খুলনা: জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতির পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) নির্ধারিত সময়েই শুরু হয়েছে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের (২৩ ব্যাচের) ২য় বর্ষ টার্ম-১, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম বর্ষের ২য় টার্ম এবং ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স ২য় টার্মের পরীক্ষা শুরু হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতন হলে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্ট, প্রকল্প পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকসহ প্রায় ৭০ জন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। নজিরবিহীন এক সংকটের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ২ সেপ্টেম্বর অ্যাকাডেমিক প্রধানদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হিসেবে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমকে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম সচল করতে গুরুত্ব দেন। শিক্ষকমণ্ডলীর আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতায় ক্লাসের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে স্বরূপে ফিরে আসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও ১০ সেপ্টেম্বর সব স্কুলের ডিনদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার পুনঃনির্ধারণ করা হয়। সেই অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেই টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
এছাড়া ৭ অক্টোবর সব স্কুলের ডিনদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের (২৪ ব্যাচের) প্রথম বর্ষ প্রথম টার্মের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়। ২৪ ব্যাচের এসব শিক্ষার্থীদের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান জানান, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি সামলে ওঠায় ব্যস্ত, তখন থেকেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক।
তিনি জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। তাঁর দিকনির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী এবং শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় প্রথম থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সে আলোকে নতুন প্রণয়নকৃত অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেই ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য একই অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস শুরু করতে পারেনি, তখন আমাদের দায়িত্বশীল শিক্ষকমণ্ডলী ও সচেতন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় সবকিছু স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছি।
পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সিরাত কনফারেন্স এবং হলগুলোতে নানা ধরনের প্রীতিভোজ, কাওয়ালি, বাউল সন্ধ্যার মতো আয়োজনে মুখরিত ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
এমআরএম/এএটি