ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছাত্র আন্দোলনে নিহত সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
ছাত্র আন্দোলনে নিহত সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

শেরপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার শহীদ সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) এইচএসসির প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে সবুজ জিপিএ-৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

শহীদ সবুজের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্যের খবরে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে আনন্দের পরিবর্তে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শহীদ সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের রুপারপাড়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে।

গত ৪ আগস্ট শেরপুর জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে শহীদ হন সবুজ মিয়া।  

শহীদ সবুজের মা শমেজা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আজ বেঁচে থাকলে রেজাল্টটা নিয়ে আমার কাছে আসতো সবার আগে। সবাইকে খুশিতে মিষ্টি খাওয়াতো। আজ আমার ছেলে না থাকায় সবকিছু অন্ধকার। ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ঘুম নেই। সারাক্ষণ টেনশনে মাথা ব্যথা করে।

শহীদ সবুজ আমাদের গোবরে পদ্ম ফুল ছিল, এলাকার সবার সঙ্গে ও খুব ভালো ব্যবহার করতো। প্রতিদিন কবিতা লিখেও আমাকে শোনাতো। এখন আর কেউ আমাকে কবিতা শোনায় না। আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল, ওর কবি হওয়ার ইচ্ছা ছিল। আমার ছেলেকে যারা গুলি করে মারছে আমি তাদের বিচার চাই।

সবুজের মা রেজাল্টের কার্ড নিয়ে ঘুরছেন। এদিকে সবুজের অসুস্থ বাবা সবুজের অপেক্ষায় বাড়ির সামনে পথ চেয়ে বসে আছেন।

সবুজের সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা একসঙ্গে আন্দোলনে যাই আমাদের গ্রাম থেকে। সবুজ দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে মারা যান। আজ ওর রেজাল্ট হয়েছে কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই—এটা আমার জন্য খুবই কষ্টের। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে সবাইকে নিয়ে আনন্দ করতো। আমরা আমাদের গ্রামের একজন মেধাবী ভাই হারিয়েছি। খুব খারাপ লাগছে, এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে সবুজ মারা গেছেন। আমরা সবুজের হত্যাকারীদের বিচার চাই, খুব দ্রুত যেন সবুজ হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম আলিফ উল্লাহ আহসান বলেন, সবুজ অনেক ভালো ছেলে ছিল, আমাদের সঙ্গে সবসময় ওর যোগাযোগ ছিল। সবুজ খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবা অসুস্থ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সবুজ। এলাকার একটি ফার্মেসিতে ছোট থেকেই কাজ করে পরিবার চালাতেন। ছাত্র আন্দোলনে সবুজ মারা যাওয়াতে পরিবারে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে সবুজের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সবুজ আমাদের গর্ব। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে, কিন্তু সবুজ বেঁচে নেই। সবুজের এ মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে রেজাল্ট দেখে তার পরিবার অনেক খুশি হতো।

শেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সবুজ মিয়া হত্যায় মামলা হয়েছে, এ মামলার তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।