ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

বিশ্বকাপের সুপার ফ্লপ পাঁচ তারকা

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৪
বিশ্বকাপের সুপার ফ্লপ পাঁচ তারকা ওয়েন রুনি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও ইকার ক্যাসিয়াস

ঢাকা: বিশ্বকাপ মানেই দলীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। দলীয় এ লড়াইয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের পাল্লা ভারী করারও সুযোগ থাকে সমানভাবে।

দলকে এগিয়ে নিতে নিজের সর্বোচ্চটি উজাড় করে এ ধরনের আসরে খেলে থাকেন ছোট-বড় সব তারকা।

ফুটবল গোলের খেলা বলে কারও ব্যক্তিগত অর্জনই দলের সাফল্যের কারণ হয়ে যায় অনেক সময়। সে হিসেবে ‍চার বছর ধরে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দের ওপরই দলীয় দাবি-দাওয়া বেশি থাকে, যেন তিনি সামনে থেকে দলকে এগিয়ে নেন।

দলকে শিরোপা জয়ের মঞ্চে পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে এ দাবি পূরণও করে চলেছেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের নেইমার, জার্মানির থমাস মুলার, ফ্রান্সের করিম বেনজেমা এবং নেদারল্যান্ডসের অ্যারিয়েন রোবেন ও রবিন ফন পার্সিরা।

তবে, দলের অনেক চাওয়া থাকলেও পারেননি ইংল্যান্ডের ওয়েন রুনি, পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, স্পেনের ইকার ক্যাসিয়াস, আর্জেন্টিনার গঞ্জালো হিগুয়েন ও ইতালির মারিও বালোতেল্লিরা। এদের অনেকের ব্যক্তিগত ব্যর্থতার পাশাপাশি তাদের দলও ব্যর্থদের সারিতে অর্থাৎ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে গেছে। কেবল একা মেসির কাঁধে চড়ে টিকে আছে হিগুয়েনের আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই পাঁচজনকেই টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ তারা হলেন সুপার ফ্লপ, যদিও পরবর্তী তিন ম্যাচে (খেলতে পারলে) হিগুয়েনের নিজেকে প্রমাণের সুযোগ রয়েছে।

এ পর্যায়ে চলতি বিশ্বকাপের সুপার ফ্লপ পাঁচ তারকা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।



ওয়েন রুনি (ইংল্যান্ড)
ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার ওয়েন রুনির ওপর স্বপ্নের চোখ রেখে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে ‍আসে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এফএ কাপ, প্রিমিয়‍ার লিগসহ বেশ কিছু শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই রুনি, সে হিসেবে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে তার ওপরই ছিল ইংল্যান্ডের প্রধান নির্ভরতা। কিন্তু রুনি ব্যর্থ হলেন, গত বিশ্বকাপের চেয়েও এবার বেশি খোলসবন্দী থাকলেন তিনি। গ্রুপ পর্বে ইতালি-উরুগুয়ের সঙ্গে হার ও কোস্টারিকার সঙ্গে ঘাম ঝরানো ড্র করে এবারের আসর থেকে খালি হাতে ফিরতি ফ্লাইট ধরে ইংল্যান্ড, সেই ফ্লাইটে চেপে বসতে হয় সুপার ফ্লপ রুনিকেও।



ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
এ প্রজন্মের ফুটবলে আর্জেন্টাইন বিস্ময়বালক লিওনেল মেসির সঙ্গে দ্বৈরথে টিকে আছেন কেবল পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দুর্বল পর্তুগাল শিরোপা জিতবে এমনটি কেউ আশা না করলেও রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন লিগ, লা লিগাসহ সব রকমের শিরোপা জেতানো রোনালদোয় চড়ে দলটি বিশ্বকাপে উল্লেখযোগ্য কিছু করবে বলে প্রত্যাশায় ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু রোনালদো পারলেন না, চরম দলীয় ব্যর্থতার সঙ্গে ম্লান ছিলেন তিনিও। গ্রুপ পর্বের গোল মেশিন রোনালদোর দল উল্টো জার্মানির সঙ্গে এক হালি গোল হজম করে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘাম ঝরানো ড্রয়ের পর ২-১ গোলে জয় পায় ঘানার সঙ্গে। শেষ ম্যাচে গোলের দেখা পান রোনালদো। তবে ততক্ষণে দলের ফিরতি ফ্লাইট নিশ্চিত হয়ে গেছে। রোনালদোকেও ধরতে হয়েছে সেই হতাশার গন্তব্যের পথ।



ইকার ক্যাসিয়াস (স্পেন)
প্রজন্মের সেরা গোলরক্ষক মনে করা হয় ইকার ক্যাসিয়াসকে। রিয়াল ‍মাদ্রিদের এ অধিনায়কের নেতৃত্বে গত বিশ্বকাপ আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছিল টিকি-টাকার স্পেন। ক্লাব ফুটবলে উড়ন্ত মৌসুম কাটানো ক্যাসিয়াস এবারও স্পেনকে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবেন বলে মনে করা হলেও সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ক্যাসিয়াস গোলরক্ষণে নিয়োজিত থাকলেও তার দলকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল হজম করতে হয়েছে ৫টি, দুর্বল চিলির সঙ্গেও দু’টি গোলের কোনোটি ফেরাতে পারেননি ক্যাসিয়াস। শেষ ম্যাচে দুর্বল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জয় তুলে নিলেও ক্যাসিয়াসদের দেশে ফেরাটা তখন ফ্লাইটে ওঠার অপেক্ষ‍ায় কেবল। বিশ্বকাপে সুপার ফ্লপ ক্যাসিয়াস আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাচ্ছেন-এমন গুঞ্জনও উঠছে এখন।



গঞ্জালো হিগুয়েন (আর্জেন্টিনা)
ভাগ্যিস তার জাতীয় দলে একজন মেসি ছিলেন, নতুবা স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের দ্বিতীয় গোল মেশিন গঞ্জালো হিগুয়েনকেও তার সতীর্থ রোনালদোর পথ ধরতে হতো। হিগুয়েন গত বিশ্বকাপে ছিলেন ভীষণ উজ্জ্বল, করেছিলেন একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও। কিন্তু এবারের আসরে তাকে পাওয়াই যাচ্ছে না মাঠে, এমনকি একটি দুর্দান্ত শটও নিতে দেখা যায়নি তাকে। নকআউট পর্যন্ত এক মেসিতে পার হয়ে গেলেও কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা এরপর দলের অন্যদের পাশাপাশি হিগুয়েনকেও সমান অবদান রাখতে হবে বলে মনে করছেন বোদ্ধারা।



মারিও বালোতেল্লি (ইতালি)
ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের হয়ে দুর্দান্ত মৌস‍ুম শেষ করে বিশ্বকাপ অভিযানে নামেন মারিও বালোতেল্লি। অ্যান্দ্রেয়া পিরলো-জিয়ানলুই বুফনদের দলের এ তারকাই দলকে শিরোপা মঞ্চের দিকে এগিয়ে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বালোতেল্লি নিজেই বলেছিলেন, আসরের শেষ দেখতে এসেছেন তিনি। এমনকি কোস্টারিকার সঙ্গে ম্যাচের আগে উচ্ছ্বসিত বালোতেল্লি বলেছিলেন-ইংল্যান্ডকে বাঁচাতে কোস্টারিকাকে হারালে আমি রাণীর চুমু ‍উপহার পাবো, আমি রাণীর উপহার পেতে চাই। ইংল্যান্ডকে বাঁচানো তো দূরে, উল্টো নিজের দলকেই খাঁদে দেবে যেতে দেখলেন সুপার ফ্লপ বালোতেল্লি।

এই পাঁচ তারকা ছাড়াও ফ্লপদের কাতারে আছেন স্পেনের আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জাভি হার্নান্দেজ, দিয়েগো কস্তা, ইংল্যান্ডের স্টিভেন জেরার্ড, উরুগুয়ের দিয়েগো ফোরলান প্রমুখ।

তবে, এ বিশ্বকাপে উজ্জ্বল মেসি-নেইমারদের সঙ্গে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজ, জার্মানির থমাস মুলার, ফ্রান্সের করিম বেনজেমা, নেদারল্যান্ডসের অ্যারিয়েন রোবেন, রবিন ফন পার্সি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।