ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জুমার দিনের জানা-অজানা আমল

মো. বাকী বিল্লাহ খান পলাশ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
জুমার দিনের জানা-অজানা আমল ছবি: প্রতীকী

শুক্রবার মুসলমানদের জন্য বরকতময় একটি দিন। দিনটিকে মহান আল্লাহ তাআলা ইহুদি ও নাছারাদের ওপর ফরজ করেছিলেন।

কিন্তু তারা মতবিরোধ করে দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইহুদিরা শনিবার এবং খ্রিস্টানরা রোববারকে তাদের ইবাদতের দিন বানায়। অবশেষে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এক মহান ও ফজিলতের দিন হিসেবে শুক্রবার দিনটিকে দান করেন। যা উম্মতে মুহাম্মদি সাদরে গ্রহণ করে (বুখারী, হাদিস নং: ৮৭৬, মুসলিম, হাদিস নং: ৮৫৫)। অথচ কিছু অজ্ঞতা এবং অতি ধর্মীয় কিছু অনুভূতি থেকে আমরা এ দিনে এমন কিছু আমল করি বা দিনটিকে নিয়ে আমরা এমন কিছু ভাবি যার সমর্থনে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে কোনো দলিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন কিছু বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

ক. শুক্রবারে কবর জিয়ারত করা:
কবর জিয়ারত করা সুন্নত। রাসূল (সা.) এ ব্যাপারে আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, বুরাইদা আসলামী মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমাকে আমার মাতার কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের মৃতদের কবর জিয়ারত কর। কেননা, তা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ১০৭)।

সাধারণত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা গোরস্থানে কবর জিয়ারত করতে যান এবং সেখানে যথেষ্ট ভিড় সৃষ্টি করেন দেখা যায়। এ থেকে প্রশ্ন এসে যায়, শুক্রবারে কবর জিয়ারত করা কি আবশ্যক এবং অধিক সোওয়াবের কাজ। এ সম্পর্কে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শুক্রবার জুমার সালাতের পর অবসর রয়েছে। সুতরাং এ সময় কোনো ব্যক্তি কখনও কখনও কবর জিয়ারত করতে পারেন। কিন্তু এটাকে শুক্রবারের অবশ্য করণীয় কাজ বা এটাকে সুন্নত বানিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। কেননা কোরআন এবং হাদিসে কবর জিয়ারতের জন্য শুক্রবারকে নির্ধারণ করা বা শুক্রবারের নির্দেশিত আমলগুলোর মধ্যে এ কথা কোথাও উল্লেখ নেই।

এছাড়া শুধু শুক্রবার কবর জিয়ারত করা সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উক্ত হাদিসের সনদে মুহাম্মদ ইবনু নু’মান নামের যে রাবী রয়েছেন, তিনি অপরিচিত এবং ইয়াহইয়া নামের রাবী মিথ্যুক (সিলসিলা যঈফাহ, হাদিস নং: ৫৬০৫, মিশকাত, হাদিস নং: ১৬৭৬)।

খ. শুক্রবারে নফল রোজা রাখা:
শুক্রবার হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১০৯৮)। নফল রোজা রাখার জন্য শুক্রবারকে নির্ধারণ বা নিদিষ্ট করে নেওয়া নিষেধ। তবে কেউ যদি বৃহস্পতি এবং শুক্রবার অথবা শুক্র ও শনিবার রোজা রাখেন অথবা আইয়ামুল বিজের অর্থাৎ প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে যদি রোজা পালন করেন, আর সেটা করতে গিয়ে যদি শুক্রবারে পড়ে যায়, তবে তা জায়েজ। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ জুমার আগে বা পরে একদিন মেলানো ব্যতিত শুধু জুমার দিন রোজা রেখো না (সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ১৮৮৪, মুসলিম, হাদিস নং: ২৫৪৫)।

গ. শুক্রবারে মৃত্যু হলে জান্নাত:
অনেকেই এ কথা বলে থাকেন যে, শুক্রবারে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় সুতরাং এ দিন কেউ মৃত্যুবরণ করলেই বিনা হিসেবে জান্নাতে চলে যাবেন। কিন্তু এ মর্মে কোনো দলিল কোরআন বা হাদিস কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যেকোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন (তিরমিজী, হাদিস নং: ১০৯৫, মিশকাত, হাদিস নং:১৩৬৭)। উপর্যুক্ত হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলারগণ বলে থাকেন যে, শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করলে বিনা হিসেবে জান্নাত বা কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব মাফ এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে মুল্লা আলী কারী (রহ.) তার ‘মিনাহুর রওদিল আযহার ফি শরহে ফিকহুল আকবার’ (পৃষ্ঠা: ২৯৫-২৯৬) এ বলেন, জুমার দিনে বা রাতে যে মারা যাবে, তার থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে এটা মোটামুটি প্রমাণিত। তবে কিয়ামত পর্যন্ত আজাব আর ফিরে আসবে না এ কথার কোনো ভিত্তি আমার জানা নেই। ’

ঘ. জুমার পরে জোহরের সালাত:
অনেকেই এ কথা বলে থাকেন যে, বাড়িতে মহিলাদের জোহরের সালাত জুমার পরে পড়তে হবে। কিন্তু এনটিভিতে প্রচারিত আপনার জিজ্ঞাসা প্রশ্নোত্তর পর্বে ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, যেহেতু মহিলাদের জন্য জুমার সালাত ওয়াজিব নয় সুতরাং ওয়াক্ত হলেই তারা বাড়িতে জোহরের সালাত আদায় করতে পারবেন। এর জন্য তাদের জুমার খুতবা বা সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে মহিলাদের জোহরের সালাত জুমার পর পড়তে হবে মর্মে কোনো দলিল কোরআন বা হাদিসে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেকটি আমল জেনে-বুঝে করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সহায়ক গ্রন্থ ও উৎস:
১.    প্রশ্নোত্তরে জুমা ও খুতবা- অধ্যাপক মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম।
২.    জিজ্ঞাসা ও জওয়াব, মাসিক আল-ইখলাছ, ডিসেম্বর ২০১৯ সংখ্যা।
৩.    শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করলে কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আজাব কি বন্ধ থাকে?- আল মাজলিসুল ইলমী।
৪.    আপনি জানেন কি ঈদের দিন বা জুমার দিন কবর জিয়ারত করা সুন্নত না বেদাত- শায়খ আহমাদুল্লাহ।
৫.    মহিলারা শুক্রবারে জোহরের নামাজ কখন পড়বেন- ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।