ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অমর্ত্যের বাসার সামনে কর্মীদের অবস্থানের নির্দেশ মমতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২৩
অমর্ত্যের বাসার সামনে কর্মীদের অবস্থানের নির্দেশ মমতার

কলকাতা: বাঙালি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত ঝামেলা অব্যাহত আছে। বিশ্বভারতীর উচ্ছেদের নোটিশের প্রতিবাদে আরও জোরাল আন্দোলনের নির্দেশ দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি অমর্ত্যের বাসভবনের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার (৩ এপ্রিল) ট্রেনে চড়ে মালদহ যাওয়ার পথে বোলপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা দলীয় নেতাকর্মীকে এ নির্দেশ দেন মমতা।

পাশপাশি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল এড়িয়ে চলার কথাও বলেন।

এদিন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাওড়া থেকে বোলপুর স্টেশনে পৌঁছায় সরাইঘাট এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনে চড়েই মালদহে যান মমতা। দলনেত্রী যাওয়ার খবর পেয়ে আগেভাগেই বোলপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমান তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা। গতবারের মতো এবারও মমতার প্রিয় বীরভূমের মুড়ি এবং আলুর চপ তার হাতে পৌঁছে দেয় স্থানীয় নেতৃত্ব। আগে এ কাজ করতেন বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তবে বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত। তা সত্ত্বেও এদিন দেখা গেল রীতিতে কোনো বদল হয়নি।

ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে জনসংযোগও সারেন মমতা। এরপরই অমর্ত্য সেনের বাসভবন প্রতীচীর সামনে আগামী ৬ ও ৭ মে দিনরাত অবস্থান কর্মসূচির নির্দেশ দেন দলনেত্রী। এ কাজে জেলা তৃণমূল সভাপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলেন মমতা।

গত ১৯ এপ্রিল বিশ্বভারতীর তরফ থেকে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদকে জমি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশে বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে অমর্ত্য সেনকে বাড়ি ছাড়তে হবে। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৬ মে। তা না হলে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বল প্রয়োগ করা হবে। সেই নোটিশ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষকে।

গত ২৬ এপ্রিল তিনি নবান্ন থেকে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ওদের আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ চরম ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। ৬ মের মধ্যে অমর্ত্য সেন জমি না ছাড়লে বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেবে? ওরা যদি অমর্ত্য সেনের বাড়ি ভাঙতে আসে আমি গিয়ে সেখানে বসে থাকব। বুক পেতে দেবো। আমিও দেখবো ওরা কিভাবে উনার বাড়ি ভাঙতে পারে। আমি দেখতে চাই কার শক্তি বেশি, মানুষের নাকি বুলডোজারের।

মূলত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অমর্ত্য সেনের বাবাকে কিছু জমি লিজে দিয়েছিল। সেই সূত্রে অমর্ত্য সেন সেই জমিতে রয়েছেন। কিন্তু, বিতর্ক মূলত ১৩ শতক (ডেসিমেল) জমি নিয়ে। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্য সেন ওই জমি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছেন। তাই আগামী ৬ মের মধ্যে ওই জমি ছেড়ে দিতে হবে।

এদিকে ওই জমি তার পৈত্রিক সম্পত্তি সূত্রে প্রাপ্য বলে দাবি করেছেন অমর্ত্য। জমির কাগজ আছে। যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লন্ডনে থাকলেও এ বিষয়ে অমর্ত্য সেনও আদালতে আইনি নথি জমা দিয়েছেন।

এর আগে, চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতীচীতে গিয়ে পুরো ১ দশমিক ৩৮ একর জমির কাগজ অমর্ত্যের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন। তারপরেও বিশ্বভারতী কিভাবে তাকে ১৩ শতক জমি খালি করার নির্দেশ দিতে পারে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অমর্ত্যের আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে প্রতীচীর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসনের হাতে।  

বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, অমর্ত্যের পিতা প্রয়াত আশুতোষ সেনের নামে ১ দশমিক ৩৮ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১ দশমিক ৩৮ একর জমিই অমর্ত্যের নামে রেকর্ড করানো হয়। তার রেকর্ড পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে রয়েছে। বিশ্বভারতীর দাবি, অমর্ত্যের প্রাপ্য ১ দশমিক ২৫ শতক। বাড়তি ১৩ শতক বেআইনি দখল করে রেখেছেন তিনি।

তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন, বাংলার বুদ্ধিজীবীমহলও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ইতোমধ্যে অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক নিয়ে বিশ্বভারতী আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শতাধিক বিশিষ্টজন। তাতে লেখা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী যেন, অমর্ত্য সেনের অপমানে নীরবতা ভাঙ্গেন। বিশ্বভারতীর উপাচার্য, বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অশোভন আচরণের কারণে অমর্ত্য সেনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। বাঙালিকে কলঙ্কিত করার জন্য আমরা লজ্জিত।

আগামী ৫ মে বাংলার বিশিষ্টজনদের একাংশ প্রতীচীর সামনে প্রতিবাদ করবেন। ফলে এখন দেখার অপেক্ষা আগামী ৬ মে শেষ হলে অমর্ত্য সেনের বিপরীতে কি প্রতিক্রিয়া দেখায় বিশ্বভারতী কতৃপক্ষ এবং বিশ্বভারতী আচার্য অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২৩
ভিএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।