ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা ছবি: শুভ্রনীল সাগর

শ্রীমঙ্গল থেকে: সাংবাদিক পরিচয় জেনে চা বাগানের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার ঢুকতেই দেবেন না। জোন ইনচার্জকে কড়া নির্দেশ দিলেন, কোনোভাবেই সাংবাদিককে যেন তার নম্বর না দেওয়া হয়।

বললাম, কথা বলি। বুঝিয়ে বলছি। হতদরিদ্র শ্রমিক বেচারা পড়ে গেছেন বড় দোটানায়। কর্তাবাবু তো নির্দেশ দিয়েই খালাস, এদিকে সাংবাদিকের অনুরোধ কীভাবে ফেলবেন। তার ওপর ঢাকা থেকে এসেছি। সবমিলিয়ে যথেষ্ট লজ্জিতও বটে। শেষে এক শ্রমিক নেতাকে ফোন করে অবরোধ উঠলো।

এতোদূর এসে যজ্ঞকুণ্ডের ধারা না দেখে ফিরে গেলে অতৃপ্তি থেকে যাবে। অতৃপ্ত আত্মা বড় ভয়ঙ্কর জিনিস। যাইহোক, যজ্ঞকুণ্ডের ধারা নামটির মধ্যেই কী রকম একটা ‘সিরিয়াস ও রহস্যময়’ ব্যাপার রয়েছে। সেইসঙ্গে কৌত‍ূহল উদ্দীপকও।

যজ্ঞকুণ্ড সম্পর্কে জানতে গিয়ে তথ্য তেমন মিললো না। তবে একটি মিথ খুঁজে পাওয়া গেলো, শ্রীমঙ্গলের কালাপুরে প্রাচীন চৌতলীতে দেবস্থান নির্মাণ করে অনন্ত নারায়ণ দেবতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। দেবতা প্রতিষ্ঠাকালে বিরাট যজ্ঞ স্থানকে পরিষ্কার করে যে পয়ঃপ্রণালী সৃষ্টি হয়েছিল সেই স্রোতধারা একটি পাহাড়ি নদীর আকার ধারণ করে। যা আজও যজ্ঞছড়া বা জাগছড়া নামে খ্যাত। এই জাগছড়ায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ ধারার নামকরণ  হয়েছে ‘যজ্ঞকুণ্ডের ধারা’।

আবার এ ধারাটি এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে জাগছড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে। যেখানে কুণ্ডের উৎপত্তি সেখানে যাওয়াও বেশ দূরহ। প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাহাড়ি চড়াই-উৎরাই মেঠোপথ। সদ্যলব্ধ অভিজ্ঞতা বলছে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলই এই রাস্তার জন্য ভালো। তবে বর্ষাকালে হয়ে ওঠে আরও দুর্গম। গন্তব্যে পৌঁছাতে পথের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্তত আট-নয়জনকে জিজ্ঞেস করতে হলো। তাতে বোঝা গেলো, এখানকার স্থানীয় শ্রমিকদের সাহায্য ছাড়া যজ্ঞকুণ্ডের সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। শ্রীমঙ্গল সদর থেকে মৌলভীবাজার রোড হয়ে কাকিয়া বাজার নেমে অথবা শহর থেকে ভাড়াউড়া চা বাগান হয়ে জাগছড়া চা বাগানের অনেক ভেতরে গিয়ে এর দেখা মিলবে। যেতে হলে জাগছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। এসব কিছু স্বীকার করে যারা যান, তারা হয়তো পূণ্যস্থান ধরেই পরিদর্শন করেন।

হয়তো লিখলাম এ কারণে, আষাঢ়স্য শেষ দিবসের (শুক্রবার, ১৬ জুলাই) অপরাহ্নে কোনো দর্শনার্থী দেখা মেলেনি। খোলাচোখে, যজ্ঞকুণ্ডের ধারা পাহাড়ি আর পাঁচটি ছড়ার মতোই। বাঁক নেওয়ার স্থানে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডলী পাঁকানো স্রোত। সেক্ষেত্রে অন্য পাঁচটি ছড়া থেকে আলাদা হতে হলে ওই মিথকে মানতে হয়। দর্শনার্থী তো নেই, তাই মিথের বিষয়টি সুরাহা করতে থামালাম লিটন কালিন্দীকে। বছর ত্রিশের লিটন জাগছড়া চা বাগানেরই শ্রমিক।

তিনি জানালেন, মাঝে মাঝে লোকজন গাড়ি নিয়ে আসে। ওই ঝরনা দেখে চলে যায়। মিথের বিষয়টি নিয়ে তার কোনো ধারণা নেই। কাজেই দর্শনার্থীরা পূণ্যস্থান ধরে এখানে আসে কিনা এ বিষয়েও কিছু জানাতে পারলেন না।

এদিক-ওদিক চেয়ে, চা বাগান আর উড়ো মেঘ দেখে অগত্যা ধরতে হলো ফেরার পথ। পেছনে কল-কল শব্দে বয়ে চলেছে যজ্ঞকুণ্ডের রহস্যধারা!

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এসএনএস/টিআই

আরও পড়ুন...

*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ