ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভোলায় ঝিনুকে মুক্তা চাষে সফলতার হাতছানি

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
ভোলায় ঝিনুকে মুক্তা চাষে সফলতার হাতছানি

ভোলা: ভোলায় প্রথমবারের মতো ঝিনুকে মুক্তা চাষ করা হয়েছে স্থানীয় পুকুরে। বিষয়টি রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে এমন চাষাবাদে সফলতা পাচ্ছেন জিহাদ ও জাহিদ নামে দুই যুবক।

ইউটিউব দেখে তারা প্রাকৃতিক উপায়ে এ চাষাবাদ শুরু করেন। যা দেখতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন এলাকাবাসি।

অল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমের এ চাষাবাদ অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর তাই অনেকেই মুক্তা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই পদ্ধতির আরও প্রসার ঘটাতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।

জানা গেছে, জাহিদ ও জিহাদ নামে দুই চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া গ্রামে। তারা প্রথমে ইউটিউব দেখে ঝিনুকে মুক্তা চাষের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর তাদের মধ্যেও এটি করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাদের এই প্রবল ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতে নাটোর থেকে  ঝিনুক সংগ্রহ করে নিজের ২৪ শতাংশের একটি পুকুরে শুরু করেন মুক্তা চাষ।

প্রথমে তাদের পুঁজি ছিল ৬৫ হাজার টাকা। ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে শুরু করা তাদের এ মুক্তা চাষ এখন সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। স্বপ্ন দেখছেন লাখ লাখ টাকা উপার্জনের।

মুক্তা চাষি মো. জিহাদ হাসান বলেন, ইউটিউবে মুক্তা চাষ দেখে আমরা এটি করার উদ্যোগ নেই। তারপর নিজেদের পুকুরের মাটি ও পানি পরীক্ষা করে প্রথমে এক হাজার ঝিনুক কিনে মুক্তা চাষ শুরু করি। এতে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি তা থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হবে। আমাদের দেখে অনেকেই এটি চাষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

তিনি জানান, জীবন্ত ঝিনুকে প্রতিস্থাপন করা হয় প্লাস্টিকের নিউক্লিয়াস বা ইমেজ মুক্তা। এরপর তা ঝুড়িতে রেখে পানির নিদিষ্ট গভীরতায় রাখা হয়। নিদিষ্ট সময়ে পরিচর্যার পর ঝিনুকের ভেতর লেয়ার সৃষ্টি হয়ে তা চকচকে মুক্তায় পরিণত হয়। এ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৯ থেকে ১২ মাস।

এছাড়া ১৫ দিন পর পর ঝিনুকের প্রাকৃতিক খাবার প্রস্তুত করতে পুকুরে ইউরিয়া, পটাস, ড্যাব ও খৈল ছিটিয়ে দিতে হয়। আর পানি পরীক্ষা ও মাটি পরীক্ষা করতে হয় নিয়মিত। এমন পরিচর্যা আর নিবীড় পর্যবেক্ষণ ছাড়া মুক্তা চাষে বাড়তি কোনো শ্রমিক মজুরি নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে জাহিদ-জিহাদের মুক্তা চাষ পদ্ধতি এক নজর দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকাবাসীর। তাদের এমন সফলতা দেখে এখন অনেকেই ঝিনুকে মুক্তা চাষ করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় যুবক নোমান, রহমান, নুরুন্নবী বলেন, আমরা কখনও মুক্তা চাষ দেখেনি। এটি চাষে জাহিদ-জিহাদের সফলতা দেখে আমাদেরও এমনটা করার ইচ্ছে আছে।

মেদুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনজুর আলম বলেন, ভবিষ্যতে জাহিদ ও জিহাদের মতো মুক্তা চাষের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি। তাদের সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজ হাসনাইন বলেন, এমন চাষাবাদের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মুক্তা চাষের প্রসার ঘটাতে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত। আমি মনে করি দিন দিন মুক্তা চাষির সংখ্যাও বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।