ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

নিরিবিলি ও ঝকঝকে শহরে

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৬
নিরিবিলি ও ঝকঝকে শহরে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চারদিকটাই পরিষ্কার। নেই ধুলাবালি, ময়লা-আবর্জন কিংবা গাড়ির হর্ন আর কোলাহল।

সব কিছুতেই নিরিবিলি, ঝকঝকে-তকতকে একটা ভাব। একেই হয়ত তো বলে পুরোদস্তুর সাজানো-গোছানো।

চৌরাস্তার আধিক্য। তবে এর মানেই যে একপাশ সচল আর অন্যপাশ সিগন্যালে আটকে থাকা- তা কিন্তু ভুলেও চোখে পড়ে না। ম্যানুয়াল ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকলেও মানতেই হবে নির্দেশনা। ট্রাফিক আইনে এ যেন সুশৃঙ্খলতার অন্য নাম। এমন চর্চার প্রতিফলন সত্যিই দারুণ।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার দৃশ্যপট ঠিক এমন। ভ্রমণ পরবর্তী স্মৃতির আঙিনা থেকে যত দূর মনে পড়ে তার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রশংসা না করলেই নয়।

আসলেই তো নিরিবিলি, ঝকঝকে-তকতকে একটি শহরের নাম আগরতলা। শুধু শহর কেন, রাজ্যের অন্য জেলাগুলোতেও রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মানুবর্তিতার ছাপ। এই যেমন দক্ষিণের জেলা সিপাহীজলা, গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরাসহ অন্য আরও চার জেলাও।

ঘুরে-বেড়াতে চোখে পড়বে না শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, যানজট কিংবা নিয়ম ভঙ্গের কোনো নজির। সবই চলে সুষ্ঠুভাবে, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। কোনো গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলে বা সিগন্যালে আটকালে পেছন থেকে একটুখানি ‘প্যাপ-পুপ’ হর্নও বেজে ওঠে না, যেন প্রত্যেকে ধৈর্যশীল।

সেখানকার আরও একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র। নিয়ম রয়েছে প্রতি ছয়মাস অন্তর যানবাহনকে এই কেন্দ্র থেকে সনদ নিতে হবে। এতে যানবাহন থেকে পরিবেশ দূষণের কোনো শঙ্কাই নেই।

রাস্তাগুলো বেশি চওড়া না হলেও লেন ধরে চলার কারণে সে কমতি একটুও চোখে ধরে না। এছাড়া চোখে পড়েনি ডিভাইডার, কেবলমাত্র রয়েছে কালো পিচে আঁকা লেনপৃথককারী সোজা টান। নেই কোনো ভাঙাচোরার চিহ্ন। আর এমনভাবেই কোনো অসুবিধা ছাড়াই যানগুলো গতি উঠাচ্ছে সড়ক-মহামড়কে।

ঘন গাছপালায় ঘেরা রাস্তার দুইপাশ। আগরতলা শহর থেকে বেরিয়ে এলেই মনে হবে যেন গাড়ি নিয়ে গভীনে ঢুকছেন, বাড়তি পাওনা হিসেবে ছোট পাহাড়ি টিলা তো রয়েছেই।

ত্রিপুরা রাজ্য তথা আগরতলায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক টয়লেট ব্যবস্থা। চৌরাস্তার ধারে ছোট-বড় শৌচাগার স্থাপিত। সড়কের ধারে স্বল্প জায়গায় এমন শৌচাগার এখানকার মানুষজনের একটি আস্থার নামও বটে। এ ধরনের সুযোগ অনেক বড় শহরেও চোখে পড়ে না, কিংবা ঢাকাতেও এই ব্যবস্থা প্রণয়নে অনেক প্রচেষ্টা চলছে- হয়ত আগরতলা হতে পারে উপযুক্ত উদাহরণ।
বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলতে মোড়ে মোড়ে মাঝারি ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিশাল জায়গাজুড়ে ময়লার ভাগাড় যেমন তৈরি হয়নি, তেমনি মানুষও নিজদের সৃষ্ট আবর্জনা-ময়লা নিজেরাই সেই মাঝারি ডাস্টবিনে ফেলে আসতে পারেন। এতে যেমন সচেতনতা তৈরি হয়, তেমনি দায়িত্ববোধ কাজ করে। এই দায়িত্ববোধ থেকে কেউ তার বাড়ির আশপাশ কিংবা সড়ক-মহাসড়কে ইচ্ছে করলেই ময়লা ফেলেন না। মোড়ে মোড়ের ডাস্টবিনগুলোও উপচে পড়ার আগে কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায়।

সার্বিক দিক থেকেই একটি আদর্শ শহর বলা চলে আগরতলাকে। শুধু রাজধানী নয়, ত্রিপুরা রাজ্যের অন্য জেলাগুলোও এমন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।