ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

লঞ্চে আগুন

তিন ঘণ্টা সাঁতরে জীবন বাঁচান শিক্ষক সঞ্জিব চন্দ্র

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
তিন ঘণ্টা সাঁতরে জীবন বাঁচান শিক্ষক সঞ্জিব চন্দ্র সঞ্জিব চন্দ্র হাওলাদার

বরগুনা: সুগন্ধা নদীতে গত বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোরে এমভি অভিযান -১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় তিন ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচান স্কুলশিক্ষক সঞ্জিব চন্দ্র হাওলাদার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পাথরঘাটা রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই সহকারী শিক্ষক।

গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বরগুনা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে লিখিত বর্ণনা নেওয়ার সময় শিক্ষক সঞ্জিব চন্দ্র জানান,  সে রাতে লঞ্চের বারান্দায় বসা ছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন সারা লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচতে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে পরনে থাকা কাপড় খুলে ফেলে দিয়ে কোনো রকম সাঁতার কাটতে থাকেন।

সে সময় পাশ দিয়ে একটি ট্রলার যেতে দেখে আর্ত-চিৎকার করে বাঁচানোর আকুতি জানালেও তারা সাহায্য না করে চলে যায়। এরপর একটি নৌকা যেতে দেখে আবার বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলে তারা তীর দেখিয়ে বলে পাড় ওদিকে খুব কাছে, তারপরও তারা আমাকে নৌকায় তোলেনি। এরপর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে নদীতে ভাঁসতে থাকেন। ভাঁসতে ভাঁসতে এক সময় তীরের দেখা পান। স্থানীয়রা তাকে রাস্তার ওপর নিয়ে যখন শুইয়ে দেয় এবং আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ দিচ্ছিল, তখনও তার জ্ঞান ছিল। তারা বলছিল যে তখন সময় ভোর সোয়া ৫টা।

সঞ্জিব চন্দ্র বলেন, আগুনের তীব্রতা দেখে আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম পুড়ে মরার চেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার। সে সময় শুধু সৃষ্টি কর্তাকে মনে পড়ছিল, পৃথিবীর আর কিছু তখন স্মরণে ছিল না।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ওই লঞ্চে আমি উঠতে চাইনি। খেয়া পার হয়ে আমি লঞ্চে উঠতে গেলে মাঝি আমাকে ওই লঞ্চে ওঠান। মাঝি বলেছিলেন এই লঞ্চটি বড়, ভালো লঞ্চ। সদরঘাট ছাড়ার পর লঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম আমার কাছে ভালো লাগেনি। রাত যখন তিনটা তখন লঞ্চটিতে আগুন লাগে। প্রায় তিন ঘণ্টা নদীতে সাঁতার কাটার পর তীরে পৌঁছাই।

তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিন রুম থেকে অগ্নিকাণ্ডে ঘটে বলে মনে হয়।

গত বৃহস্পতিবারের অভিযান-১০ লঞ্চের ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন এলাকার ৩৭ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় মিলছে। তাদের চারজনের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলায়। তারা হলেন- আবদুর রাজ্জাক (৫৫), মাঈয়েদা আক্তার (১৫), মো. রাকিব (১৩) এবং শিশু তাবাচ্ছুম (আড়াই বছর)। তাদের পরিবারিক কবরে দাফন করা হয়েছে। বাকি ২৩ জনের মরদেহ বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী গ্রামের সরকারি গণকবরে দাফন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ২৬ ডিসেম্বর বরগুনা চিফ জুডিশিয়াল আদালতে অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখসহ ২০-২৫ জনকে আসামি করে নাজমুল ইসলাম নাসির জনস্বার্থে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি সদর থানায় লঞ্চের মালিক, চালকসহ আটজনের নামে ও অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে ৩০৪ ধারায় মনির হোসেন এক জন মামলা দায়ের করেছেন। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলাম ও ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান এ তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন

এছাড়াও মেরিন আদালতে বিআইডব্লিউটিএ'র এক কর্মকর্তা মামলার পরে লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখসহ আটজনের নামে গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকার নৌ আদালতের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) জয়নাব বেগম গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৬ জন নিখোঁজ যাত্রীর দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অতিরিক্ত আইজিপির (সিআইডি) নির্দেশে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির অ্যাসিস্ট্যান্ট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট তাজুল ইসলাম এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।