ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত অর্ধ শতাধিক।



বুধবার (২০ জানুয়ারি) খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চারসাদ্দা শহরে অবস্থিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে। নিহতদের মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষকও রয়েছেন। তার নাম ড. সৈয়দ হামিদ হোসেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে চার সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তান আর্মির বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়েছে। পুলিশ ও এসএসজি’র পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে কাজ করছে।

আঞ্চলিক পুলিশের প্রধান ডিআইজি সাঈদ ওয়াজির জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাস এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দুই ঘণ্টা ধরে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি একতলা বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাড়িটিতে তিন হামলাকারী লুকিয়ে আছে।

এ হামলায় অন্তত ১০ জন বন্দুকধারী অংশ নেয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ভারী কুয়াশার সুযোগে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তখন তিন হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জমায়েত হয়েছিলেন ছয়শ অতিথি।

হামলার খবর শুনেই শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে জড়ো হতে শুরু করেন। অভিযান পরিচালনার সুবিধার্থে সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের ঘটনাস্থল থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে কাজ করছে বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।

নিহত ২১
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সংসদ সদস্য ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শওকত ইউসুফজাই।

ডিআইজি সাঈদ ওয়াজিরও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

তবে সেনাবাহিনীর দাবি করা চার জঙ্গি নিহত হওয়ার খবরটি তিনি নিশ্চিত করেননি।

তিনি বলেন, অভিযান শেষ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এখন এলাকা পরিষ্কার করছেন। ক্যাম্পাসে ছেলেদের হোস্টেলেই হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

উদ্ধারকারী দলের একটি সূত্র স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ এলাকা এখন নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। প্রায় সব শিক্ষার্থীকেই উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ১: হামলাকারীরা দেখতে আমাদের মতোই ছিল
স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় উদ্ধার হওয়া এক শিক্ষার্থী বলেছেন, বন্দুকধারীরা যুবক বয়সী। দেখতে আমাদের মতোই। তাদের হাতে একে-৪৭ বন্দুক ছিল। তাদের পরনে জ্যাকেট ছিল যেমনটা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের থাকে। ক্লাস না থাকায় ঘটনার সময় আমরা হোস্টেলে ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, হামলাকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় চলছিল। সবকিছু থেমে যাওয়ার পর সেনা সদস্যরা আমাদের দরজায় কড়া নেড়ে জানান, আমরা নিরাপদ।

প্রত্যক্ষদর্শী ২: আমি দু’জনকে গুলি করতে দেখেছি
ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী জাহুর আহমেদ জানিয়েছেন, গুলির শব্দ শোনামাত্র তিনি হোস্টেল ত্যাগের চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগের এক প্রভাষক আমাদের হোস্টেল ত্যাগ করতে মানা করেন। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের রুমেই থাকতে বলেন তিনি। তার হাতে পিস্তল ছিল। তিনি আমাদের মানা করতে না করতেই একটা বুলেট এসে লাগে তার গায়ে। দু’জন জঙ্গিকে গুলি করতে দেখলাম। আমি দৌড়ে ভেতরে চলে গেলাম। পরে হোস্টেলের পেছনের দেয়াল টপকে কোনোরকমে বেঁচে গেছি আমি।

প্রত্যক্ষদর্শী ৩: পজিশন নিয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পালানোর সময় আমি দেখলাম তিন হামলাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গুলি বিনিময় করছে। একজন ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছে, দ্বিতীয় জন কোণার দিকে আর তৃতীয় জন দেয়ালের কাছে।

ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীরা ক্যাম্পাস ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থান নিয়েছিল।

ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক শাবির খান বলেছেন, গুলি যখন শুরু হলো, তখন বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিলেন। প্রথমে আমি বুঝতেই পারছিলাম না, কি ঘটছে। পরে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের মাধ্যমে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হই।

হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় স্থানীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্ধ শতাধিক মানুষ এ হামলায় আহত হয়েছেন।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা কোনো বিশ্বাস বা ধর্মের লোক হতে পারে না। দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করেই ছাড়বো আমরা।

বর্তমানে নওয়াজ শরীফ সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থান করছেন। বিশ্ব ইকোনমিক ফোরামে যোগ দিতে তিনি সেখানে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
আরএইচ

** পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫
** পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় নিহত ৪
** পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর হামলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।