যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস-এর ওয়েলসলি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের (কাসা) অ্যাসোসিয়েট মেম্বার ড. লামিয়া মওলা সম্প্রতি নেচার জার্নালে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
এ গবেষণায় নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)-এর তথ্য ও ছবি ব্যবহার করে ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কল’ নামে একটি নবীন গ্যালাক্সি আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, যা বিগব্যাংয়ের মাত্র ৬০ কোটি বছর পর গঠিত হচ্ছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কল’ গ্যালাক্সিটি ১০টি উজ্জ্বল তারাপুঞ্জ নিয়ে গঠিত যার প্রতিটির ভর আনুমানিক ১০ লক্ষ সূর্যের সমান। গ্যালাক্সিটির কাছাকাছি দুটি ছোট সঙ্গী গ্যালাক্সি রয়েছে, যেগুলোকে ‘ফায়ারফ্লাই-বেস্ট ফ্রেন্ড’ এবং ‘ফায়ারফ্লাই-নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাচীন মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই গবেষণার কাজে ড. লামিয়া মাওলা ছাড়াও ছিলেন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের ২১ জন বিজ্ঞানী।
এ আবিষ্কারটি সম্ভব হয়েছে গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং নামে একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণে। নতুন আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিটির ঠিক সামনে রয়েছে একটি ভারী গ্যালাক্সিপুঞ্জ,
যার মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এর আশপাশের স্থান-কাল বক্র হয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে যখন আলো আসে, তখন সেই বক্র স্থান-কাল আতশ কাঁচের মতো আচরণ করে। একেই বলে গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং যার কারণে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে ফায়ারফ্লাই স্পার্কল ২৬ গুণ বেশি উজ্জ্বল হিসেবে ধরা দিয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা গ্যালাক্সিটি সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য জানতে পেরেছেন।
ড. লামিয়া মওলা বলেন, “ফায়ারফ্লাই স্পার্কল থেকে আসা আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে ১৩.২ বিলিয়ন বছর সময় লেগেছে। তবে, যেহেতু মহাবিশ্ব ক্রমপ্রসারমান, তাই এ সময়ের মধ্যে গ্যালাক্সিটি আমাদের কাছ থেকে আরো অনেক অনেক দূরে সরে গেছে। আমাদের গবেষণা বলছে যে, আমরা যদি গ্যালাক্সিটির ঠিক এখনকার অবস্থা দেখতে পেতাম, তাহলে হয়তো সেটি আমাদের মিল্কিওয়ের মতোই দেখতে হতো। এই আবিষ্কার আমাদের গ্যালাক্সির শৈশবকাল কেমন ছিল তা জানার একটি বিরল সুযোগ করে দিয়েছে। ”
কাসার পরিচালক এবং আইইউবি’র ফিজিকেল সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. খান মুহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, “বাংলাদেশে পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞান গবেষণার যাত্রা মাত্রই শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি আইইউবি’র কাসা একদিন এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত হবে। ড. মওলা-কে অভিনন্দন জানাই এই যুগান্তকারী গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য এবং আমাদের সাথে গবেষণা, সম্পদ ও জ্ঞান বিনিময় করে আইইউবি-তে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করার জন্য। ”
আইইউবি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অ্যাস্ট্রোনমি ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে আছে মাইনর: পাঁচটি কোর্সের সমন্বয়ে তৈরি একটি স্পেশালাইজেশন। এখানে রয়েছে দুটি অত্যাধুনিক ইউনিস্টেলার ইকুইনক্স টেলিস্কোপ, যা ২০২২ সালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ডানলাপ ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স থেকে ড. মওলার একটি আউটরিচ অনুদানের মাধ্যমে আনা হয়েছিল।
কাসা মহাকাশবিজ্ঞান ও জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার, গবেষণা এবং বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশের অবদান নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
জেএইচ