ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

মেয়েদের ফুটবল লীগ চালুর দাবি ফুটবল কন্যাদের

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৬
মেয়েদের ফুটবল লীগ চালুর দাবি ফুটবল কন্যাদের ছবি: অনিক খান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবলের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী ফুটবলররা মেয়েদের জন্য ঢাকায় ফুটবল লীগ ‍চালুর দাবি জানিয়েছে।

প্রতিশ্রুতিশীল এসব নারী ফুটবলারদের প্রত্যাশা তাদের সাফল্য-অর্জন বিবেচনা করে পুরুষদের মতো ঢাকায় মেয়েদেরও ফুটবল লীগ চালু হবে।

তারাও একদিন মহিলা জাতীয় দলে খেলবেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে একদিন জয় করবেন বিশ্ব।

বুধবার (০৪ মে) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে তাদের বরণ করে নেওয়ার সময় এ দাবি জানায় খুদে নারী ফুটবলাররা।

তাজিকিস্তানে দলীয় সাফল্যের প্রাণভ্রোমরা দুই সঙ্গী মার্জিয়া আর তহুরাকে ঢাকায় রেখে আসতে হয়েছে। এজন্য ভাইস ক্যাপ্টেন মারিয়া মান্দা ও তসলিমাদের মন খারাপ। তবে নিজের জেলা শহরে পা ফেলতেই তাদের মনোকষ্ট যেন নিমিষেই উবে যায়।

হাতে হাতে রজনীগন্ধা, বেলুন আর ফুলের মালার দৃশ্য ওদের মনে আনন্দের নাচন বইয়ে দেয়। ঢাকা থেকে আসা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি থেকে নামতেই তাদের পঙ্গপালের মতো ঘিরে ধরেন সংবাদকর্মীরা।

দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশের জন্য সাফল্য ও গৌরব বয়ে আনা কলসিন্দুরের মেয়ে ফুটবলারদের বরণ করেন জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ও বিশিষ্টজনেরা।

সাজেদা আক্তার, তাসলিমা আক্তার, শামসুন নাহার, মারিয়া মান্দা, মাহমুদা আক্তার ও নাজমা আক্তার। কৃতি এসব ফুটবলারদের বাড়ি দেশের নারী ফুটবলার তৈরির গ্রাম কলসিন্দুর। ভারতের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দুর্গম প্রত্যন্ত পল্লীর এ মেয়ে ফুটবলাররাই দেশের ফুটবলে আশার আলো হয়ে উঠেছেন।

গত বছর প্রথমবারের মতো নেপালে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবলের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মার্জিয়া-তহুরা-মারিয়ারা। চলতি বছর তারা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। এবার গারো পাহাড়ের কোলের কলসিন্দুর গ্রামের ৮ খুদে ফুটবল কন্যারা তাজিকিস্তান থেকে জয় করেছে একই শিরোপা।

নিজের জেলা নগরীর মাটিতে পা রেখে স্বভাবতই সবাই উৎফুল্ল। ‘সবাই হাসি দাও। যার মুখ বন্ধ তার মুখ গন্ধ’ বাক্যালাপে রসিকতা করছিলেন সাজেদা আক্তার। সেমিফাইনালে তাজিকিস্তানের বিপে একটি গোল করেছিলেন এ ফুটবল কন্যা।

দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন, কেমন লাগছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে সাজেদা বলে, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচেই খুব ভালো খেলছিলাম। তখনই ভেবেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হবো। চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জিতে হেসেই আমরা মাঠ ছেড়েছি। ’

গালভরা হাসিতে দ্যুতি ছড়িয়ে মারিয়া বললো, পরপর দু’বছর চ্যাম্পিয়ন আমরাই। খুবই ভালো লাগছে। আমাদের টার্গেট পূরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো ভালো খেলতে হলে নিয়মিত প্র্যাকটিস চালিয়ে যাওয়া দরকার। ’

পাশ থেকেই মারিয়ার সঙ্গে যোগ করে নাজমা বলে, ‘সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হলে আমরাই পারবো লাল-সবুজের পতাকা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে। ’

তাজিকিস্তানে এবারের টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ভারতকে ৩-১ গোলে হারানোর পর ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল সেই ভারত। এবার আর গোল খাওয়া নয়। ৪-০ গোলে হারিয়ে দাপুটে এক জয় তুলে আবারো চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। তাজিকিস্তানের বিপে হ্যাট্রিকসহ টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ১০ গোল করে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন স্থানীয়দের কাছে ‘মেসি’ খ্যাত এ দলের খেলোয়াড় তহুরা।

দেশের ফুটবলের এগিয়ে যাবার গল্পের প্রতীক এ খুদে মেয়ে ফুটবলাররাই। তাদের হাত ধরেই ফুটবল মানচিত্রে নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বছরের মে মাসে এসব নারী ফুটবলারদের সাফল্যের গল্প ও নানাদিক তুলে আনতে সর্ব প্রথম ধোবাউড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুরে যায় বাংলানিউজ।

ওই সময় তাদের নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছাপায় বাংলানিউজ। বাংলানিউজের সঙ্গে সেদিনও কথা বলেছিলেন মারিয়া মান্দা। এ কিশোরীর মনের হীরক দ্যুতিতে আজো জ্বলে আছে বাংলানিউজ।

বাংলানিউজের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উচ্ছ্বসিত মেয়ে ফুটবলার মারিয়া মান্দা বলেন, ‘আমরা চাই ঢাকায় মেয়েদের ফুটবল লীগ চালু হোক। আমরা জাতীয় দলে খেলতে চাই। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদী ভালো প্রশিক্ষণ দরকার। সব সময় ক্যাম্পে খেলতে পারলে, প্রশিক্ষণ নিতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা আরো ভালো করতে পারবো। ’

ময়মনসিংহ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উমর হায়াত খান নঈম অভিন্ন দাবি জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এসব মেয়ে ফুটবলারদের ধরে রাখতে ঢাকায় মেয়েদের ফুটবল লীগ চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৬
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।