ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

কোমর সমান পানিও বাধা হতে পারেনি নাঈমের

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
কোমর সমান পানিও বাধা হতে পারেনি নাঈমের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে: স্টেডিয়ামের পূর্বের ক্লাব হাউস গ্যালারির একেবারে কোণে।বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে সেখানে এসে বসে পড়ল দুটো শরীর। একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, অন্যজন তো একেবারেই শিশু-বয়স চৌদ্দের আশেপাশে! দু’জোড়া চোখ পড়ে আছে কেবল ডাগআউট আর উইকেটে।

হালকা গোলাপি সাদা শার্ট আর বাদামি রঙের প্যান্ট পরা ভদ্র লোকের নাম মাহবুবুল আলম। আর ছেলেটার নাম হাসিবুল আলম অনিক।

পরিচয়ে প্রথমজন নাঈম হাসানের বাবা আর দ্বিতীয়জন তার আদরের ছোট ভাই।

নাঈম হাসানকে তো নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তোলপাড় তুলে বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে ঢুকে পড়া টিনএজারকে নিয়ে তো গত কয়েকদিনে লেখা হয়ে গেছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।

ছেলে প্রথম টেস্টের একাদশে নেই তাতে কী? ডাগআউট থেকে নাঈম পানি-তোয়ালে নিয়ে মাঠে ঢুকছেন-বের হচ্ছেন তা দেখেই গর্বে বুক ভেসে যাচ্ছে বাবা মাহবুবুল আলমের।

মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হকের ধ্রুপদি ব্যাটিং দেখার ফাঁকে ফাঁকে বাবা মাহবুবুল আলম শোনালেন ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার গল্প।

চট্টগ্রাম সিটির চান্দগাঁও ওয়ার্ডের দুই বারের কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম ছিলেন আশির দশকের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার। সেদিক দিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কিছুটা যেন মিল আছে নাঈমেরও। দু’জনের বাবাই ছিলেন ফুটবলার। তারা বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটকেই।

চট্টগ্রাম বাদার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলমের বড় ছেলে কামরুল আলমকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্নে নিয়ে এসেছিলেন নিজ একাডেমিতে। কিন্তু সেই ছেলের ক্রিকেট যাত্রা থেমে গেছে শুরুতেই। তাতে ভেঙে পড়া বাবার মেজ ছেলে নাঈম হাসানের ক্রিকেট নিয়ে তেমন আগ্রহও ছিল না তাই। কিন্তু বাবার অজান্তে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নাঈম হাসান ছুঁটে গেছে এই মাঠ থেকে ওই মাঠে। পড়ার ফাঁকে সময় বের করে গড়ে তুলেছেন নিজেকে।

‘বর্ষাকালে চট্টগ্রামে খুব পানি ওঠে। কখনো কখনো তা কোমর সমানও গড়ায়। কিন্তু আমার ছেলেকে বর্ষাকালেও কোনোদিন দেখিনি অনুশীলন মিস দিতে। ওই পানি ডিঙ্গিয়ে সে চলে আসতো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশের বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ইনডোরে। যেটি আমার বাসা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। বলতে গেলে সে নিজের ত্যাগ আর ইচ্ছেতেই এতদূর এসেছে। ’-ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হচ্ছিলেন মাহবুবুল আলম।

ছেলে প্রথম টেস্টের একাদশে না থাকা নিয়ে মোটেও মন খারাপি নেই মাহবুবুল আলমের।

সোজাসাপ্টা বলে গেলেন, ‘আমি নিজে একজন ক্রীড়া সংগঠক। আমারও আইডিয়া আছে। তাই বলছি আমি হলেও ওকে এই টেস্টের একাদশে রাখতাম না। কারণ ওয়ানডেতে টানা দুই ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ কিছুটা চাপে আছে। তার ওপর সাকিব আল হাসান নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন একজনকে খেলানোর মতো ঝুঁকি নেওয়া যায় না। ও দলের সঙ্গে থাকুক। একটা সময় সুযোগ চলে আসবেই। ’

ছেলেকে তো এতোদিন দেখে এসেছেন? কেমন মনে হচ্ছে? এমন প্রশ্নে নাঈমের ‘প্রথম কোচ’ বাবা বলেন, ‘যতটুকু জানি ওর বোলিংটা ভালো। বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমানে শ্রীলঙ্কার কোচ হাথুরুসিংহেও ওর খুব প্রশংসা করেছিল। তবে ওর সঙ্গে ব্যাটিংটাও আছে। কিন্তু সেটিকে উন্নত করতে হবে। আমি ওকে বারবার সেই পরামর্শই দিই-‘বাবা তোমাকে ব্যাটিংটাও ভালো করতে হবে। দুই বিভাগেই সেবা দিতে হবে। ’

বিস্ময়ের শোনালেও গত বছর অনুষ্ঠিত ইমার্জিং এশিয়া কাপ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা প্রতিটি ম্যাচে নাঈম কতো রানে কতো উইকেট নিয়েছেন, কতো রান করেছেন সব মুখস্ত আছে বাবা মাহবুবুল আলমের। এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছিলেন ওই ম্যাচে এত রাতে, এত উইকেট পেয়েছিল ছেলে..।

নাঈম হাসান ভীষণ মা-ভক্ত। একগাল হাসি নিয়ে বললেন বাবা মাহবুবুল আলম। ‘ও মা ছাড়া কিছুই বোঝেনা। আমি না, মা-ই ওর সব। মায়ের রান্না করা খাবার তার খুব প্রিয়। চট্টগ্রামে এসে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর দুবার ঘুরে এসেছে আমাদের ফরিদার পাড়ার বাসা থেকে, শুধুমাত্র মায়ের রান্না খাবে বলে। ’

মাহবুব আলমের সঙ্গে আড্ডা প্রায় শেষের দিকে। বিদায় নিতে হাতটা বাড়াতেই পাশে বসা ছোট ছেলের দিকে ইঙ্গিত করে বলে ওঠেন, ‘ওকেও দেখে রাখেন। একদিন সেও বাংলাদেশের হয়ে খেলবে ইনশাআল্লাহ। ’

হাসিবুল আলম অনিক, নাঈম হাসানের ছোট ভাই জানালেন, সেও ভাইয়ের মতো অফ স্পিনার। ভাইয়ের বেড়ে ওঠা একাডেমিতেই নিজেকে গড়ে তুলছে সে-ও।

তাহলে কি খান পরিবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে আরও একটা ক্রিকেট পরিবার পাচ্ছে বাংলাদেশ?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অবশ্য আরও কয়েকবছর অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
টিএইচ/টিসি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।