ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৪৭
রাজাপুর ( ঝালকাঠি) - বেতাগী ( বরগুনা) - পটুয়াখালী = ৪০. ১২ কি. মি.

কাল শেষ বিকেলে হাঁটা শেষ করেছিলাম ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায়। রাতে থেকেছিলাম পিরোজপুর সদর হাসপাতালে আরিফ ভাইয়ের ডরমিটরিতে।

আজ সকালে রাজাপুর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য আরিফ ভাই আগেই একটা বাইক বলে রেখেছিলেন। আজ আমার সঙ্গী শিবলী ভাই। গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে উনি পিরোজপুর পৌঁছেছেন রাতে। হাঁটা শুরু করলাম সোয়া সাতটা নাগাদ। সেই খোয়া আর মাটি মেশানো রাস্তা। খোয়া জিনিসটা পায়ের নিচে পড়লে হাঁটতে বেশ কষ্ট হয়। ভারসাম্য রক্ষাতেও খানিকটা অসুবিধে হয়। পুরো রাজাপুরেই রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিছুদূর এগিয়েই দক্ষিণ আঙ্গারিয়া। রাস্তার অবস্থা তথৈবচ হলেও পাশের খাল থেকে মাটি তুলে বানানো হচ্ছে ফুটপাত।

রাজাপুরের সকাল। মীরেরহাট থেকে খানিকটা সামনে পুটিয়াখালী। শিবলী ভাইয়ের সঙ্গে গল্পে মশগুল থাকায় রাস্তা ভুল হলো এখানে। আধা কিলোমিটারের মতো অতিরিক্ত হাঁটতে হলো মাশুল হিসেবে। গ্রামের একটা মাটির রাস্তা ধরেই সঠিক পথটা। ঢ্যাঙা সব সুপারি গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে। যেদিকেই তাকাই সেদিকেই ছোট ছোট খাল। এসব খালে পানির প্রবাহও যথেষ্ট। রাস্তার পাশেই মূলত খালগুলো। খালের ওপারে বাড়িগুলোতে যাওয়ার জন্য সুন্দর সব সাঁকো বানানো কিছুদূর পর পর। বাঁশ আর কাঠই মূল উপাদান সাঁকোগুলোর।  

আকনের হাট থেকে পা দিলাম কাঠালিয়া উপজেলায়। বড় একটা খালের পাড়ে সাতানী বাজার। খালটা প্রশস্থতায় উত্তরবঙ্গের অনেক নদীকে হার মানাবে। পশ্চিম ছিটকি বাজারের অবস্থান খালের অন্যপাশে। অন্য ফসলের তুলনায় এদিকটায় ধানক্ষেত সংখ্যায় বেশি। অনেকগুলো জেলাতেই ধান কাটা শেষ হলেও এদিকে এখনো এর কান্ডের গোড়ায় কাস্তে পড়েনি। রাস্তার পাশে আরও কিছু খাল সঙ্গে করে নিয়ে চলে এলাম মুন্সিরাবাদে।

দোলনায় দোলরত দেবশিশু। চলতে চলতেই মনে হলো রাস্তা-ঘাটের দিকে এ দেশের জেলাগুলোর মধ্যে বেশ পিছিয়ে আছে ঝালকাঠি। রাজাপুর থেকে এখনো অবধি একটাও পাকা রাস্তা পাইনি। পায়ের নিচে খোয়ার অবিরাম খোঁচা তো আছেই। শৌলজালিয়ার পরে একটা পিচ রাস্তা দেখে শিবলী ভাই বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না এটা ঝালকাঠির রাস্তা। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম আমাদের যাত্রাপথে এই জেলাতে আর যাই হোক পিচ রাস্তার দেখা হয়তো মিলবে না। এই জায়গাটা ঝালকাঠি জেলার একদম কিনারার দিকে বলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, অন্য জেলার উদ্ধৃত বাজেট হয়তো কেউ দয়াপরবশ হয়ে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছে! পিচ রাস্তার শেষ মাথায় বিষখালী নদী। এখানে নেই কোনো সেতু। ট্রলারই ভরসা।

মিনিট দশেকের অপেক্ষার পরে ছাড়লো ট্রলার। নদীর মাঝামাঝিতে আছে ছোট্ট একটা সবুজ চর। প্রচুর মহিষ চরে বেড়াচ্ছে। নদী পার হয়েই বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা। টিনের তৈরি বাজার মূলত। ঢুকতেই কালীবাড়ী। পায়ের উপর ক্রমাগত অত্যাচারে ইতিমধ্যে সাত-আট জোড়া মোজা ছিঁড়ে গেছে। দুজোড়া মোজা কিনে নিলাম বাজার থেকে। বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের কাছে সুন্দর একটা ভাস্কর্য। সোজা রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পুলেরহাট।

বিষখালী নদীর ওপারেই বরগুনা। পটুয়াখালী জেলার শুরু এখান থেকেই। দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া পার হতেই দু’ ধারে আকাশমণি, শিশু আর খেজুর গাছে রাজত্ব। এক জায়গায় কলাগাছের তৈরি গোলপোস্ট দেখালেন শিবলী ভাই। সুবিদখালী বাজারের কাছেই আরও একটা খাল।

কপালভেড়া নামক জায়গা পেরিয়েই সামনে পায়রা নদী। এ নদী পারাপারের ব্যবস্থা ফেরীতে। বেশ ভালো স্রোত এ নদীতে। নদীর ওপারে পায়রাকুঞ্জ ফেরীঘাট। সদর উপজেলার সীমানা শুরু এখান থেকেই। একদম সোজা একটা সরল বিস্তৃতির রাস্তা ধরেই পথচলা। এ রাস্তাই আমাদের নিয়ে যাবে পটুয়াখালী শহরে। ইটবাড়ীয়া পার হতেই লক্ষ করলাম এদিকের বাড়িগুলো আছে বেশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। গুচ্ছবদ্ধ ব্যাপারটাই নেই। কিছুদূর এগিয়ে সাইনবোর্ডে লেখা পেলাম - ‘এই জমি বিক্রয় করা হবে না। ’ তার নিচে আবার প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য দেওয়া আছে ফোন নম্বর। এটা দিয়ে কী বুঝাতে চেয়েছেন সেটাই বোধগম্য হলো না ।

এই জমি বিক্রি করা হবে না। আরও কিছুক্ষণ হাঁটতেই দূর্গাপুর। এই দেশে সর্বমোট কয়টা দূর্গাপুর আছে সেটা হতে পারে রীতিমতো গবেষণার বিষয়। কালিকাপুর হয়ে পটুয়াখালী চৌরাস্তা খুব বেশি দূরে নয়। আজকের হাঁটা শেষ করলাম পটুয়াখালী শহরে। বন্ধু মণির কাজিন সোহেল ভাইকে ফোন দিতেই উনি সহজে যাবার রাস্তা বাতলে দিলেন।

আরও পড়ুন...
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।