ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বরিশাল ছুঁয়ে সুগন্ধার পথে

জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
বরিশাল ছুঁয়ে সুগন্ধার পথে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশালের কীর্ত্তনখোলা থেকে: মেঘনার মাতাল হাওয়ায় উবে গেলো রাত জাগার ক্লান্তি। গতরাতে কুয়াশার দাপট ছিলো না বটে, কিন্তু সকাল ৯টা অবধি সূর্যকে আড়ালে রাখলো ওই কুয়াশাই।

বেরসিক কুয়াশা আর মেঘের বাগড়ায় সূর্যটা এই উঁকি দেয়, তো ফের হারিয়ে যায় ঘন সাদা চাদরের আড়ালে।

ভোর ছ’টা থেকে কফি-চায়ের আড্ডা জমে গেছে উপরের তলার লাউঞ্জে। সুন্দরবনের খাঁটি মধু দিয়ে পরোটা খাওয়ার স্মরণীয় অভিজ্ঞতাটা হলো নাস্তা খেতে বসে।

কুয়াশা আর মেঘের সঙ্গে যুদ্ধে অবশেষে জয়ী হলো সূর্যই। নদীর রূপালী জল হয়ে উঠলো আরো রূপালী। দু’পাড়ে ঢেউখেলানো সবুজ পাড়ের ওপরেও ঝুলে আছে সাদা পর্দা। সাদা একটা চাদর যেনো বিছিয়ে আছে আকাশেও। রাতভর নিকষ কালোর সঙ্গে দোস্তি গড়ার পর মনটাও এবার সাদা হয়ে গেলো যেনো।

রাতভর মাছ ধরা জেলেরা জাল গুটিয়ে ফিরে গেছে সেই সাত সকালেই। দিনের জেলেরা এখন জাল পাতছে। ছোট ছোট নৌকায় দু’জন করে জেলে। মাছের আশায় সাবধানে টেনে তুলছে সাদা সাদা ফাঁস জাল। সাদার পটভূমিতে সাদারই মিতালী যেনো।

সাগরে জোয়ার এসেছে বুঝি। দলছুট কচুরিপানা উজান বেয়ে ছুটছে। নদী এখানে কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত হলেও গভীরতা কম। মাঝ নদী দিয়ে চলাচলকারী কার্গো জাহাজগুলোকে তাই পানি মেপে চলছে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বারবার নদীর বুকে ঠেকিয়ে তুলে আনা হচ্ছে লাল-সাদা রঙ করা লাঠি।

এদিকে প্রাতরাশের পর উপরতলার লাউঞ্জে শুরু হয়েছে পরিচিতি সভা। কার্যত সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্মশালার প্রথম এই সেশন রূপ নিলো মতবিনিময় সভায়। শুরুতেই আরটিভির নিউজ এডিটর আনোয়ার হক বললেন, ছোট্ট জাহাজ, বিশাল যাত্রা।

এই বিশালতার আভাস দিতেই কি না কে জানে, কেউ কেউ তো ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার স্বত:স্ফূর্ত ঘোষণাই দিয়ে বসলেন।

তারই সূত্র ধরে, এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) কনভেনার লিটন হায়দার বললেন, এই অনুষ্ঠানে এসে অনেকেই সিগারেট ছেড়ে দিচ্ছেন, কেউ নতুন করে ধরছেন না। এটা আশার কথা।

হিজলার সীমানায় এসে বেদনাদায়ক স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন কালের কণ্ঠে’র সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফ। সেই কবে এ নদীতে তলিয়ে গেছে তাদের পৈত্রিক ভিটে। বাপ-দাদার ভিটেটা ঠিক কোথায় ছিলো এখন আর তা ঠাহর করারই জো নেই।

দেখতে দেখতে জাহাজ চলে এলো লোয়ার মেঘনার পতিত মুখে। নাক বরাবর এগুলে সাগরগামী তেঁতুলিয়া নদী। কিন্তু প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে অবসর এগিয়ে গেলো আড়িয়াল খাঁর মুখ হয়ে কীর্ত্তনখোলার দিকে।

এখানে বিশাল এক চর পড়েছে তিন নদীর মোহনায়। দু’পাশ দিয়ে দু’টি সরু চ্যানেল। পাড়ের খুব কাছ দিয়ে এগুতে হলো জাহাজকে।

নদী এখানে ভাঙনপ্রবণ। কম বয়সী চরগুলোতেও ভাঙনের থাবার ছাপ। সবুজ চরে চরছে গরুর পাল। একটা নারকেল গাছ গোড়ার মাটি হারিয়ে পড়ে আছে নদীতে। যেনো মুখ ডুবিয়ে রেখেছে নদীর পানিতে।

চরমোনাই পীরের খানকা বিশাল অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বাঁয়ে। চা বিরতির পর ফের শুরু হলো আলোচনা। প্রজ্ঞার প্রজেক্ট ডিরেক্টর হাসান শাহরিয়ার মালটি মিডিয়া প্রেজেন্টেশনে একে একে তুলে আনতে শুরু করলেন আশা জাগানিয়া সব পরিসংখ্যান।

হাসান শাহরিয়ার দেখালেন, কি হারে ভারী হচ্ছে তামাক বিরোধী খবরের পাল্লা। পরিসংখ্যানে প্রমাণ করলেন, এখন আর তামাক বিরোধী খবর তামাক দিবসের আবহে সীমাবদ্ধ নেই। এখন ইভেন্টের চেয়ে তামাক বিরোধী স্পেশাল রিপোর্ট হচ্ছে বেশি। বছর ‍জুড়েই প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে স্পেশাল রিপোর্ট, মতামত কলাম, এমনকি এডিটোরিয়ালও। টক শোতেও উঠে আসছে তামাক বিরোধী আলোচনা।

যুক্তিনির্ভর আলোচনায় একে একে অংশ নিলেন ঢাকা ট্রিবিউনের নিউজ এডিটর মীর শরিফুল ইসলাম, একাত্তর টিভির চিফ অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর মনির হোসেন, চ্যানেল নাইন এর সিনিয়র নিউজ এডিটর শংকর মৈত্র, সময় টিভির চিফ নিউজ এডিটর জাকারিয়া মুক্তা, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ।

তামাক সেবনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে কার্যকর উপস্থাপনা আনলেন সেন্টার ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) ব্র্যান্ড ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান।

সিটিএফকে এর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিষয়ক সহযোগী পরিচালক আমেরিকান অতিথি ক্লডিও টাংকার বক্তব্যের পর বাজলো মধ্যাহ্নভোজের ঘণ্টা।

এরইমধ্যে হাতের ডানে এসে জুটলো বরিশাল শহর। কীর্ত্তনখোলা নদীর লঞ্চঘাটে নোঙর ফেলে রাখা বিশাল বপুর লঞ্চটার নামও কীর্ত্তনখোলা। তার দু’পাশে বিভিন্ন আকার-আয়তনের নৌযান। ঘাটের পাশে অনেক অস্থায়ী স্থাপনা বাঁশের ওপর ভর করে দিব্যি বসে আছে নদীতে। নদীর ওপরেই টিন-বাঁশের শত শত ঘর। নদীর বুক অনেকটাই ছিনিয়ে নিয়ে গড়ে উঠেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)বরিশাল রেঞ্জ সদর দপ্তর।

এখানে এসে আর এক দফা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন তৌফিক মারুফ। তার মনে ভেসে এলো ছোটবেলায় কলাগাছের ভেলা নিয়ে কীর্ত্তনখোলা পাড়ি দেওয়ার স্মৃতি।

দপদপিয়া সেতু পার হয়ে পটুয়াখালীর দিকে এগিয়ে যাওয়া লোহালিয়াকে বাঁয়ে রেখে সুগন্ধা নদীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো অবসর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
জেডএম/

** নদীর বুকে আলোর ভেংচি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ