ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

রূপের আধার, ঐতিহ্যের টেমস

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
রূপের আধার, ঐতিহ্যের টেমস রূপের আধার, ঐতিহ্যের টেমস

লন্ডন থেকে: লন্ডন এসেছি কিন্তু টেমসের তীরে যাব না সেটা কী করে হয়? ছাত্র জীবনে যে টেমসকে নিয়ে বইয়ের পাতায় এত এত পড়েছি, টিভি, পত্রিকা, ম্যাগাজিনে তার যে ঐতিহ্যের কথা জেনেছি, আজ পেশাগত প্রয়োজনে সেই টেমসের পাড়েই মাসখানেক হলো থাকছি। প্রতিদিনই মনে হয় লন্ডনের এই স্রোতস্বীনিকে দেখে আসি। হয়ে ওঠে না। অবশেষে চিরযৌবনা টেমসের দেখা মিললো।

সারাদিনের কাজ শেষে বিকেলে নদী তীরে দাঁড়াতেই তাকে নিয়ে লেখা রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের The River's Tale কবিতাটি মনে পড়ে গেল।

I walk my beat before London Town,
Five hours up and seven down.
Up I go till I end my run
At Tide-end-town, which is Teddington.
Down I come with the mud in my hands
And plaster it over the Maplin Sands. _ Rudyard Kipling

শুধু কিপলিং নন, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, উইলিয়াম জনসন ও থমাস গ্রের মতো কবিরাও টেমসের সৌন্দর্যগাথা লিখেছেন তাদের কবিতায়।


   
সবুজে ঘেরা লন্ডনের সুরম্য অট্টালিকার পাশ দিয়ে তার কুলকুল ধ্বনি, ঝিরি ঝিরি বাতাস, পাখির কলতান ও নৌকার ছোটাছুটিতে ব্যস্ত এই শহরের মধ্যে যে অপরূপ রুপের আবেশ টেমস ছড়িয়ে রেখেছে তাতে যে কেউই বিমোহিত হবে।

তাই কাজের প্রয়োজনে কিংবা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কতশত মানুষ এক মুহূর্তের জন্য হলেও এই স্রোতস্বীনির সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য ছুটে আসেন। লন্ডনের ব্যস্ত নগর জীবনের এক অনাবিল প্রশান্তির আধার এই টেমস।

টেমস নদীর উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কটসওল্ড গিরিশ্রেণির জলপ্রবাহ থেকে। এটা যখন পূর্বদিকে ৩৫০ কিলোমিটার পথ বেঁকে যায় ওখন এর সঙ্গে আরও অন্যান্য নদী এসে মিলিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার প্রশস্ত মোহনার মধ্য দিয়ে উত্তর সাগরে গিয়ে পড়ে।
রূপের আধার, ঐতিহ্যের টেমসটেমস নদীটি লন্ডনের হলেও এর নামকরণ করেছিলেন রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার। খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ঠিক তার পরের বছর তিনি যখন ফিরে আসছিলেন তখন তার ফেরার পথে এই নদী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন, যার নামকরণ করেন, টেমেসিস বা টেমস।

টেমস নদীর নাম যেমনটি শোনা যায়, যুক্তরাজ্যের সবচাইতে দীর্ঘ নদী সেভেরনের নাম কিন্তু অনেকেই জানেন না। ইংল্যান্ডের সবচাইতে বড় নদী টেমস ৩৪৬ কিলোমিটার হলেও পুরো যুক্তরাজ্যে ওয়েলসের সেভেরন নদীর দৈর্ঘ্য হলো ৩৫৪ কিলোমিটার।

কিন্তু তারপরেও বেশ দুর্ভাগা বলতে হবে সেভেরনকে। কেননা  ইংল্যান্ডের নানা ঘটনাপ্রবাহের সাথে টেমস যেভাবে জড়িত সেভেরন তার সিকিভাগও নয়। তার নামও তেমন মানুষের মুখে মুখে ফেরে না। ইতিহাসের অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী টেমস নদী সেন্ট্রাল লন্ডন হয়ে অক্সফোর্ড, কিংসটন, রিডিং, উইন্ডসর, রিচমন্ড ঘেঁষে সঙ্গম ঘটিয়েছে উত্তর সাগরে।

সেই টেমসের তীরবর্তী শহরে বসেই আজ তাকে নিয়ে লিখলাম। আর কবে লেখা হবে জানি না। তবে আবারও তার তীরে ফিরে আসতে চাই ও তাকে নিয়ে লিখতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এইচএল/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।