ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ঐতিহাসিক নটর-ডেম ক্যাথেড্রালটি সংস্কারের পর খুলে দেওয়া হলো। পাঁচ বছর আগে ওই ক্যাথেড্রালে আগুন লাগে।
শনিবারের অনুষ্ঠানের পর রোববার থেকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে দ্বাদশ শতকে নির্মিত নটর ডেম ক্যাথেড্রাল। অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত ২৯ নভেম্বর তার স্ত্রীকে নিয়ে ক্যাথেড্রাল পরিদর্শনে যান। প্রেসিডেন্ট সংস্কারকাজে নিযুক্ত কয়েক হাজার কর্মীকে ধন্যবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট বলেন, নটর ডেমের অগ্নিকাণ্ড জাতির জন্য একটি আঘাত ছিল, ... এবং আপনারা-ই এর সংস্কারে ছিলেন।
২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় ক্যাথেড্রালের ছাদে আগুন লাগে। আগুনের লেলিহান শিখা আকাশে উঠে যায়, এবং ঘন ধোঁয়া চারদিক আচ্ছন্ন করে ফেলে। ১৫ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে চারশরো বেশি দমকলকর্মী প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে কর্তৃপক্ষের ধারণা, এটি বৈদ্যুতিক ত্রুটি কিংবা সিগারেটের কারণে ঘটতে পারে। জনসাধারণের কেউ আহত হননি, কারণ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আগেই সতর্কতা জারি করে ক্যাথেড্রালটি খালি করে দেন। তবে, তিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হন।
পরদিন আগুন নিভে যাওয়ার আগেই ক্যাথেড্রালের ভেতরের অংশ এবং ছাদের বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ধাতব ও কাঠের চূড়া ধসে পড়ে। আগুনে ধর্মীয় পুরোনো কিছু নিদর্শন এবং বাইরের শিল্পকর্ম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে পাথরের ছাদ আগুনের বিরুদ্ধে একটি বাধা হিসেবে কাজ করে এবং ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে দেয়। ক্যাথেড্রালের কাঠের কাঠামো ছিল শতাব্দীপ্রাচীন ছিল। ক্যাথেড্রালের আগুন ফ্রান্সের জন্য বেশ বেদনাদায়ক সময় ছিল।
২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল এক আবেগঘন ভাষণে ম্যাক্রোঁ প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি পাঁচ বছরের মধ্যে ঐতিহাসিক এই স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার করবেন এবং এটিকে আগের চেয়েও সুন্দর করে তুলবেন। সে বছর নটর ডেমে বড়দিনের প্রার্থনাসভা হয়নি। ১৮০৩ সালের পর সেবারই প্রথম সেখানে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি।
ধনী ব্যবসায়ীসহ শতশত দাতা নটর ডেম ক্যাথেড্রালের সংস্কার প্রচেষ্টায় ৮৪০ মিলিয়ন ইউরোর (৮৮৯ মিলিয়ন ডলার) বেশি দান করেন। শুরুটা করেছিলেন ম্যাক্রোঁ নিজেই। পাশাপাশি ১৫০টিরও বেশি দেশ এতে সাহায্য করে। সংস্কার কাজের জন্য প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি কাজ করেন, যার মধ্যে কারিগর, স্থপতিসহ অন্য পেশাদাররাও অন্তর্ভুক্ত।
নির্মাণকর্মীরা ক্যাথেড্রালের নিচের পাথরের দেয়াল থেকে ঘন দাগ, ধুলো এবং বছরের পর বছর জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে শক্তিশালী ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও ক্লিনিং জেল ব্যবহার করেন। কাঠমিস্ত্রিরা হাতে বড় আকারের ওক কাঠের দণ্ড কেটে ছাদ ও চূড়ার জটিল কাঠামো নির্মাণ করেন। ছাদটি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রায় দুই হাজার ওক গাছ কাটা হয়।
কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, এবং ভবনের বাইরের অংশে আরও কয়েক বছর ধরে কাজ চলবে, যাতে সম্মুখভাগের অলংকৃত বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা যায়।
উদ্বোধন উপলক্ষে নটর ডেমে শনিবার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে ৫০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং ভিআইপিরা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানটি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রিন্স উইলিয়াম এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ফ্রান্সের প্রায় ১৭০ জন বিশপ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে পোপ ফ্রান্সিসের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্যারিসের আর্চবিশপ লরেন্ট উলরিচ একটি রাজদণ্ড দিয়ে ক্যাথেড্রালের বন্ধ দরজায় আঘাত করেন, এর মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠান শুরু হয়।
রোববার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য একটি উদ্বোধনী প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এরপর, সন্ধ্যায় আরেকটি প্রার্থনাসভা জনসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হবে।
এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আট দিন ধরে প্রতিদিন দুইবার বিশেষ প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে অনেকগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৪
আরএইচ