ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মন্ত্রীর কথার ‘প্রতিফলন’ নেই চালের বাজারে

ইয়াসির আরাফাত রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
মন্ত্রীর কথার ‘প্রতিফলন’ নেই চালের বাজারে

ঢাকা: গত কয়েক মাস ধরে দেশের পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতা চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি আমদানি করা হলেও ‘স্থিতিশীল’ হয়নি পেঁয়াজের বাজার। এর মধ্যে নতুন করে ‘ঊর্ধ্বমুখী’ হচ্ছে দেশের চালের বাজার। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রী বলছেন চালের বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে চালের ব্যাপক মজুদ রয়েছে।

তাছাড়া আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বাজারমূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু বাজারের চিত্রের সঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এতে মন্ত্রীর বক্তব্য আর চালের বাড়তি দাম নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে চালের বাড়তি দাম থাকায় খুচরায় বেড়েছে। আর ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম বাড়লেও মন্ত্রী বাজার পরিস্থিতি না জেনেই কথা বলেছেন।  

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।

সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, ফকিরাপুল, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি বাজার এবং খিলগাঁও বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, চিনিগুড়া ১০০ টাকা কেজি দরে।

অথচ এক সপ্তাহ আগে বাজারভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৪ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, চিনিগুড়া ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি দরে।

বর্তমানে এসব বাজারে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৭৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২৩৫০ থেকে ৩১০০ টাকায়। অথচ মাত্র চার দিন আগে প্রতিবস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২০৫০ টাকায়, আটাশ চাল ১৪৫০ টাকায়, নাজিরশাইল ১৯৫০ থেকে ২৭০০ টাকায়।

চালের বাজার নিয়ে রোববার (২৪ নভেম্বর) মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশে চালের ব্যাপক মজুদ রয়েছে। তাছাড়া আমরা চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাজারও নিয়ন্ত্রণে। এক কথায় বলতে পারি চালের মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে খাদ্যপণ্যে পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মোটা চালের পরিবর্তে সরু (চিকন) চাল খান। এজন্য সরু চালের দাম কিছুটা বাড়লেও মোটা চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরু চালের দাম বাড়ার পর ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আমরা এর সমাধান করেছি। এখন চালের বাজার স্বাভাবিক। চালের বাজারে যাতে কোনো কারসাজি না হয় সেজন্য আমাদের ১০টি টিম কাজ করছে।

পেঁয়াজের পর হঠাৎ চালের বাজার চড়া হওয়া আর খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মতোই চালের বাজারেও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো চেষ্টা হচ্ছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।

সাজিদা ইসলাম নামে খিলগাঁও বাজারের এক ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়লেও খাদ্যমন্ত্রী বলছেন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে। তবে সাধারণ ক্রেতারা কী বুঝবে এ বক্তব্যের মাধ্যমে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জব্বার নামে শান্তিনগর বাজারে অপর ক্রেতা বলেন, মন্ত্রী বলেছেন বাজার নিয়ন্ত্রণে, আবার বাজার মনিটরিংয়ে একাধিক টিম কাজ করছে, বাস্তবে এর কোনোটাই মিল নেই। কোথাও কোনো টিম কাজ করছে না, দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬/৭ টাকা।

শান্তিনগর বাজারের চাল বিক্রেতা বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে বর্তমানে চালের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ দেখি না। তবে মিল মালিকরা এর দাম বাড়িয়েছেন, এটা সত্য। তারা দাম কমালে অবশ্যই চালের দাম বাড়ার পরিবর্তে আরও কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
ইএআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।