ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫) রেললাইনের পাশ ঘেঁষা সরু পথ

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ১৫

রাজশাহী-নাটোর=৪৩.১৮ কি.মি.

শাহাদাত ভাইয়ের চিলেকোঠার সাজানো রুমটা থেকে যখন পথে নামছি তখন সবে ভোর সাড়ে ৬টা। বেশ কিছুটা পথ আজ একসঙ্গে হাঁটবেন শাহাদাত ভাই।

রেলস্টেশন লাগোয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে শিরোইল কলোনি। পদ্মা আবাসিক নামক গোছানো এলাকার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার পড়লো একটা। শর্টকাট নিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে। গেটের কাছেই অপেক্ষা করছিলেন রাবির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী ভাই। উনি কিছুক্ষণের জন্য সঙ্গী হলেন। হাঁটার সঙ্গীরাবিনোদপুর থেকে সঙ্গী বাড়লো আরেকজন। কান্তির নাটোর পর্যন্ত যাওয়ার নিয়ত। গল্পে গল্পে কিছুটা পথ এগিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে এসে বিদায় নিলেন মেহেদী ভাই। সামনে এগিয়ে দারুণ সমৃদ্ধ একটা ক্রিকেট একাডেমি চোখে পড়লো। বাইরে থেকেই এর জৌলুসের আঁচ পাওয়া গেলো। এখানে অনুশীলনের সুযোগ পাওয়াদের বেশ ভাগ্যবান মনে হলো।

কাটাখালী থানার একদম লাগোয়া দুর্ঘটনা কবলিত একটা ট্রাক দেখলাম। রাস্তার পাশের গাছ উপড়ে নিয়ে পাশের খাদে পড়ে আছে ট্রাক। কাপাসিয়ার পর থেকেই রাস্তার দু'ধারে অনেক খেজুর গাছ। বেলপুকুর রেল গেটের পরে একটা রাস্তা এগিয়েছে বামের দিকে। মহাসড়ক এন ৬০৩ ধরে যাওয়া যায় পাশের জেলা চাঁপাইয়ের দিকে। বানেশ্বর পানের রাস্তা। আমাদের গন্তব্য নাটোর হওয়ায় আমরা সোজা রাস্তায় এন ৬ মহাসড়ক ধরেই চলছি। শাহাদাত ভাই আর কান্তি দুজনেই আইনের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী হওয়ায় এ বিষয়ক প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। ল ক্লিনিক নামক একটা টার্ম শুনে আমি খুবই জিজ্ঞাসু মনে প্রশ্ন করলাম- 'আইন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন কি এই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়?' আমার কৌতূহল নিবৃত্ত করার বদলে কান্তি মেয়েটা রেগে গেলো।

পুল্লা পুকুর অতিক্রম করে বানেশ্বর বাজার আসতেই বিদায় নিলেন শাহাদাত ভাই। উনি বাসে উঠে পড়তেই আমরা একে একে পেরোলাম বড় বাজার, শিবপুর হাট, বিহারীবাজার। কান্তি পাঁচ বছর ধরে ল পড়ছে জেনে আমি বেশ মর্মাহত হলাম। 'ল' বর্ণ পর্যন্ত পড়তেই যদি পাঁচ বছর লেগে যায়, পরবর্তী বর্ণ 'শ' পড়তে কতদিন লেগে যায় কে জানে ইত্যাদি বলে ওকে খ্যাপানো অব্যাহত রাখলাম।

রাস্তায় পড়লো বিড়ালদহ বাজার, মাইপাড়া বাজার। মাইপাড়া বাজার ছাড়িয়ে খানিক গেলেই বিড়ালদহ কলেজ। গত ক'দিনের একটা পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশের সব ডিগ্রি কলেজের নতুন ভবনগুলো দেখতে একই রকম। সাদা, ছাই ও লাল রঙে রাঙানো থাকে চারতলা দালানগুলো। আর এসব ভবনের ছাদ হয় লাল টালির। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের হাওয়াখানা এদিকে সংবলিত একটা সাইনবোর্ড দেখে ওদিকে হাওয়ার চলাচল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না। হাওয়াখানার সাইনবোর্ড চোখে পড়েছিল।  হাওয়াখানার দেখা আর মেলেনি। একটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম পুঠিয়া বাজার। বাজার অতিক্রম করে সামনে যেতেই বাইকার এক ছেলে বাইক থেকে নেমে বললো উনি আমাদেরক সেই শিবপুর হাট থেকে হাঁটতে দেখেছেন। নাটোর পৌঁছালে পচুর হোটেলে চায়ের অগ্রিম দাওয়াত দিয়ে উনি বিদায় নিলেন৷ কাঁঠালবাড়ীয়ার পরে পড়লো ঝলমলিয়া। পরিত্যক্ত একটা রেল সেতু ব্যবহার হতে দেখলাম স্থানীয় লোকেদের কাপড় শুকানোর জায়গা হিসেবে।

সেনভাগ পেরিয়ে গাওপাড়া ঢালান। এখানেই রাজশাহী জেলার শেষ আর একই সঙ্গে শুরু বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি। দস্তানাবাদ তোকিয়া বাজারের পরেই পড়লো ঝিকঝাক অটো ইট ভাটানামক অদ্ভুত নামের এক ভাটা। এদিকের রাস্তায় মরে পড়ে থাকা প্রচুর কুকুর বেশ মনোঃপীড়ার কারণ হলো। বেশিরভাগের মৃত্যুর জন্য গাড়ির বেপরোয়া গতিই দায়ী৷বিদায় রাজশাহী'ও মাই গড' - চিৎকার শুনে আমরা পেছন ফিরতেই একটু আগেই আমাদের অতিক্রম করে যাওয়া দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে মোটরবাইক ঘুরিয়ে আমাদের দিকে আসতে দেখলাম। মুখ খুলতেই জানা গেলো, এরা সকালের দিকে আমাদের রাজশাহীর দিকে দেখেছিল। কেউ হেঁটে এতটা পথ পাড়ি দিচ্ছে এই ব্যাপারটা দেখে তারা তব্দা খেয়ে গেছে একেবারে৷ সুলতানপুর মোড়ের পরেই গোরস্থান বাজার। চাঁদপুর বাজার থেকে সামনে এগিয়েই প্রচুর বালির স্তূপ। এদিকে সবাই নীলফামারীর ডোমারের বালু বিক্রি করছে৷ উত্তরবঙ্গের সব জায়গাতেই এই জায়গার বালুর বেশ কদর দেখে আসছি। একডালার কাছের এক গোরস্থানে সাইনবোর্ড দেখলাম লেখা আছে- ‘গোরস্থানে কবর দেওয়ার সময় পলিথিন ব্যবহার নিষেধ৷’

অল্প এগিয়েই সুগার মিলস। এই অঞ্চলে আরো তিনটে সুগার মিলসের দেখা পেয়েছি। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাটের পরে আজ নাটোরে। আরো অল্প পথ সামনে এগিয়ে নাটোর শহরে ঢোকার মুখের বাইপাস থেকে বিদায় নিল কান্তি। আমার পদযুগলে যাত্রা তখনো অব্যাহত। বনবেলঘড়িয়া, গুড়পট্টি হয়ে চামড়ার বাজার। এত বড় চামড়ার বাজার অন্য কোনো জেলা শহরে চোখে পড়েনি আগে৷। নাটোর বাইপাসের ভাস্কর্যতেবাড়িয়া মোড় পেরিয়ে শহরের মাঝামাঝি পড়লনারদ নদ। নামেই নদ বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। কচুরিপানা আর ময়লারচাপে পিষ্ট নদে পানির দেখা পাওয়াই মেলা ভার। মল্লিকহাটি হয়ে শহরেরমাদ্রাসা মোড়ের দিকে যেতে যেতে একটা জিনিসের অভাববোধ করলাম। সেটা হলো ল্যাম্পপোস্ট। মাদ্রাসা মোড়ে এসে ফোন দিতেই খানিকক্ষণের মধ্যে চলে এলেন সজল ভাই। আজ রাতে ওনার অতিথি আমি। এই শুক্রবারেও ওনাকে স্যুটেড-ব্যুটেড দেখে জিজ্ঞেস করলাম অফিস ছিল কিনা। জবাবে উনি লাজুক হেসে জবাব দিলেন- 'আমি পাত্রী দেখতে গেছিলাম আজ'!

চলবে…

আরও পড়ুন>>>

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)

পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।