ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পর্যটক টানতে থাই খাবারের যতো আয়োজন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৭
পর্যটক টানতে থাই খাবারের যতো আয়োজন থাই খাবার। ছবি: ভাস্কর সরদার

থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: দেশের আয়ের অন্যতম মাধ্যম যে বিনোদন হতে পারে, তা থাইল্যান্ডকে দেখলে বোঝা যায়। বিনোদন বলতে খাবার কেন্দ্রিক বিনোদন। শুধু খাবারকে কেন্দ্র করেই একটা দেশ পর্যটনের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। আর খাদ্যকে কেন্দ্র করেই অন্যান্য আমোদ প্রমোদে মেতে ওঠে ভ্রমণকারীরা।

থাইল্যান্ডে পানির চেয়ে অন্যান্য পানীয় ‍অনেক সস্তা। ৭৫০ মিলিমিটার পানির দাম যেখানে ৪৫ বাথ, সেখানে কোমল পানীয় ১০ বাথ।

দশ বাথ মানে বাংলাদেশি তেইশ টাকা। এসব বিষয় উহ্য রাখলে থাই খাবার বিশ্ব প্রসিদ্ধ। থাই খাবার বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষ সমাদারের সঙ্গে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে থাই রেস্তোরাঁ বিরাজমান। তবে তা একদিনে হয়নি। দেশটির প্রশাসন তাদের খাবারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে কম পরিকণ্পনা করেনি বা এখনো করে চলেছে।
 
থাইদের প্রধান খাদ্য ভাত মাছ ও সবজি। তবে আপামর ভাতে-মাছে বাঙালি যেভাবে অভ্যস্ত সেরকম না। কড়াইতে রসিয়ে কষিয়ে রান্নায় এরা অভ্যস্ত না। সেদ্ধ এবং সাথে বিভিন্ন সুগন্ধি মসলার মিশ্রণ। বলা যেতে পারে পরিচিত খাবার অপিরিচিতভাবে পরিবেশন।
 
থাই রান্না বা থাই খাবার মোটামুটি ৬০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়। তখনো থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক পর্যটনের কেন্দ্র হয়ে ওঠেনি। ’৭০ এর দশকে ভিয়েতনামের যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যরা বিপুল সংখ্যায় অবস্থান নেয় থাইল্যান্ডে। থাই খাবারই ছিলো তাদের চালিকা শক্তি। থাই খাবার।  ছবি: ভাস্কর সরদার
 
বিশ্বের দরবারে প্রথম ১৯৫৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম থাই রেস্তোরাঁর সন্ধান পাওয়া যায়। যার নাম ছিলো "চাদ থাই রেস্তোরাঁ"। এরপর ১৯৬৭তে লন্ডনের দক্ষিণ কেসিংটন শহরের তৎকালীন সাবেক থাই কূটনীতিক এবং তার স্ত্রী মিসেস শ্রীও বুনাগের উদ্যোগে লন্ডনে প্রথম থাই রেস্তোরাঁ খোলেন-  যার নাম ছিলো "ব্যাংকক রেস্টুরেন্ট"। এরপর ৭০ এর দশকে  গোটা লন্ডনে থাই রেস্তোরাঁর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩শ’র মত।
 
থাইল্যান্ডের থাকসিন প্রশাসনের পরিচালনায় ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের খাবারের পরিচিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। যার নাম ছিলো ‘কিচেন অব দ্য ওর্য়াল্ড’।   এই উদ্যোগের জন্য তৎকালীন  বার্ষিক বাজেট ছিলো ৫০০ মিলিয়ন বাথ।
 
ব্যাঙ্ককের কেলোগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এবং সাসিন ইনস্টিটিউটের ২০০৩ সালের এক জরিপে দেখানো হয়েছে, ইতালীয়, ফ্রেঞ্চ, চীনা, ভারতীয় ও জাপানি খাবারের পেছনে থাইল্যান্ডের রন্ধনপ্রণালী ছিলো ছয় নম্বর স্থানে। থাই খাবার।  ছবি: ভাস্কর সরদার
 
২০১১ সালে সিএনএন এর বিশ্বের সর্বাধিক সুস্বাদু খাবারের তালিকায়, সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে প্রথম স্থান অধিকার করে থাইল্যান্ড। এর মধ্যে ছিলো থাইল্যান্ডের ভাজা চালের ২৪টি পদ, সবুজ কুরি দিয়ে একটি পদ। নুডুলস দিয়ে তৈরি পাথ থাই।
 
থাইল্যান্ডবাসীরা বিশ্বাস করে যে, খাবার অপচয় করা পাপ। এতে ‘চালের দেবতা’ রাগ করে। তাতে তাদের ভবিষ্যতে খাদ্য কষ্টে ভুগতে হতে পারে। থাইরা একসাথে খাবার ভাগ করে খেতে ভালোবাসে। একা খেতে মোটেই পছন্দ করে না।
 
থাইল্যান্ডের বিশ্ব পর্যটনের উন্নয়ন বা জনপ্রিয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করা হয় কৃষিখাতের রপ্তানি বৃদ্ধি। ২০০৯ সালের জুনে থাইল্যান্ডের পর্যটন কর্তৃপক্ষগুলোকে  নিয়ে ব্যাংককের রাণী সিরিকিত ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে শুধু থাই খাবারকে আরও কি ভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে সম্মেলন করেন।

তিনি বলেন, পর্যটন আকর্ষণে থাই খাবারের প্রচার আমাদের প্রধান স্থান করা হোক। দেশের ও বিদেশের বাজারগুলোও অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠুক। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০০৮ সালে খাওয়ার এবং পান করার সময় ভ্রমণকারীরা ৩৮.৮ বিলিয়ন বাথ ব্যয় করেছে। যা ১৯৯৭ সালে ছিলো দেশের মোট আয়ের ১৬ শতাংশ।  

পর্যযটকদের আকর্ষণের জন্য প্রতিটা বিষয়ে থাকে তাদের নিজস্ব কার্যকর পরিকল্পনা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা,  জুলাই ১২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।