ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সৌদি আরব

প্রবাসে বাংলাদেশ

প্রবাসে শ্রমের হাত ছুঁয়েছে বিজয়ের পতাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
প্রবাসে শ্রমের হাত ছুঁয়েছে বিজয়ের পতাকা প্রবাসীর শ্রমের হাত যেন ছুঁয়েছে বিজয়ের পতাকা। ছবি: বাংলানিউজ

হিজরা রোড, মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: প্রতিদিন তার সাথে দেখা হয় পবিত্র নগরীর রাজপথে। মসজিদুল হারামে আসা-যাওয়ার সময় ইবরাহিম খলিল রোড যেখানে হিজরা রোডে পড়েছে, সেখানে তাকে পাওয়া যায় কর্মব্যস্ত অবস্থায়। মৃদু হেসে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। শনিবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে ফেরার সময় দেখা হতেই বললেন, 'স্যার, আজ ১৬ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয় দিবস।' তার কণ্ঠে আবেগ ও উচ্ছ্বাস।

হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, এখানে ভোর ছয়টা বাজে। বাংলাদেশের সময় তখন সকাল ৯টা হয়ে গেছে।

ঢাকাসহ সারাদেশ বিজয়ের আনন্দ-উল্লাসে মাতোয়ারা। কেউ জানলো না, দূর মরুর আরব দেশের পবিত্র মক্কা নগরের একজন বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী কঠোর পরিশ্রমের সময়েও ভুলে যায়নি দেশের কথা। তার স্মরণের আঙিনায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা একাকার হয়ে আছে। মনে হচ্ছে, তার শ্রমের হাত ছুঁয়েছে বিজয়ের গৌরবদীপ্ত পতাকা।

কফিলউদ্দিন নামের এই বাংলাদেশি নগর-পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রহিমা নগর গ্রামে। হিজরা রোডের কিছু এলাকা তার কাজের আওতাধীন। এই হলো ঐতিহাসিক-পুণ্য স্মৃতিময় হিজরা রোড, যে পথে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই পথ পরিচ্ছন্ন করার কাজে ভীষণ খুশি কফিল। মনের আনন্দে কাজকে উপভোগ করেন তিনি।

দু'দণ্ড কথা বলি তার সাথে। দেশের নানা খবরের জন্য মন তার আনচান করে। হাইস্পিড ওয়াইফাই সুলভ হওয়ায় নিজের গ্রামে দ্রুত যোগাযোগ করতে অসুবিধা হয় না তার। 'এ দেশে মোবাইল ফোনে টক টাইমের সাথেও প্রচুর ডাটা দেওয়া হয়। অনলাইনে বাংলাদেশের টিভি, নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে সব খবর পাই আমরা। আজ ১৬ ডিসেম্বর দেশাত্ববোধক গান ও নাটক দেখবো', জানান তিনি।

আলাপকালে তার কাছ থেকে আরও জানা যায়, সৌদিতে কাজের অবসর খুবই কম। ছুটি নেই বললেই চলে।   ডিউটি শেষেও কাজ করতে হয়। পরিবার ও দেশের প্রতি দায়িত্ব কোনও ফুরসত দেয় না প্রবাসে শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের।

পবিত্র মক্কা নগরে মানুষের ভিড়ে নীরবে কাজ করছেন বাংলাদেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী।  ছবি: বাংলানিউজসৌদিতে বিভিন্ন কাজে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত থাকলেও নগর-পরিচ্ছন্নতায় তাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। মক্কা বা মদিনায় আরবি ভাষা না জেনেও যে কোনও বাংলাদেশি এদের কাছ থেকে প্রভূত সাহায্য পান। ঠিকানা হারিয়ে গেলে খুঁজে দিতে কিংবা মালপত্র প্যাকিং করতে ডাক পেলেই ছুটে আসেন এসব প্রবাসী কর্মী। ডিউটির শেষে তারা নানা কাজে লিপ্ত থাকেন আয়-রোজগার বাড়ানোর প্রয়োজনে। টাকা বাঁচাতে একজনের খাবার কিনে দুই-তিনজন ভাগ করে খান। সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতায় একে অপরকে জড়িয়ে রাখেন নিবিড় মায়া আর ভালোবাসায়।

ঊষর মরুর প্রান্তে ঘাম-ঝরানো শ্রমক্লান্ত-প্রবাসী হৃদয় অনাবিল শান্তি পায় বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল স্মৃতিতে। সুদূর বিদেশে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ স্বাধীনতা ও বিজয়ের আনন্দে নেচে ওঠে তাদের মন-প্রাণ। তাদের বুকের গভীর-গহীন থেকে উচ্চারিত 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' ধ্বনিপুঞ্জ যেন স্পর্শ করে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি ও আত্মাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭
এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সৌদি আরব এর সর্বশেষ