ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষকের পিটুনিতে হাতের হাড় ভাঙলো ছাত্রীর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
শিক্ষকের পিটুনিতে হাতের হাড় ভাঙলো ছাত্রীর

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ১০৩ নম্বর সেন্ট্রাল আবাদ চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিসের পানি খাওয়ার অপরাধে  শিক্ষকের পিটুনিতে ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। ভেঙে গেছে তার বাম হাতের কব্জির দুইটা হাড়।

আহত স্কুলছাত্রীর বাবা আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার (১ আগস্ট) আমি কাজ করে বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর আমার মেয়ে বাড়িতে এসে কাঁদতে থাকে। তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে স্কুলের লাইব্রেরিতে পানি খেতে গেলে স্যার আমাকে মেরেছে, আমার হাতে প্রচুর যন্ত্রণা হচ্ছে, আমি সহ্য করতে পারছি না। এমন অবস্থা দেখে আমি তাৎক্ষণিক স্থানীয় চিকিৎসক অনিমেষ এর সহযোগিতা নেই। কিন্তু তিনি দেখে বলেন অবস্থা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আপনি ভালো ডাক্তার দেখান। পরবর্তীতে আমি তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার হাতের এক্স-রে করানোর কথা বলেন। এক্সে রিপোর্টে দেখা যায় তার বাম হাতের কব্জির দুইটা হাড় ভেঙে গেছে।

তিনি আরো বলেন, এখন আছি বিভিন্ন হুমকি ধামকিতে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বড় ভাই স্থানীয় মেম্বার হওয়ায় বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে।  

তিনি বলেন, একে তো মেয়েকে মারার কোন বিচার পাচ্ছি না। অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছি।

ওই ছাত্রীর মা শাহানা পারভীন বলেন, আমি ওই স্কুলের বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে বিগত দিনেও অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক এস এম শহিদুল ইসলামকে একই কারণে বার বার সতর্ক করেছি। কিন্তু তিনি স্থানীয় হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কোনো কথায় তোয়াক্কা করেন না।

অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, শিক্ষক এস এম শহিদুল ইসলামের এটা কোন নতুন ঘটনা নয়, অভিযুক্ত শিক্ষক আগে থেকেই বেপরোয়া।

এ বিষয়ে শিক্ষক এস এম শহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ পরিদর্শন করতে এসেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। আমি বাচ্চাদের ক্লাসে যেতে বলেছিলাম কিন্তু কেউই কথা শুনছিল না। তাই আমি লাঠি দিয়ে কয়েকটি মেয়েকে মেরেছি।  

তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান হাতে ব্যথা পেয়েছি। এখনো ব্যান্ডেজ দেওয়া আছে। বাম হাত দিয়ে মেরেছি তাতে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়, স্থানীয় শত্রুতার শিকার হচ্ছি আমি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌভিক রায় বলেন, ঘটনার দিন আমি মাসিক মিটিংয়ে ছিলাম। ঘটনাটি পরে শুনেছি, বিষয়টি দুঃখজনক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রকিব হাসান বলেন, আমি ওই শিক্ষার্থীকে দেখতে হাসপাতালে এসেছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাজমুত শাহাদাৎ মিলন বলেন, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি শুনেছি অভিযুক্ত শিক্ষককে কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা প্রাথমিক অফিসার রমিজ মিয়া বলেন, দুইদিন আগের ঘটনা, আমি জেনেছি আজ। প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলেছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।