ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকছড়ি বাজার ঘুরে (খাগড়াছড়ি): চারদিকে উঁচু নিচু পাহাড়ের বেষ্টনী। রয়েছে ছোট-ছোট পাহাড়ি ছড়া, কোথাওবা ছোট পুকুর।

এসব পুকুরে মাছ চাষ করছেন কেউ কেউ।

মাঝখান দিয়ে ভাঙাচোরা সড়কের দু’ধারে গড়ে উঠেছে দোকান-পাট। ব্যবসাও বেশ জমজমাট।

আর খানাখন্দে ভরা সড়ক ধরে কট কট শব্দে যাত্রী কিংবা মালবোঝাই করে কোনো দূর পাহাড়ি গ্রামের পথ ছুটেছে চাঁদের গাড়িগুলো।

দৃশ্যপটটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির একটি গ্রাম্য বাজারের, নাম মানিকছড়ি বাজার। পাহাড় এবং সমতলে বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজির জন্য এ বাজারের নাম রয়েছে।

সাপ্তাহিক হাট শনিবার বসলেও প্রতিদিন সকাল-বিকেল লোকারণ্য হয় এখানে। পাওয়া যায় বরবটি, করলা, কাঁকরোল, বেগুন, পেঁপে, মরিচ- আরও দেশীয় অনেক সবজি।

দোকানে মেলে কাউনি, পাহাড়ে উৎপাদিত দেশীয় আনারস, ইক্ষু, কমলা লেবু এমনকি মাল্টাও। তবে ফলগুলো তুলনামূলক কম মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় বাইরে থেকে আমদানি ফলেই বেশি আগ্রহ ক্রেতাদের।

আবার এ সংখ্যা যে খুব বেশি তা-ও নয়, বললেন ব্যবসায়ী আবদুল মমিনের কথায়।

“মিষ্টি কম হলেও আমরা তাজা শাক-সবজি কিংবা ফলই কিনি। এগুলো দামে যেমন সস্তা তেমন রাসায়নিক সার-কীটনাশক মুক্ত”।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকরা এলেও এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজি-ফল কিনে নিয়ে যান। এখানকার কচু এবং কাউন বিখ্যাত, তাদেরও পছন্দ।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মংপ্রু বলেন, এখানে বিভিন্ন দোকানে আদিবাসীদের তৈরি কাপড় পর্যটকদের মন কাড়ে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচাবাজার, মাছ বাজারে স্থানীয় পণ্যই বেশি। তবে রয়েছে বাইরে থেকে আসা পণ্যও। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম।

‘দাম কম হওয়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ঝোঁক এসব সবজিতেই বেশি’ বলছিলেন সবজি বিক্রেতা আবদুল আলীম।

খাগড়াছড়ির আট উপজেলার মধ্যে সর্পিল পাহাড়ি সড়কের পাশে অবস্থিত একটি উপজেলা হলো মানিকছড়ি। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশেই মানিকছড়ির বাজারটি। তবে আদর্শ উপজেলা সাপেক্ষে এখানে সেভাবে ঘোরেনি উন্নয়নের চাকা।

শতবর্ষী এ বাজারের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। বাজারের ভেতরের মূল সড়কটির অবস্থাও নাজুক।

একই অবস্থা রাজা মংপ্রু সাইনের বাড়ির রাস্তারও। স্থানীয় রাজমিস্ত্রী মো. মুন্সী মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেন, কিন্তু আমাদের সড়কের কোনো উন্নতি হয় ন‍া। প্রতিদিনই ছোট ছোট দুর্ঘটনায় পড়ে যানবাহনগুলো।

ফুলঝাড়ু বিক্রেতা রহমত আলী শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বাংলানিউজকে বললেন, মানিকছড়ি এ অঞ্চলের বিখ্যাত বাজার। আগে দূর-দূরান্ত থেকে জুমের ফসল নিয়ে আসতেন পাহাড়ি-বাঙালিরা। তবে এখন পাশের তিনটহরী বাজার হওয়ায় এটা কিছু কম জমে।

‘তিনটহরী থেকে প্রতিদিনই তাজা শাক-সবজি চট্টগ্রাম-ঢাকায় যায়’ যোগ করেন তিনি।

পাহাড়-নদীতে অপরূপ খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আরও দুই পার্বত্য জেলা থেকে কৃষি ক্ষেত্রেও বেশ সমৃদ্ধ এ জনপদ। স্থানীয়রা এক সময় শুধু জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও এখন নানামুখী উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছেন।

বাড়ছে ফলদ ও বনজ বাগান আর আদা, হলুদসহ বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসল তো আছেই।

স্থানীয় সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, এখানে ১১০০ হেক্টর জমিতে ১৪,০০০ মেট্রিকটন আদা ও হুলুদ উৎপাদন হয়। আর বাঁশ ও বেতে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরে বিভিন্ন জেলার বাজারেও যায়।

ঢাকা থেকে ২৭৭ কিলোমিটার দূরের এ শহরে আসে শান্তি পরিবহন, সেন্ট মার্টিন পরিবহনের বাস। যেকোনো বাসে বা ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নেমে অক্সিজেন মোড় থেকে বাসে খাগড়াছড়ি আসা যায়। রয়েছে স্থানীয় চাঁদের গাড়িও।

** খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এমএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ