ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা বিতরণে অনিয়ম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা বিতরণে অনিয়ম  বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দেশের বৃহত্তম কয়লা খনি বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ইটভাটা মালিকরা। কয়লা সিন্ডিকেটের কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আবেদনকারী ব্যবসায়ীরা কয়লা না পেলেও সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়তই কয়লা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে ভরা মৌসুমেও বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা পাচ্ছেন না ইটভাটা ব্যবসায়ীরা। উপযুক্ত সময়ে ও চাহিদা মোতাবেক কয়লা না পাওয়ায় ইট তৈরির কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

এদিকে খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিন মাসের কয়লা মজুদ রেখেই তারপর কয়লা সরবরাহ করা হচ্ছে। সিরিয়াল মেনে কয়লা সরবরাহের কারণে অনেক ভাটা মালিক চাহিদা মতো কয়লা পাচ্ছেন না।

তবে সরেজমিন দেখা যায়, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিন মাসের জন্য যেটুকু পরিমাণ কয়লা মজুদ থাকার কথা সেই পরিমাণ কয়লা খনিতে মজুদ নেই।  

২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। বিদেশি কয়লার চেয়ে এখানকার কয়লার গুণগত মান ভালো হওয়ায় অল্পদিনে চাহিদা দাঁড়ায় দ্বিগুণ। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।

সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেও সময় মতো কয়লা পাচ্ছেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ অথবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গেলে তবেই পাওয়া যাচ্ছে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা। সাধারণ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া দামে কয়লা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কয়লা সংগ্রহ করছেন।

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ১৫ হাজার ৯২১ টাকা দরে প্রতি মেট্রিক টন কয়লা বিক্রি করছিল বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ২২ তারিখে পূর্বের মূল্য বৃদ্ধি করে ১৬ হাজার ৮৫৫ টাকা নির্ধারণ করে। তবে রোববার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি করার কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পত্রিকা দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।  

বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে পাশবর্তী কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে। আগামী তিন মাসের জন্য প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রাখতে খনি কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নির্দেশ থাকলেও খনি কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ রেখে উৎপাদিত অবশিষ্ট কয়লা তরিঘড়ি করে বিক্রি করছে। আগামীতে কয়লা উৎপাদনে বিঘ্নতা ঘটলে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কয়লা ভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। জাতীয় গ্রিডে দেখা দিতে পারে বিদ্যুৎ সংকট।  

দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার ভাটা ব্যবসায়ী এসএন ব্রিক্স এর স্বত্বাধিকারী মো. জয়নুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খনি থেকে কয়লা কেনার জন্য আবেদন দিলেও এখন কয়লা মিলছে না। খনি কর্তৃপক্ষ আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে কয়লা দেবে বলে জানিয়েছে।  

এতদিনে ইট ভাটার মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। তাই স্থানীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া দামে কয়লা কিনছি। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চড়া দাম হওয়ায় ভারতীয় নিম্নমানের কয়লা বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছি। আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা আবেদন করে কয়লা পাই না আর সেখানকার সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়ত কয়লা নিচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী (সেলস এবং মার্কেটিং) মো. আনিছুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদার তুলনায় কয়লা উত্তোলন হচ্ছে খুবই কম। পার্শ্ববর্তী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রাখতে বলা হয়েছে তাও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী রেখে আবেদনকারীদের মাঝে গড়ে ১৫শ’ মেট্রিক টন কয়লা বিতরণ করা হচ্ছে।
 
বর্তমানে গত বছরের অক্টোবর মাসের আবেদনকারীদের মাঝে কয়লা বিতরণ চলছে। এখন যারা আবেদন দিচ্ছেন তারা আগামী তিন মাস পর পেতে পারেন। বর্তমানে যাদের কয়লা দেওয়া হচ্ছে এদের অধিকাংশেরই গণশিক্ষা মন্ত্রীর সুপারিশ রয়েছে। তবে পর্যাক্রমে সিরিয়াল অনুযায়ী সবাইকে কয়লা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।