ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভারতীয় মিডিয়া-রাজনীতিবিদদের অপপ্রচারের প্রতিবাদে স্মারকলিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪
ভারতীয় মিডিয়া-রাজনীতিবিদদের অপপ্রচারের প্রতিবাদে স্মারকলিপি ....

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের অপপ্রচার ও অযাচিত মন্তব্য বিষয়ে প্রতিবাদ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী যেকোনো প্রকার হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ।  

সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা উপস্থিত হয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা নাছির উদ্দিন মনির, মাওলানা মীর ইদ্রীস, কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর প্রচার সম্পাদক মাওলানা ইকবাল খলিল, সহ প্রচার সম্পাদক মাওলানা শিবলী নোমানী প্রমুখ।

স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান, যা দুই দেশের রাজনৈতিক সংগ্রাম, কূটনৈতিক সম্মানজনক সহাবস্থান এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দৃঢ় হয়েছে।

এই সম্পর্ক আমাদের দুই জাতির মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আমরা এই সুসম্পর্কের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে ভারতের কিছু চ্যানেল এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। বিশেষত, এ জাতীয় প্রোপাগান্ডায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করে এদেশের সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ভুলভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে।

যার মধ্যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিষয়ক বাস্তবতা:

আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। আমাদের জাতি সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত তথ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হলে তা শুধু দুই দেশের সম্পর্কেই নয়, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিত্র ভারতের সাম্প্রদায়িক চিত্রের চেয়ে বহুগুণে উন্নত, এবং এ বাস্তবতা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ ও তথ্য দ্বারা স্পষ্ট ও প্রমাণিত।

মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদদের অযাচিত আস্ফালন:

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কিছু ভারতীয় রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত ও অসন্তোষজনক মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং স্বকীয়তার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের শামিল। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই ধরনের বক্তব্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে খুবই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমন প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে যা দেখে এটা প্রতীয়মান হয় যে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের একটা ন্যারেটিভ ও পটভূমি তৈরি করতে চাচ্ছে।

বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে বার্তা আমরা ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক সমাজ এবং তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি কোনো ধরনের হুমকি নেই। বাংলাদেশ, ভারতসহ সারা বিশ্বের সকল শান্তিকামী মানুষের জন্য একটি নিরাপদ দেশ। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র দেশের স্বকীয়তা ও ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা। অতএব এই অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

হেফাজত ইসলামের দাবিগুলো হলো:

১. মিডিয়ার মিথ্যা প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ ভারতীয় গণমাধ্যমে যেভাবে বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা বন্ধে ভারত সরকার যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

২. রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা-

ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বক্তব্যে অধিক সংযম ও দায়িত্বশীলতা আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিভ্রান্তমূলক ও অসত্য মন্তব্য যেন অবিলম্বে বন্ধ হয়।

৩. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সকল ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ ও আদর্শিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন নিপীড়নে আপনার সরকারের সমর্থন এবং তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের নানান অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।

৪. দুই দেশের সম্পর্কের মসৃণতা বজায় রাখা-

আমরা সুনিশ্চিতভাবে বলতে চাই, এ ধরনের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি সুসম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে আপনার সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি, যাতে পরবর্তীতে দুই দেশের মসৃণ ও ইতিবাচক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকে।

আমরা ভারতকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি কোনো শত্রুতা বা হুমকি নেই। বাংলাদেশ তার নিজস্ব সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করি, ভারত সরকার এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার বন্ধ করার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আমরা এমন কোনো অপ্রীতিকর বিষয় চাই না যা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের মতো প্রগতিশীল রাষ্ট্রে এই বিষয়ে তার নীতিগত অবস্থান বজায় রাখবে এবং সঠিক পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৪ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।