ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মহারাষ্ট্রজুড়ে দলিতদের বনধ, সর্বত্র ভাঙচুর-নৈরাজ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
মহারাষ্ট্রজুড়ে দলিতদের বনধ, সর্বত্র ভাঙচুর-নৈরাজ্য দলিত সম্প্রদায়ের ডাকা বনধ চলাকালে বুধবার মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের সর্বত্র অসংখ্য বাস ভাঙচুরের শিকার হয়। মুম্বাইয়ে ভাঙচুরের শিকার এরকমই একটি বাস

দলিত সম্প্রদায়ের ডাকা বনধ-এর কারণে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও নৈরাজ্য চলছে। রাজ্যের সর্বত্র সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি চলছে অগ্নিসংযোগও।

 

বনধ আহবানকারী দলিত দলগুলোর মারমুখী বিক্ষোভের মুখে ট্রেন-বাসের যাত্রা বিঘ্নিত এবং বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক স্থানে যাত্রীবাহী যান চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে।

বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ দৃশ্যত ছাত্র-শিক্ষকশূন্য। অনেক স্থানে বিমানের ফ্লাইট বিলিম্বিত হয়েছে। মুম্বাইসহ রাজ্যে বিভিন্ন শহরে চলছে ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে সোমবার থেকে চলা সংঘাতের তৃতীয় দিন বুধবার দলিত নেতা প্রকাশ আম্বেদকার রাজ্যজুড়ে এই বনধ-এর ডাক দেন। প্রকাশ আম্বেদকার ভারতীয় সংবিধানের প্রধান প্রণেতা, দলিত আইকন প্রফেসর ভীমরাও আম্বেদকারের দৌহিত্র। রাজ্যজুড়ে অন্তত ২৫০টি দলিত গ্রুপ এই বনধ-এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

দলিত সম্প্রদায়ের একটি দিবস পালন করা নিয়ে সোমবার মুম্বাইতে বিজেপিপন্থী উচ্চবর্ণের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে দলিত যুবকদের কথা কাটাকাটি হয়। এ থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে ২৮ বছর বয়সী উচ্চবর্ণের (মারাঠা) একজন মারাঠি যুবক প্রাণ হারায়। সংঘর্ষ ক্রমশ পুরো রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এই পরিস্থিতিকে ‘দাঙ্গা’ (রায়ট) বলে অভিহিত করছে।  

পুলিশ জানায়, দলিতরা রাজ্যের সব জায়গায় ট্রেন, বাস ও যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। তারা নির্বিচার গাড়ি ভাঙচুর করছে। বুধবার বনধ-এর দিন তারা কেবল ‘বেস্ট’ সার্ভিসেরই ১৩টি বাসে ভাঙচুর চালিয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে তারা কম করেও আড়াইশর বেশি বাসে ভাঙচুর চালায়।

স্কুল, কলেজ খোলা থাকলেও সহিংসতার শিকার হওয়ার ভয়ে ও যানবাহনের কমতির কারণে ছাত্র শিক্ষকদের উপস্থিতি খুবই কম।

মুম্বাই ছাড়াও নাগপুর, পুনে, বড়মাটি, কোলাপুর, পারভানি, লাতুর, আহমেদনগর, আওরঙ্গাবাদ, হিংগোলি ও থানেসহ বহু স্থানে প্রায় একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে। এসব স্থানে সংঘর্ষ সহিংসতার পাশাপাশি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক স্থানে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মুম্বাইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ২১শ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মুম্বাইয়ে সব ধরনের সভা ও জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব আগের দিন সহিংসতার অভিযোগে অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এদের বেশিরভাগই দলিত সম্প্রদায়ের।  

রাজ্যের প্রায় সর্বত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত। মুম্বাইয়ে অফিস-আদালত-দোকানপাটে খাবার সরবরাহকারী বিখ্যাত ‘ডাব্বাওয়ালা’রাও বনধ-এর কারণে তাদের নিত্যদিনের খাবার সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এর কারণ যানবাহনের অভাব।
সবচে বড় অচলাবস্থা বিরাজ করছে বড়মাটি, সিংলি ও মিরাজ শহরে। সেখানে সবকিছু কার্যত বন্ধ।

এই অবস্থার জন্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্র ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও এর আদর্শিক গুরু আরএসএসকে দায়ী করেছেন। এক টুইট বার্তায় রাহুল বলেন, ‘দলিত সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে ভারতীয় সমাজের একেবারে তলানিতে থাকতে হবে, বিজেপি/আরএসএস’র এহেন উগ্র ফ্যাসিস্ট মনোভাবই এইসব নষ্টের মূলে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনাভিসকে ফোন করে পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজ নেন।

মুখ্যমন্ত্রী ফাদনাভিস শান্তি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে কোনোরূপ গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।