ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকার টিকে থাকতে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে: সাকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
সরকার টিকে থাকতে দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে: সাকি গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি

ঢাকা: বর্তমান সরকার তার টিকে থাকার ভিত্তি হিসেবে দুর্নীতি ও টাকা পয়সার ভাগ বাটোয়ারাকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে টাকার ভাগ বাটোয়ারা দেয়।

এটি তাদের টিকে থাকার ভিত্তি। একটি দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠান যখন এমন ভাগ-বাটোয়ারার উপরে চলে, তখন এটিকে আর বন্ধ করা যায় না। শেখ হাসিনার সরকার কি চাইলে এটিকে এখন বন্ধ করতে পারবে? কারণ তার টিকে থাকার ভিত্তিতে এটি এসেছে। তিনি সবাইকে এভাবে সুবিধা দিয়ে যে একটি চেইন বা চক্র তৈরি করেছেন, সেটি বন্ধ করে দিলে তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান সরকার আসলেই দুর্নীতি বন্ধ করতে পারবে না।

রোববার (২৫ জুন) 'রাজনৈতিক সংকট, চলমান গণআন্দোলন ও জনপ্রত্যাশা' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট 'গণতন্ত্র মঞ্চ'।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, একটি দল দিনে দুপুরে ভোট ডাকাতি করে বলে, সব দেশেই নির্বাচনে একটু আধটু সমস্যা আছে। সব দেশেই যদি নির্বাচনে একটু আধটু সমস্যা থাকে তাহলে আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে এলেন, আন্দোলন করলেন?

তিনি আরও বলেন, এ সরকার গত ১৪ বছরে ১৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ করেছে। দেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা পাচার করা হয়েছে, সামনে আমাদের যে পরিমাণ ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে এবং আমাদের রিজার্ভের যে অবস্থা, তাতে দেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে তাহলে দেশ দেউলিয়া হওয়া অনিবার্য। এটি ঠেকানোর ক্ষমতা এ সরকারের নেই।

তিনি বলেন, এ সরকার নিজের ভোটারবিহীন দমন-পীড়ন শাসন জায়েজ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, নারীর স্বাধীনতার স্লোগানগুলোকে ব্যবহার করছে। এর পরিণতি দেশের জন্য বিপজ্জনক। এ দেশে যদি সত্যি সত্যি উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের প্রবণতা তৈরি হয়, তার পুরো দায় বর্তমান সরকারের।

গণতন্ত্র মঞ্চের এ নেতা আরও বলেন, একটি সরকার যদি টিকে থাকার জন্য সারক্ষণ মানুষকে ভয় দেখাতে থাকে, এবং বিরোধী মতকে শত্রুতে পরিণত করে, তখন আসলেই জনগণ থেকে সরকার বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। জনগণ থেকে যদি সরকার বিচ্ছিন্ন হয়, তাহলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার যে কাজ সেটি হারিয়ে ফেলে। তখন সে (সরকার) প্রকৃত অর্থে সার্বভৌমত্বের সংকটে পড়ে। কারণ সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে জনগণ। গত দুই দশকে যতগুলো রাষ্ট্র আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেখতে পাই, সবগুলোতেই অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং সংকট যুদ্ধের একটি ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, যারা আজকে দেশকে সত্যি সত্যি একটি সার্বভৌমত্বের সংকটের মধ্যে ফেলছে, তারাই এখন সার্বভৌমত্বের ধোঁয়া তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে, তারা ভাবছে আবার মানুষকে বোকা বানাতে পারবে। কিন্তু ইতিবাচক ব্যাপার হলো, মানুষ তাদের এ ধান্দাবাজিটি ধরে ফেলেছে। যার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আওয়াজ তুলে শেখ হাসিনা আর আগের জায়গা পাচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্টমার্টিন দিয়ে দেওয়ার কথা বলে যে ধোকা তিনি মানুষকে দিতে চাচ্ছেন, সেটি আর মানুষ গ্রহণ করছে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রাষ্ট্রে এমন একটি সরকার আছে, যে দেশের স্বার্থের ভিত্তিতে আর আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করে না। তারা শুধু নিজের গদির স্বার্থের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র নীতি তৈরি করছে৷ গদি যে রক্ষা করা করবে, তার সাথে এদের বন্ধুত্ব, গদি যে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, তার সাথে এদের বন্ধুত্ব নেই৷ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই স্লোগান তোলে নাই। যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থা নিয়ে সিরিয়স প্রশ্ন তুলছে, হয়তো তাদের স্বার্থেই, তখনই যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন নিয়ে নিবে, ওমুক নিয়ে নিবে, তমুক নিয়ে নিবে বলা হচ্ছে। ওনার (শেখ হাসিনার) জাতীয়তাবাদের ধ্বজা সম্পূর্ণভাবে মানুষকে ধোকা দেওয়ার এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য করা হচ্ছে এটি পরিষ্কার। এমন ফায়দা হাসিলের বিষয় সামনে আরো আসবে হয়তো।

গণসংহতি আন্দোলনের এ নেতা বলেন, আমরা একটি ভয়ংকর শাসনের মধ্যে আছি। যেখানে আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। তাই আমাদের বাঁচার একটিই পথ এ রাষ্ট্রকে জনবিচ্ছিন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনা। এ সংকটে যেসব রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে এ প্রবল ভয়ংকর শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তার মধ্যে কোন কোন শক্তির ভারসাম্য আছে, কি ধরনের স্বার্থ উদ্ধারকারী শক্তি আছে, সে হিসেবটি করে আজকের দিনের রাজনীতির কথা বলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা জনগণের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেন, বিশেষ করে বামপন্থিদের স্পষ্ট করতে হবে, তারা এ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছেন, কি নেই। দেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে এখন ন্যূনতম অবস্থান নেওয়া মানে হচ্ছে যারা অস্তিত্বের সংকটে ফেলছে তাদের আগে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা এবং ন্যূনতম জায়গাতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। আমরা যদি ন্যূনতম কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, গণআন্দোলন হবে না। জণগণকে এখন রাজপথে নামতে হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।