানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন। রাজ্যের শাসক দলের দাবি ছিল, বিজেপিতে যাওয়ার জন্যই তিনি শাসকের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। যদিও অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বারেবারে বলেছেন, চেয়ারে বসাকালীন তার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যদি কোনো অন্যায় থাকে তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে শাসক দল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল শাসক দল। কিন্তু সব শুনে দেশটির শীর্ষ আদালত ফের কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ফেরত পাঠিয়ে দেন।

পাশাপাশি হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চকে ছয় মাসের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শুনানি চলেছে। ২০ মার্চ শুনানি শেষ হয়। তারপর রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিলেন হাইকোর্ট। সোমবার সেই রায় রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গেলো। ছয় সপ্তাহের মধ্যে শাসক দলকে টাকা উদ্ধারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি সিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হলো, যাকে প্রয়োজন তাকেই হেফাজতে নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, এপিল ২২, ২০২৪
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।