ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পাহাড়ে উদ্ভাবিত ফলের জাত ছড়াচ্ছে সারাদেশে

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
পাহাড়ে উদ্ভাবিত ফলের জাত ছড়াচ্ছে সারাদেশে ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি থেকে: লোকমুখে অতি পরিচিত নাম ‘সবুজ মাল্টা’, যার আনুষ্ঠানিক নাম ‘বারি মাল্টা-১’। পাঁচ বছর আগে পাহাড়ের গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত এই ফলটির কদরও তুঙ্গে।

পাহাড়ে আসা পর্যটকদের হাত ধরে টক-মিষ্টি স্বাদের গোলাকার ফলটি এখন পাহাড়ের সীমানা পেরিয়ে পাওয়া যাচ্ছে সারাদেশে।

পাহাড়-টিলা ঘেরা শ্যামল-স্নিগ্ধ জেলা খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত শুধু মাল্টাই নয়, এমন অনেক ফল নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে আসছে সফলতা। চাষ যাচ্ছে কৃষকের হাতে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, পাহাড়িদের চাহিদা উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি পরামর্শ দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

উঁচু-নিচু টিলা, লেক এবং সবুজের সমারোহে আচ্ছাদিত এই কেন্দ্রটি দেশ-বিদেশ থেকে আশা পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয়।

পর্যটনের ভরা মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোণার মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম রহমান।
 
খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা রোডে পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানের নানা দিক তুলে ধরে উদ্ভাবিত ফলের জাত সম্পর্কে কথা বলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

জনপ্রিয় হচ্ছে মিশ্র ফল চাষাবাদ
কৃষি জমির স্বল্পতা পাহাড়িরা এক জায়গায় কোনো ফলের চারা রোপণ করলে আর ফসল বা ফল চাষ করতে পারতেন না। এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবন করেছে মিশ্র ফল চাষাবাদ পদ্ধতি।
 
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, কোন সময়ে কোন ফল ফলালে কৃষক লাভবান হয় সেটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। গবেষণা করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী ফল লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
 
শুধু আমবাগান করলে ৪/৫ বছর পর ফল পাওয়া যায়, কিন্তু জমি আর ব্যবহার করা যায় না। তাই একই জমিতে পর্যায়ক্রমে আনারস, এরপর লেবু, পেয়ারা, লিচু, আম, কাঁঠাল লাগালে লাভবান হওয়া যায়।
 
পাহাড়ের উপযোগী আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা, লেবু, আনারস, মাল্টাসহ নানা ফল নিয়ে গবেষণা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
 
বারি লিচু-৫
সাধারণ মৌসুমের ১৫ দিন পরও পাওয়া যাবে এই কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত লিচু। অন্য লিচু এক বোঁটায় একটি ধরলেও বারি-৫ লিচু এক থোকায় ধরছে অনেকগুলো। এই লিচুর জাত গবেষণার মধ্যে থাকলেও শিগগিরই তা উন্মুক্ত করা হবে।

কাজু বাদাম
স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এই জাতের বাদাম ব্যাপকভাবে চাষাবাদের জন্য গবেষণা করছে পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। তবে এই জাতের কাজু বাদাম উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত কেমিকেল থাকে যাতে হাত পুড়ে যায়। ফলে পরিশোধন করার কাজ করছেন কর্মকর্তারা, যা সফল হলে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে কৃষক।

কফি
কফি নিয়েও গবেষণা কাজ করছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। এখানে প্রায় ২০০’র মতো পাহাড়ি কফি গাছ আছে। এ বছর অন্তত ৩/৪ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করলে আগামীতে পাহাড়ে চাষের জন্য ভালো সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।

ড্রাগন ফল
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রবেশ মুখের কাছে দু’টি ড্রাগন ফলের গাছ। দু’টি গাছে লাল বর্ণের বেশ কয়েকটি ফল। এখানে লাল, সাদা ও পিংক রঙের সুস্বাদু ড্রাগন ফল নিয়ে হচ্ছে গবেষণা। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই ফল হয়। এ বছর ৩০টি চারা বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান গোলাম রহমান।  
 
পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদের জন্য জালালি ও কলম্ব লেবু নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে জানিয়ে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, এটি সফল হলে ভালো ফলন হবে বলে আশা করি।

কৃষকের সেবায় বাতিঘর
১৯৮৪ সালে ২৩০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত পাহাড়ি অঞ্চলের উপযোগী বিভিন্ন সবজি ও ফলের উন্নত জাত সম্পর্কে জানা;  বিভিন্ন ফলের উন্নত চারা বা কলম বিক্রয় ও বিতরণ; পাহাড়ি এলাকার উপযোগী প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা; পোকা মাকড় ও রোগবালাই সম্পর্কে কৃষকের বিভিন্ন সমস্যার সামাধান এবং কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে এই গবেষণা কেন্দ্র।
 
জুম চাষ প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং লাভ কম হওয়ায় পাহাড়িরা কৃষি গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত জাত ও পদ্ধতি গ্রহণ করছেন বলে জানালেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
 
বর্তমানে তিন জন কর্মকর্তা, ৪৫ জন কর্মচারীসহ ১০১ জন শ্রমিক নিয়ে এই গবেষণাগার পরিচালিত হচ্ছে।

**  ভরা মৌসুমে পর্যটক টানছে পাহাড় ঘেরা খাগড়াছড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ