ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কেন যাবেন মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
কেন যাবেন মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র (বান্দরবান) ঘুরে: টিলার গা বেয়ে এঁকেবেঁকে তেল চিকচিকে একটি সড়ক পৌঁছে গেছে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে। শহর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার।


 
প্রধান ফটক থেকেই চোখে পড়বে বিশাল লেক। সেই লেকের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে নানান ডিজাইনের নৌকা। যেখানে খুবই স্বল্প খরচে মনের আয়েশে পানিতে ভেসে বেড়ানো যায়। অনেক লেকেই নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে।
সেখানে দেখা যাবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ নৌ ভ্রমনের আনন্দ বিষাদে পরিণত করে। নৌ ভ্রমনের যে অনুভূতি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তা পাওয়া যায় না।
কিন্তু মেঘলায় পানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই আপনার কানে আসবে না। বর্ণিল সব নৌকা চলে ব্যাটারীতে। এ কারণে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আপনাকে হিরন্ময় নিরবতার অনুভূতি যোগাবে।
 
বিশাল আকৃতির লেকের পরে তিন’শ ফুট উঁচু পাহাড়। যে কারণে বাইরে চলাচলকারি যানবাহনের শব্দ আপনার শ্রবণ ইন্দ্রিয়র প্রশান্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
 
দূষনমুক্ত এই লেকে চলার সময় দেখতে পাবেন নানান জাতের জলজ পাখির খেলা। মাথার উপর গাছের ডাল পানি ছুঁই ছুঁই করছে। সে সব গাছে কাঠ বিড়ালীর তিড়িং বিড়িং খেলা ও বিভিন্ন পাখির কলতান সব মিলিয়ে মনমুগ্ধকর পরিবেশ।
 
যখন নৌকায় ঘুরছেন তখন মাথার উপর সাঁই সাঁই করে চলছে ক্যাবল কার। যাতায়াত মিলিয়ে ১৬০০ ফুট দৈঘ্যের এ কেবল কার এক পাহাড় থেকে লেকের উপর দিয়ে অন্য পাহাড় ছুঁয়ে আসা ভ্রমণকারীদের মনে রোমাঞ্চকর অনূভূতির সঞ্চার করতে সক্ষম।
 
পানির দু’শ ফুট ‍উপরে দিয়ে ক্যাবল কারে যাতায়াতের সময় শূণ্যে ভেসে থাকার দারুন এক অনূভুতির সৃষ্টি করবে। কারো কারো মনে কিঞ্চিত ভীতিও সঞ্চার করতে সক্ষম ক্যাবল কার।
 
রাজধানী ঢাকা থেকে ঘুরতে আসে মান্নান-মমতাজ দম্পতি বাংলানিউজকে জানান, কেবল কার খুবই উপভোগ্য। তবে এর দৈর্ঘ আরও বাড়ানো দরকার। যার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে।
 
আয়তনের দিক থেকে খুব বেশি বড় নয়, আবার ছোটও বলা যাবে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। তবে বেশ পরিপাটি। বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড় বেষ্টিত এই পর্যটন কেন্দ্রে নানামূখী বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
 
প্রধান ফটক থেকে কংক্রিটের ঢালু ওয়ার্কওয়ে দিয়ে নেমে গেলেই সামনে পড়বে পিকনিক স্পট। সেখানে রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। শব্দ দুষণ না করে চালিয়ে নিতে পারবেন শিক্ষা সফর অথবা পিকনিকের অনুষ্ঠানাদি।
 
পিকনিক স্পটের পাশেই রয়েছে শিশু পার্ক। যেখানে শিশুদের মাতিয়ে রাখার জন্য রয়েছে নানাবিধ বন্দোবস্ত। শিশু পার্ক সংলগ্ন  লেকের উপর ঝুকে রয়েছে রেষ্ট হাউস। যার বারান্দায় বসে চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবেন চাঁদনী অথবা অমাবশ্যার রাত।  
 
তখন লেকের স্বচ্ছ জলের শীতল হাওয়া অন্যরকম ভালো লাগার পরশে জুড়িয়ে দিয়ে যাবে মন। যান্ত্রিকতা সেখানে কোন ভাবেই বাদ সাধবে না।
 
পিকনিক স্পটের দুইদিকে রয়েছে দু’টি ঝুলন্ত বীজ। একটি দিয়ে পার হয়ে ওই পারের টিলায় অবস্থিত মিনি সাফারী পার্ক, চিড়িয়াখানা ঘুরে আরেকটি সেতু দিয়ে পার হয়ে আসা যায়।
 
নান্দনিক এসব ঝুলন্ত ব্রীজ খুবই উপভোগ্য। দোলনার মতো দুলুনী আপনার মনকেও দোলা দিয়ে যাবে। ঠিক মাঝামাঝি পৌছে গেলে মনে হবে এই বুঝি টুপ করে খসে পড়বে পানিতে। কিন্তু না, কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিলেও দুই দিকের শক্ত বাঁধন ঠিকই আগলে রাখবে আপনাকে।
 
টিলাগুলো বাহারী বৃক্ষে আচ্ছাদিত। জেলা প্রশাসন নতুন করে আরও বৃক্ষ লাগিয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রটির আরেকটি উপভোগ্য বিষয় রয়েছে তা হচ্ছে তাজা ফলের দোকান। যেখানে পেপে, কলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আনারস, মাল্টা পাবেন একেবারে টাটকা। সামনে বেঞ্চ পাতা তাতে বসে স্বল্পমূল্যে পাহাড়ী সতেজ ফলে উদরপুর্তি করতে পারেন।
 
বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামগামী সড়কের পাশে পড়বে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। জনশ্রুতি রয়েছে এটি হচ্ছে এই সময়ে দেশের সবচেয়ে সুন্দর সড়ক। দেখতে যেমন সুন্দর তেল চিকচিকে তেমনি ভয়ঙ্করও। রাস্তার বিশাল বিশাল বাঁক দশ গজ দূরে কিছু দেখা যায় না। যে কারণে বাঁকগুলোতে বড় বড় লুকিং গ্লাস লাগানো হয়েছে। এই সড়কে বাঁকে বাঁকে যানবাহনের অনুমোদিত গতি মাত্র ৫ কিলোমিটার।
 
জেলা প্রশাসন পরিচালিত এই পর্যটন কেন্দ্রটির সবকিছুই সুন্দর হলেও। দর্শনার্থীদের আচরণ মনটাকে খানিকটা বিষিয়ে দিয়ে যায়। বিভিন্ন পয়েন্টে ডাস্টবিন দেওয়া রয়েছে। চানাচুর-চিপসের ঠোঙ্গা ফেলার জন্য। কিন্তু তাতে ময়লা ফেলার দিকে মনোযোগ নেই অনেকের। ডাস্টবিনের ঠিক একহাত দূরত্বে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানির খালি বোতল।
 
মেঘলা পর‌্যটন কেন্দ্র আরও শ্রীবৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এই কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন নেজারত ডেপুটি কালেকটর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ। (চলবে)

** ‘ভাবার লোকদের তো সমস্যা নেই’
** ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে
** খাগড়াছড়িকে পাহাড়ের সঙ্গে মেলালে ভুল হবে
** হ্রদে ছয় ঘণ্টা রোমাঞ্চকর নৌ ভ্রমণ, ১৪০ টাকায়

 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এসআই/এমআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ