ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফিরে দেখা-২০১৫

কথা, কর্মে বিব্রত করেন যারা

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
কথা, কর্মে বিব্রত করেন যারা

ঢাকা: কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরো একটি বছর। বিদায়ী বছরে নিজ কর্মে কেউ হয়েছেন প্রশংসিত, কেউবা সমালোচিত।

বছরটি হারিয়ে গেলেও কিছু কিছু কথা কর্মে অনেকেই রয়ে গেছেন মানুষের মনে। রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ কথা-কর্মে শুধু নিজেই সমালোচিত হননি, বিব্রত করেছেন সরকার ও দলকে।
 
এরশাদের ‘শো-পিস’ কাণ্ডে মাথা নিচু রওশনের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদের কথায় মাথা নিচু হয় তার স্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের। চলতি অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ২৯ জুন বক্তৃতা করতে গিয়ে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি পড়লেন মহা ঝামেলায়।
 
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সংসদে বলে ফেললেন ‘নারীরা শো-পিস’। এ কথা বলা মাত্রই সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত নারী সংসদ সদস্যরা স্বাভাবিকভাবেই হই-চই করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় এরশাদের পাশের সিটেই বসে ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। তাকেও দেখা যায় মাথা নিচু করে বসে থাকতে।
 
তখন সংসদ পরিচালনায় ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। নারী সদস্যদের প্রতিবাদের মুখে একটু পরেই রওশন এরশাদ স্বামীর হয়ে সংসদে সকল নারী সদস্যদের কাছে ক্ষমা চান ও দু:খ প্রকাশ করেন।
 
তাতেও বিপত্তি সাধেন এরশাদ। এরপর দিন সংসদে এসে স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর নিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমি এই সংসদে নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে একটি কথা বলেছিলাম, যা মাননীয় স্পিকার আপনি এক্সপান্স (বাতিল) করেছিলেন। সে কথা পত্রিকায়ও এসেছে’।
 
এরশাদ বলেন, ‘কথাটি বলার পর সংসদে অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমি আসলে তাদের খাটো করতে এ কথা বলি নাই। আমি বলতে চেয়েছিলাম, নারীদের এতো ক্ষমতায়নের কথা বলি। তারপরেও নারী ও শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাই আমি বলেছিলাম নারীরা শো-পিস’।
 
‘কিন্তু আমার সে কথার জন্য (রওশনকে উদ্দেশ্য করে) একজন এই সংসদে দু:খ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন। আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আমি কাউকে দেইনি। উনি ক্ষমা চাইবেন কেন?’

এ সময় অনেক সংসদ সদস্যই তার কথায় হেসে ওঠেন।
 
অর্থমন্ত্রীর পাঁচ টাকার কয়েন কাণ্ড
বরাবরেরমতো আবারো বেসামাল কথা বলে আলোচিত হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে ১৫ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ কয়েন সংশোধন বিল-২০১৫’ পাস করার আগে কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিলে সংশোধনী প্রস্তাবের জবাব দিচ্ছিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাজারে যে পাঁচ টাকার কয়েন আছে, সেটা আমি জানতাম না, আজই প্রথম দেখলাম। সেই কয়েনে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগোও আছে। মন্ত্রী বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক করতে পারে না। এই পাঁচ টাকা ইললিগ্যাল।

এ বক্তব্য নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি অর্থমন্ত্রীর। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংক কবে কিভাবে পাঁচ টাকার কয়েন বাজারে ছাড়লো, সেটা জানা নেই তার।
 
কামরুলের পঁচা গমকাণ্ড
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামও কম বেকায়দায় ফেলেনি সরকারের। ব্রাজিল থেকে গম আমদানি করে সেই গম নিয়ে চারদিকে সমালোচিত হন কামরুল ইসলাম। পঁচা গম নিয়ে সংসদেও এমপিদের করা সমালোচনা সইতে হয় মন্ত্রী ও সরকারের।

এ নিয়ে হাইকোর্টে পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়েছে খাদ্যেমন্ত্রীকে। পত্রিকায় তাকে নিয়ে একটি কার্টুন বের হয়। সেখানে দেখা যায়, কামরুল ইসলামের টাক মাথার ওপর কাকে বসে গম কাচ্ছে।

এ নিয়ে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গম দেখতে খারাপ হলেও খাওয়ার উপযোগী’।
 
উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের কাণ্ড
যুব ও ক্রীড়া দিবস উপলক্ষে নিজ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যানারে নিজের নাম না থাকায় বেজায় খেপেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

বিদায়ী বছরের ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নাম ব্যানারে থাকলেও ছিল না জয়ের নাম। এতেই রেগে গেলেন আরিফ খান জয়। অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে সোজা চলে যান মন্ত্রণালয়ে। সেখানে গিয়ে যুগ্ম সচিবের কক্ষে ভাংচুর করেন তিনি। এতে আলোচনায় আসেন সাবেক ফুটবলার বর্তমান উপমন্ত্রী জয়।
 
এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সংসদে আরেক কাণ্ড ঘটান উপমন্ত্রী। সংসদে ৩০০ বিধিতে বক্তৃতা করতে গিয়ে সংবিধান সংশোধন নিয়ে কথা বলা শুরু করেন তিনি। তখন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া উপমন্ত্রীকে বলেন, ‘এ বিষয়ে ৩০০ বিধি হয় না’।
 
পরে উপমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে আমি আমার এলাকার সমস্যার কথা বলি’। ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘৩০০ বিধিতে এলাকার কথা বলা যায় না মাননীয় উপমন্ত্রী’। পরে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি মনে হয় প্রস্তুত না। প্রস্তুতি নিয়ে কাল কথা বলবেন’।
 
এ সময় তার কয়েক সারি সামনে বসা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই কিছু লিখে আনছো। না আনলে বস, তোমার বলতে হবে না। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী নিজ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে মন্ত্রী ৩০০ বিধিতে একটি বিবৃতি দিয়ে জাতিকে অবহিত করতে পারেন’।
 
এমপিপুত্রের ফিল্মি স্টাইলে হত্যাকাণ্ড
এর আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য-২৩ পিনু খান। নিজের কোনো কর্মে অবশ্য না। পুত্র বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে ১৩ এপ্রিল রাজধানীর ইস্কাটনে রিকশাচালক আবদুল হাকিম ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারা দু’জনেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ডিবি পুলিশ বখতিয়ার আলম ও গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গত ৩১ মে গ্রেফতার করে।

এতে সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেন পিনু খান।
 
এমপি লিটনের গুলিতে শিশু আহত
সরকার দলীয় আরেক সংসদ সদস্য গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ২ অক্টোবর ভোরে শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভের দুই পায়ে গুলি করে চারদিকে আলোচনার ঝড় তোলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।