ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

যতো কাছে ততো মুগ্ধতা কুতুব মিনারে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
যতো কাছে ততো মুগ্ধতা কুতুব মিনারে কুতুব মিনার-ছবি-আসিফ আজিজ

দিল্লি থেকে ফিরে: শতয‍ুবার ভারত সফরের চতুর্থ দিন। দিল্লিতে শেষ দিনের সকাল। ডিজিটাল ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্র থেকে গন্তব্য ছিলো কুতুব মিনার। শীতের সকালের কুয়াশা ভালো করে কাটেনি। নীলাকাশের বাধা হয়ে ধোঁয়াশা তখনও। দিল্লির সুন্দর, পরিচ্ছন্ন সড়ক ধরে আধাঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের গন্তব্যে পৌঁছালো আমাদের গাড়ি। ভিআইপি মর্যাদায় গাড়ির সামনে ছিলো সার্বক্ষণিক পুলিশ গার্ড। তাই জ্যাম ঠেলে সময় বেশি লাগেনি।

দূর থেকে দেখা কুতুব মিনার-ছবি-আসিফ আজিজনেমেই গাছের মাথা গলে চোখে পড়লো ৭২.৫ মিটার উচ্চতার মিনার। রাস্তা পেরিয়ে দক্ষিণে মিনিট চারেক হাঁটলেই কুতুব মিনার কমপ্লেক্স।

ভারতে মুসলিম বিজয়ের অন্যতম স্মারক এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। ইটের সড়ক ধরে এগোতেই ভেসে এলো টিয়া পাখির ডাক। বেশকটিকে দেখা গেলো গাছের ডালে। একটু এগিয়েই সিমেন্টে খোদাই করা পুরো কমপ্লেক্সের ম্যাপ। পর্যটকদের বোঝা ও দেখার সুবিধার্থে এ ব্যবস্থা। স্বাভাবিকভাবেই ইলতুৎমিশের সমাধি, অসম্পূর্ণ মিনার কিংবা পেছনের মাদ্রাসা রেখে মূল আকর্ষণ কুতুব মিনারের দিকেই ছুটতে দেখা গেলো।  

কুতুব মিনার, দূর থেকে কাছে-ছবি-আসিফ আজিজশিবলি নোমান ভাই আর আমি মূল কমপ্লেক্সে ঢোকার আগে কিছুক্ষণ দূর থেকেই চেষ্টা করলাম মিনারের পূর্ণ ছবি নেওয়ার। কিন্তু সুন্দর সবুজ গাছগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো বারবার। তবে তেলি পামের আকাশচুম্বী দুটি গাছের ফাঁক গলে মিনারটি দেখতে লাগছিলো বেশ। তখনও জানিনা কোন দিক থেকে পূর্ণ ছবি পাবো। আবার বিকেলে আহমেদাবাদের ফ্লাইট। তাই ১০০ একর জায়গার কমপ্লেক্স ঘোরার জন্য সময় খুব বেশি ছিলো না। অনেকটা তাড়াহুড়া করে তাই মিনারের কাছে যাওয়া। কাছ থেকে দেখলে ঘাড় উঁচিয়ে দেখতে হয়।  

কুতুব মিনার কমপ্লেক্স, বাঁয়ে দূরে ইলতুৎমিশের সমাধি-ছবি-আসিফ আজিজকিন্তু অদ্ভুত বিষয়, মিনারের কাছাকাছি যতো যাওয়া যায় ততো বাড়তে তাকে আকর্ষণ। প্রাচীন স্থাপত্য ও প্রত্ন সম্পদ টিকিয়ে রেখে কীভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটক সমাগম ঘটাতে হয় তা জানে ভারত সরকার। প্রায় ৮শ বছরের পুরনো এ স্থাপনার কাছে গেলে এখনও মনে হয় নির্মাণ বোধহয় সদ্য শেষ হলো! ১২৩৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া লাল বেলে পাথরে তৈরি এ মিনারে ক্যালিওগ্রাফি করা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত। মিনারটি শরীর এতো চকচকে ঝকঝকে যে এতো আগের তা বোঝার উপায় নেই।

আয়রন পিলার-ছবি-আসিফ আজিজউঁচু মিনার সমসময় মুসলিম বিজয়ের প্রতীক নির্দেশ করে। জানা যায়, সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি কুতুব উদ্দিন আইবেক রাজা পৃথ্বিরাজকে তরাইনের যুদ্ধে পরাজিত করেন ১১৯২ সালে। এ বিজয়ের পর দিল্লি অধিকার করে তিনি কুওয়াতুল ইসলাম নামে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। সঙ্গে এ মিনার। পাঁচতলা বিশিষ্ট এ মিনারে রয়েছে পাঁচটি তলা। প্রতি তলায় রয়েছে ব্যালকনি। প্রথমতলা থেকে একসময় আজান দেওয়া হতো। ১১৯৩ সালে ভারতবর্ষের প্রথম মুসলমান শাসক কুতুব উদ্দিন আইবেক কুতুব মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও ইলতুৎমিশ ও ফিরোজ শাহ তুঘলকের হাত ধরে তা শেষ হয় ১২৩৬ সালে। ৩৭৯টি সিঁড়ি রয়েছে এর চূড়া পর্যন্ত। আর উচ্চতা অনেক হওয়ায় নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের কাজেও ব্যবহার হতো।

দক্ষিণ থেকে উত্তরে দেখা কুতুব মিনার-ছবি-আসিফ আজিজশুধু কুতুব মিনার নয়, পুরো কমপ্লেক্সটিই দর্শনার্থীদের জন্য বিস্ময়। সবুজ লন পেরিয়ে কমপ্লেক্সে ঢুকে কুতুব মিনার পেরিয়ে ডানে চোখ রাখলেই প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ দেখা যায়। জায়গাটির সঙ্গে অদ্ভুত মিল গ্রিক-রোমান আদি সভ্যতা চিহ্নের। কলোসিয়াম নিজের চোখে দেখিনি। দেখেছি ছবিতে। এর চারপাশ ঘুরে বিভিন্ন পাশ থেকে বিচার করলে অনেকটা মিল পাওয়া যায়। এ চত্বরের মাঝে রয়েছে একটি আয়রণ পিলার। পিলারের সামনের এপিটাফের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ফুট উচ্চতার এ লোহার পিলারটির বয়স প্রায় ১৬শ বছর।  

অসমাপ্ত আলাই মিনার মিনার-ছবি-আসিফ আজিজঅর্থাৎ মিনার তৈরিরও ৮শ বছর আগের। মুসলমানরা দিল্লি অধিকার করার বহু আগে গুপ্ত রাজাদের আমলের। ভারতের লৌহশিল্পীদের তৈরি অনন্য নিদর্শন এটি। এতো বছর পরেও নির্মাণ কৌশল আর ভালো মানের লোহা ব্যবহার করায় এতে জং পড়েনি একটুও। আর এর ওজন ৬ হাজার কেজি। ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা এ পিলারে খোদিত সংস্কৃত ও ব্রাহ্মীলিপি।

কুতুব মিনারে কোরআনের আয়াত-ছবি-আসিফ আজিজ
মাত্র একঘণ্টা সময়ে এতো বড় কমপ্লেক্সের সব বিষয়বস্তু নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখে শেষ করা কঠিন। মসজিদ ও মিনার ছাড়াও এখানে আরও রয়েছে আলাই গেট, অসমাপ্ত আলাই মিনার, সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী, গিয়াস উদ্দিন বলবন ও ইলতুৎমিশের সমাধি।

আকাশপানে তাকিয়ে কুতুব মিনার-ছবি-আসিফ আজিজইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এ মিনার ইটনির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার। কুরআনের আয়াত ও টেরাকোটার কাজ সত্যি মুগ্ধতা ছড়ানো। যতো কাছে যাওয়া যায়, ততোই অন্যরকম সুন্দর চোখে ধরা দেয়।  

আরও পড়ুন...
**ইডেন গার্ডেনে গিয়ে যত আফসোস!
** সত্যি ‘গো দেওতা কা দেশ’!
**  তাজমহলে হয়ে যান ‘ডিপি’, করুন ‘সিপি’!
**গুজরাটে বসে কলকাতার থ্রিলার দর্শন
** সুর-বাদ্যে বাংলাদেশ-ভারতের সংস্কৃতি বিনিময়

**সমাধিসৌধে খচিত গান্ধীর ‘শেষ উক্তি’

 
 
 
 

** দিল্লি জামে মসজিদ থেকে লালকেল্লা
** সান্ধ্য আলোয় যুদ্ধস্মৃতির ইন্ডিয়া গেট
** জাদুটানা দিল্লি জাদুঘর
** বাংলা উচ্চারণেই মুগ্ধতা ছড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব
** বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রণব মুখার্জির
** হিমালয় দেখতে দেখতে সোয়া ২ ঘণ্টায় দিল্লি!
** ভারতে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম
** ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম  

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।