ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-২)

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-২) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্টিন ঘুরে: দ্বীপের প্রধান সড়কটি একেবারেই সরু। একসঙ্গে দু’টি গাড়ি চলাচল করা বেশ কঠিন।

তাতে অবশ্য স্থানীয়দের কিছু যায় আসে না। কারণ সেখানে যে কোনো গাড়িই নেই।

দু’দিন অবস্থান করে একটি মাত্র মোটর বাইকের দেখা মিলেছে দ্বীপে। গাড়ি নিয়ে তারা করবেন কী? দৈর্ঘ্যে (উত্তর-দক্ষিণে) মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার। প্রস্থে (পূর্ব পশ্চিমে) মাত্র দুই কিলোমিটার। দ্বীপটির প্রধান বাহন ছাদওয়ালা ভ্যানগাড়ি। ভ্যানগুলোতে লেগুনার মতো তিনদিকে গদি বসানো হয়েছে। মাত্র চারটি পাকা রাস্তা রয়েছে কংক্রিটের তৈরি। যার দু’টি এলজিইডির অধীনে আর দু’টি করেছে ৬ নম্বর সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ।

রাস্তাগুলো প্রায় ৩ ফুটের মতো উঁচু। দেখতে খানিকটা শানবাঁধানো মাছ বাজারের মতো।
প্রধান সড়কটি থেকে অনেকগুলো সরু গলি গিয়ে মিশেছে সমুদ্র সৈকতে। কোথাও এমনই সরু যে দু’জন মানুষ পাশাপাশি হাঁটাও প্রায় অসম্ভব।

প্রধান সড়কটি যেমন অপরিচ্ছন্ন, গলির রাস্তাগুলো তেমনি বেহাল। মনে হবে কোনোদিনই ঝাড়ু পড়েনি। বাজারজুড়ে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।

দ্বীপের প‍ূর্ব দিকে রয়েছে জেটির টিকিট কাউন্টার, এরপরই বেশ কিছু শুটকির দোকান। তবে সেখানে ‘সেন্টমার্টিন শুটকি বিতান’র চারপাশ কিছুটা পরিষ্কার দেখা গেলো।

দোকান মালিক জুবায়ের হাসান জানালেন, তারা দিনে দু’বেলা দোকানের আশপাশে ঝাড়ু দেন। পরে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু অন্যান্যরা নিজের দোকানের সব ময়লা ঠেলে রাস্তার ওপর ‘চালান’ করে দেন।

যেকোনো পর্যটকের প্রথমে নজরে আসবে এই জায়গাটিই। জেটি থেকে সেন্টমার্টিনে প্রবেশের আর কোনো বিকল্প পথ নেই। সেই প্রবেশদ্বারের এই বেহাল দশা!

৫০ গজ দূরে হক সুপার মার্কেট। সেমিপাকা ঘরগুলোর আশপাশে ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাজার বলতে যা বোঝায়, তা হলো সুপার মার্কেট এলাকাটিকে। এরপর রয়েছে কিছু সবজির দোকান, খাবার হোটেল, মুদি ও ওষুধের দোকান।    

বাজার থেকে তিন দিকে তিনটি রাস্তা চলে গেছে। পশ্চিমের রাস্তাটি প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘সমুদ্র বিলাস রিসোর্টে’র ২০০ গজ দূর দিয়ে সামান্য দক্ষিণে বাক নিয়ে পশ্চিম সৈকতের কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়েছে।

বামের রাস্ত সোজা চলে গেছে দক্ষিণে অবস্থিত নৌ-বাহিনীর ক্যাম্পে। নেভি সড়ক নামে পরিচিত রাস্তাটিতে ময়লা তুলনামূলক কম থাকলেও দু’পাশেই দেখা গেল আবর্জনার স্তূপ।
বাজার থেকে নেভি রোড ধরে একটু এগিয়ে গেলেই মুদি দোকান মৌলভী স্টোর। দোকানের সঙ্গে লাগোয়া বিশাল ময়লার স্তুপ। পরিষ্কার যে হয় না তা দেখেই বোঝা যায়।
 
দোকানের স্বত্বাধিকারী মৌলভী হামিদ চৌধুরী বলেন, দোকানের বারান্দা ঝাড়ু দিয়ে এইখানেই ময়লা ফেলি। সেই ময়লা জমে স্তূপ হয়ে গেছে।

নেভি সড়কের মাঝামাঝি থেকে একটি সরু গলি নেমে গেছে পশ্চিমে মধ্যপাড়া সৈকতে। যাওয়ার পথেই পড়বে সবুজ কানন রিসোর্টসহ অনেকগুলো কটেজ।

সবুজ কানন রিসোর্টের ভেতরটা বেশ সৌন্দর্যমণ্ডিত।  গোছানোও। কিন্তু মূল ফটকটির সঙ্গেই আছে ময়লার স্তূপ। বাজার থেকে পশ্চিমে চলে যাওয়া সড়কটি দিয়ে এগোলে সেন্টমার্টিন বিএন ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এরপর সেন্টমার্টিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকঘর, লাইট হাউসসহ বেশ কিছু সরকারি স্থাপনা চোখে পড়বে।

বিদ্যু‍ৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি কটেজ ও রেস্ট হাউস রয়েছে সেখানে। যার ভাড়াও তুলনামূলক কম।

দ্বীপটি যেহেতু উত্তর-দক্ষিণে প্রশস্ত সে কারণে প‍ূর্ব-পশ্চিমে যে কোনো রাস্তা অথবা গলি ধরে হাঁটা দিলেই ১০ মিনিটে সৈকতে পৌঁছে যাওয়া যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কটেজ কিংবা রিসোর্টগুলো ছাড়া তেমন আর পাকা বাড়ি নেই।

বেশিরভাগ ঘরবাড়িই ছন দিয়ে তৈরি। বেড়ায় ছনের ওপর দিয়ে কালো পলিথিন ও পরিত্যক্ত জাল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। হিমেল হাওয়া বা পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতেই এ ব্যবস্থা বলে জানা গেল।

দ্বীপে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রভাবই বেশ বেশি। ছোট মেয়ে শিশুরা হিজাব আর বড়রা বোরকা পড়ে বের হন বাড়ি থেকে। পুরুষরাও বেশ ধর্মপ্রাণ।

দেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপে সব পণ্যের মূল্যও বেশি। মোড়কের গায়ে লেখা দামে এখানে কিছুই পাওয়া যায় না। তবে কেনাকাটার সময় দেখে-শুনে ও একটু দরদাম করে নিলেই ভালো।

চারপাশে সৈকতবেষ্টিত সেন্টমার্টিনে ইচ্ছে করলে পায়ে হেঁটেও চক্কর দিয়ে আসা যায়। এ জন্য বিকেলের দিকটা উপযুক্ত সময়। তখন থাকে ভাঁটার টান, অনেক বিস্তৃত সৈকতে হেঁটে বেশ আনন্দ পাওয়া যাবে। দেখতে পাবেন নীলাভ পানির মোহনীয় দৃশ্যও।

চক্করের শুরুটা যেনো প‍ূর্বদিকে জেটি থেকে হয়। তাহলে স‍ূর্যাস্তের সময় ভ্রমণপিপাসুর অবস্থান হবে পশ্চিম দিকের সৈকতে। এতে গোধুলী লগ্ন, শব্দদূষণ মুক্ত প্রকৃতিতে সমুদ্রের গর্জন, কাঁকড়ার আল্পনা সবই উপভোগ করা যাবে।

কিছু দ‍ূর হাঁটার পর ক্লান্তি লাগলেও সমস্যা নেই। তীরে গিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে হোটেল কিংবা রিসোর্টে ফেরা যাবে। সে ক্ষেত্রে খুব বেশি হলে ৪০ থেকে ৫০ টাকা খরচ পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
এসআই/এমএ

**সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-১)
** কুকুর যখন ‘টুনা’ শিকারি
** ‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’
** তৈরি হচ্ছে ‘বিচ ডাটাবেজ’
** সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা
** সেন্টমার্টিনে বাজার সদাইয়ের সংগ্রাম (ভিডিওসহ)
** সৈকতের আল্পনাশিল্পীদের করুণ মৃত্যুগাথা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ