ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

নাফাকুম যাত্রা, সত্যিই দুঃসাহসিক!

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
নাফাকুম যাত্রা, সত্যিই দুঃসাহসিক! ছবি-আবু বকর

বান্দরবার (থানচি ঘুরে): পৌঁছাতেই দিন যাবে, খরস্রোতা নদীর বিপরীতে নৌকা, বড় বড় পাথর, যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।

সাঁতার দিতে হবে, হাঁটতে হবে বহুদূর…।
 
গন্তব্যের পথে নানা শঙ্কা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাস্তবেও কথাগুলোর মর্ম বোঝা গেল দীর্ঘ ৫ ঘণ্টায়। লাইফ জ্যাকেট পরে পুরো নৌপথ, কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও সাঁতরিয়ে শেষ পর্যন্ত ‘নাফাকুম’ ঝরনা।

নাফাকুম যাওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি। সকালে বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়িতে প্রায় চার ঘণ্টায় থানচি। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় থানচিতে রাত যাপন এবং গাইড ও নৌকা ঠিক করে পর দিন সকালে যাত্রার সময়।


 
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে থানা ও বিজিবি ক্যাম্পে অনুমোদন নিতে হলো। স্থানীয় যুবক প্রকাশ মল্লিক এক হাজার টাকায় গাইড হলেন। বললেন, পলিথিন কিনেন, লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নিতে হবে। কথা মত তাই হলো।


 
সকাল ৭টা ২০ মিনিটে থানচি ঘাট থেকে বাংলানিউজের চারজন, গাইড এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি- ছয় জনের টিম। মনে হচ্ছে সামনে ১০ হাত দূরে অন্তত এক ফুট উচ্চতায় পানি।  
 
কুড়ি মিনিটের মাথায় গাইড বললেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক শেষ।


 
৮টা ১০ মিনিটে তিন্দু বাজার পেরিয়ে কিছুটা সামনে ৩/৪ ফুট উচ্চতায় পানি। কালো পাহাড়ের কাছের এ জায়গাটা ভয়ংকর, জানালেন প্রকাশ। এর মিনিট দশেক পর মিললো কুমারী ঝরনা, যা দেখে মন জুড়াবে সবার।
 
স্রোতের বিপরীতে নৌকা এগোচ্ছে, বড় বড় ঢেউয়ে দুলছে নৌকা। লাইফ জ্যাকেট পরলেও মন দুরু দুরু, প্রকাশ বলছেন শক্ত করে ধরতে।


 
একটু পরই নৌকার গতি ধীর হয়ে এলো, সামনে নদীর মধ্যে সারি সারি বড় বড় পাথর। গাইড জানালো- সামনে রাজা পাথর।
 
প্রায় ১০ মিনিট ধীর গতিতে বড় বড় পাথরের ফাঁক দিয়ে চলছে নৌকা। একটি শেষ তো সামনে আরও, এভাবে ১২টি বড় পাথর। অতিক্রম করা বিপজ্জনক হলেও পাথরের সৌন্দযও কম ছিল না।
 
একটু পর বড় বড় ঢেউ। বেশ সাবধানতার সঙ্গে নৌকা চালাচ্ছেন দিদার মাঝি। একটা খাল দেখিয়ে প্রকাশ বলললো, এই পথে চার ঘণ্টা হাঁটলে একটি বড় ঝরনা। তবে যাওয়া বিপদজনক।


 
ওদিকে না গিয়ে সোজা পথে ৯টা ৫ মিনিটে পাহাড়ের বাঁক। প্রকাশ বললো, এটা তুফান গিরি। এখানে বৃষ্টির সময় ৫টি ঝরনা থেকে এক সাথে তুফানের মত অবস্থা তৈরি হয়।
 
নাফাকুম যাওয়ার মুখ দেখা গেল এবার। প্রশস্ত জায়গায় পাঁচটি ধাপে পানি নামছে। পানি নামার জায়গাটিতে গভীর পাক।
 
নেফাকুম যাওয়ার জন্য সামনে রেমাক্রি বাজার থেকে ছোট নৌকা নেওয়ার কথা, কিন্তু না পাওয়ায় ওই নৌকা নিয়ে যাত্রার সিদ্ধান্ত হলো। সঙ্গে পাঁচশ’ টাকায় যোগ হলো সুমন মারমা।
 
৯টা ৫০ মিনিটে নাফাকুম মুখে প্রবল স্রোতের বিপরীতে পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে সাতজনে মিলে টেনে তোলা হলো নৌকা। সাঙ্গু থেকে আরও বেশি স্রোত। সাড়ে ১০টায় নৌকা থামলো। সুমন বললো, হেঁটে যেতে হবে। নদী ও পাহাড়ের গা বেয়ে ১০ মিনিটের মাথায় পাহাড়ি রাস্তা শেষ, এবার সাঁতার।
 
দুই গাইড জামাকাপড়-মোবাইল এক হাতে নিয়ে সামনে, আর আমরা তার পিছে। স্রোতের কারণে পিছিয়ে যেতে হলো কয়েক হাত। আরও এক ঘণ্টা হেঁটে পৌনে ১২টায় নাফাকুম।
 
প্রায় ৩০ ফুট উপর থেকে পড়ছে পানি, ধোয়ার মত জলাকণা উড়ছে। সামনে পাথর পিচ্ছিল। বিপদজনক। পাথরের মধ্যে হঠাৎ গর্ত, সেখানে মাছ (পাহাড়ি ভাষায় নাফ) লাফিয়ে উঠে ডিম পাড়তো বলে তার নাম নাফাকুম, জানালো সুমন ও প্রকাশ।
 
রেমাক্রি বাজারে প্রথম নেমে অর্ডার দিয়ে রাখা খাবার খেয়ে নৌকা চললো থানচি পথে। এবার স্রোতের দিকে যেতে যেতে বিপদজনক মোড় ফেলে বিকাল চারটার পর নৌকা থামলো থানচি ঘাট।

কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন:
চান্দের গাড়ি বা বাসে করে বান্দরবান থেকে থানচির দূরত্ব ৭৯ কিলোমিটার। বাসে জনপ্রতি ভাড়া দু’শ টাকা দলবদ্ধ হয়ে চার-পাঁচ হাজারে ভাড়া করা যাবে চান্দের গাড়ি। পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর।
 
থানচি সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যাবে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়। থানচি থেকে হাজার টাকায় সঙ্গে নিতে হবে একজন গাইড। যাওয়ার আগে ও আসার পরে স্থানীয় থানা ও বিজিবির কাছে রিপোর্ট করতে হবে পর্যটকদের। থানচি ও রেমাক্রী বাজারে মিলবে খাবার। ফিরে এসে থানচি সদরে স্বল্পমূল্যের কিছু হোটেল আছে। রয়েছে বিজিবির ‘সীমান্ত অবকাশ’। আর রেমাক্রীতে স্বল্প মূল্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।  

আরও পড়ুন-

** পথে পথে 'ডিম্ব পাথর'
** সাঙ্গুর বাঁকে 'ডিম’ পাহাড়ে, বিকেলেই সূর্য ডুবে!
** দুর্গম পাহাড়ের আড়ালে অপূর্ব দু’টি ঝরনা
** লেকের ধারে পাহাড়পাড়া, মেঘের কোলে স্বর্গীয় লীলাভূমি!
** ঝরনায় ফেলছে বোতল-প্লাস্টিক, দেখার নেই কেউ?
** টাকার গাছ!
** পাহাড়ি ঝরনায় পর্যটকের সঙ্গী যখন মুলি বাঁশ
** পাহাড়িদের প্রিয় খাবার নাপ্পি’র সাতকাহন
** সাদা রঙের হলুদ আর আদা ফুল অনন্য, পর্যটকের কাছেও আকর্ষণীয়
**  ভরা মৌসুমে পর্যটক টানছে পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি
** পাহাড়ে উদ্ভাবিত ফলের জাত ছড়াচ্ছে সারাদেশে
** ওয়ান স্টপ সার্ভিসের প্রস্তুতি নিচ্ছে বান্দরবান পুলিশ

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ