ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পার্থ-অর্পিতার বিলাসবহুল জীবনযাপন এখন স্মৃতি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২২
পার্থ-অর্পিতার বিলাসবহুল জীবনযাপন এখন স্মৃতি

কলকাতা: ভিআইপি জীবন এখন অতীত। সাধারণ অভিযুক্তদের মতো তারা এখন জেলে বন্দি।

তাই বিলাসিতা স্বাভাবিকভাবেই জুটছে না পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। একই অবস্থা বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের। এসির ঠাণ্ডা বাতাস ছেড়ে এখন ফ্যানের হাওয়া আর জেলের ডাল-ভাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের। টানা ১৪ দিন এ রকম পরিস্থিতিতেই থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গের দাপুটে মন্ত্রী পার্থ ও তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে।

কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের বাইশ নম্বর ওয়ার্ডের দুই নম্বর সেলে ঠাঁই হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এ ওয়ার্ডেই পার্থর পাশের সেলে রয়েছেন আর এক তৃণমূল নেতা ছত্রধর মাহাতো। ওয়ার্ডের অন্যান্য সেলের বাসিন্দাদের মধ্যে আছেন আমেরিকার দূতাবাসে হামলা চালানো কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী আফতাব আনসারি, জামালউদ্দিন নাসেরসহ আছেন বেশ কয়েকজন মাওবাদী নেতা।

জেল সূত্রে জানা যায়, জেলে তাদের কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। যে দুই নম্বর সেলে পার্থকে রাখা হয়েছে সেখানে কোনো চৌকি বা চেয়ার পর্যন্ত নেই। গত রাতে মেঝেতেই কম্বল পেতে শুতে হয়েছে সাবেক এ মন্ত্রীকে। জেলের নিয়ম অনুসারে মোট চারটা কম্বল দেওয়া হয়েছে তাকে। এগুলো মেঝেতে পেতে রোজ শুতে হবে এবং এগুলোকেই বালিশ হিসেবে ব‌্যবহার করতে হবে। বিলাসিতা একটাই সেই সেলে মলমূত্র ত্যাগের জন্য কমোড রয়েছে। তবে সব ব্যবস্থা ওই সেলের ভেতরেই। একই অবস্থা অর্পিতারও।

এসি ঘর আর গাড়ি ছাড়া যারা এক মুহূর্ত ভাবতে পারত না তারাই এখন ফ্যানের হাওয়াতেই প্রাণ জুড়াচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক দুর্নীতিতে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফ্যানের হওয়ার সঙ্গে এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন পার্থ-অর্পিতা। গত ২৩ জুলাই পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতারের পর ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় ইডি। এরপর গত ৩ আগস্ট আদালতে তোলা হলে আরও দুদিনের রিমান্ডে থাকার নির্দেশ দেন বিচারক। সেই অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট তাদের আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক জীবন সাধুখা। ওদিন থেকেই পার্থকে রাখা হয়েছে প্রেসিডেন্সি জেলে ও অর্পিতাকে আলিপুর নারী জেলে।

তবে জেলে পার্থর নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত রক্ষীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত রাতে পার্থকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে হাজির হন ইডির এক কর্তা। ইডি হেফাজতে থাকার সময় পার্থ যেসব মেডিসিন, জামাকাপড় ব্যবহার করছিলেন তা ওই ইডি কর্তা জেল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন। রাতে পার্থকে খেতে দেওয়া হয় রুটি ও সবজি।

গত রাতে নির্বারিত সেলে ঢুকেই পার্থ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। তিনি বলতে থাকেন এখানে কী করে থাকব? এদিকে অর্পিতাকে আলিপুর মহিলা জেলে রাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জন্যও অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাকে খাবার ও পানি পরীক্ষা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে জেল কর্তৃপক্ষ।

গত ৫ জুলাই আদালতে অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রি ভাট্টাচার্য তার নিরাপত্তার আর্জি জানান। তিনি বলেন, অর্পিতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রাণ সংশয় ঘটতে পারে। অর্পিতাকে খাবার ও পানি দেওয়ার আগে তা যেন পরীক্ষা করা হয়।

গত ৬ জুলাই সকালে দুজনকে দেওয়া হয়েছে বাটার মাখানো দুই পিস পাউরুটি টোস্ট ও রং চা। দুপুরে ভাত, ডাল আর পাঁচমেশালি সবজি। দুজনেই তা খেয়েছেন। রাতে মেনু ডাল আর রুটি। ১৪ দিন এভাবেই কাটবে তাদের জীবন। যে পার্থ খাওয়া বাদে মাসে আড়াই লাখ রুপির শুধু ফল খেতেন এবং অর্পিতার মুঠো মুঠো ড্রাইফ্রুট আর প্রতিনিয়ত বিদেশি মানে ব্ল্যাক কফি। তাদের আজ জেলের হাওয়া আর জেলের খাওয়াতেই পেট ভরাতে হচ্ছে। জানা গেছে, গত ১২ দিনে তিন কেজি ওজন কমেছে পার্থর। ছিল ১১১ এখন ১০৮ কেজি।

আবার তাদের আদালতে তোলা হবে ১৮ আগস্ট। ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফের তাদের জেল হেফাজত চাইবেন তারা। ফলে আগামী কয়েকটি মাস এটাই পার্থ-অর্পিতার জীবনের দিনলিপি হতে চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২২
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।