ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বেড়ান্যে লেকে কায়াক অ্যাডভেঞ্চার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
বেড়ান্যে লেকে কায়াক অ্যাডভেঞ্চার বেড়ান্যে লেকে কায়াকে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিন তরুণী। ছবি: বাংলানিউজ

বহু দিন ধরেই কায়াকিং করার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগের অভাবে হয়ে উঠছিল না। কাপ্তাইয়ের এক ছোট ভাই হাসান জানাল, বেড়ান্যে লেকে কায়াকিং-এর ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। সুযোগ পেলেই যেন চলে আসি।

 

কিন্তু ঢাকা থেকে এত দূর একা যেতে ইচ্ছা করছিলো না। এমন সময় রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু দিপুর সৌজন্যে একা একা ভ্রমণের কষ্টটা আর পোহাতে হলো না।

কিছু কেনাকাটা করে চলে গেলাম কমলাপুর। চট্টগ্রামগামী ট্রেনের একটা কেবিন বুক করা ছিল। কেবিনে দুইটা স্লিপার। খুব ছোট বেলায় এমন কেবিনে করে পরিবারের সাথে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। এরপর আর সুযোগ হয়নি।

সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছে দিপুর বাসায় ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা দিলাম কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে বাসে করে পৌঁছলাম কাপ্তাই নতুন বাজার। সেখানে ছোট ভাই হাসান আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। এরপর বেড়ান্যে লেকে ঘুরে আসার জন্য আপ-ডাউন হিসেবে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করলাম।

পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আমাদের অটোরিকশা কখনও ওপরে উঠছে আবার কখনও রোলার কোস্টারের মত সাঁই সাঁই করে নেমে যাচ্ছে। এভাবে একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম বেড়ান্যে লেকে। বেড়ান্যে লেকের মনোরম পরিবেশ ও খাবার।  ছবি: বাংলানিউজএকদিকে বন আরেক দিকে লেক। উত্তর কালিন্দপুরের অসাধারণ একটা জায়গা এই লেক। দুপুরের রোদের মধ্যে কায়াকিং করতে চাইলাম না। তাই কটেজে বসে নির্মল বাতাসে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষণ। দুপুরের খাবারের অর্ডার করে রাখলাম ক্যাফেতে। এখানে আগে থেকে অর্ডার না করলে সাধারণত খাবার পাওয়া যায় না।

নির্মল পাহাড়ি নির্জনতায় কখনও কটেজে আবার কখনও হ্যামকে ঝুলে সময় কাটাতে লাগলাম। এক/দেড় ঘণ্টার মধ্যে খাবার রেডি। জুম চালের ভাত, ডাল, আলু ভর্তা আর মুরগির ঝাল ফ্রাই। লাঞ্চ সেরে আবার কিছুক্ষণের বিশ্রাম। একইসঙ্গে চলতে থাকলো ছবি তোলা। রঙিন পোশাক পরিহিত ৩ পাহাড়ি তরুণী কায়াকিং করছিলেন লেকে। তাদের ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারলাম না। অনুমতি নিয়ে কিছু ছবি তুলে ফেললাম।

এরপর আমাদের কায়াকিং করার পালা। প্রতি ঘণ্টা ৩০০ টাকা করে টিকিট কেটে উঠে পরলাম রোমাঞ্চকর এ জলজানে। ওঠার আগে আমাদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে দেয়া হলো। শুরু হলো স্বচ্ছ জলে কায়াক নিয়ে আমাদের অ্যাডভেঞ্চার। বৈঠা চালিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম পুরো লেক। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত কিছু স্থলভূমিও দেখতে পেলাম লেকের মাঝে। বেড়ান্যে লেকে কায়াকিং।  ছবি: বাংলানিউজকায়াক নিয়ে লেকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে আসছে টেরই পাইনি। অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম আমরা। এমন সময় দেখি ঘাট থেকে একটা ইঞ্জিন চালিত বোট এসেছে আমাদের দ্রুত নিয়ে যেতে। জানা গেল, সন্ধ্যার পর লেকে থাকা নিরাপদ না। ইঞ্জিন চালিত বোটের সাথে আমাদের কায়াক বেঁধে নিয়ে গেল কায়াক স্ট্যান্ডে।

কায়াক স্ট্যান্ডে ফেরার পথে উপভোগ করলাম পাহাড় ঘেরা লেকে সন্ধ্যা নামার অপার্থিব দৃশ্য। দিগন্তে জমে থাকা মেঘের ফাঁক দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলোছায়া এক মায়াবী জাল বিস্তার করে রেখেছিল চারপাশে।  বেড়ান্যে লেকে সন্ধ্যার অপার্থিব দৃশ্য।  ছবি: বাংলানিউজকায়াক স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি আমাদের অটোরিকশার চালকও চলে এসেছেন। আলো থাকতে থাকতেই চলে আসার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছিলেন তিনি। সন্ধ্যের পরে নাকি পাহাড়ি হাতি চলে আসে এই অঞ্চলে। হাতির সামনে পরে গেলে যাবার আর কোনো উপায় থাকে না। যতক্ষণ হাতি ওই স্থান ত্যাগ না করে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

কিছুদিন আগেই নাকি হাতির আক্রমণে কয়েকজনের প্রাণহানি হয়। তবে আমি চাইছিলাম সামনে একপাল হাতি এসে হাজির হোক। এতে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বুনো হাতি দেখার সৌভাগ্যও হয়ে যেত। কিন্তু ভাগ্য আমার সুপ্রসন্ন হলো না। অন্ধকারে পাহাড়ের মধ্যদিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে শহরের দিকে যেতে যেতে ভাবলাম, লেকের জলে কায়াকিং-এর অভিজ্ঞতাও কম রোমাঞ্চকর ছিল না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।