ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

গ্রীষ্মের দার্জিলিং-৯

এখনও অভিযাত্রী পা ‍ছুঁতে চায় তেনজিং রক

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
এখনও অভিযাত্রী পা ‍ছুঁতে চায় তেনজিং রক ছবি: শামীম হোসেন ও হুসাইন আজাদ

[পূর্বপ্রকাশের পর]

দার্জিলিং ঘুরে: হোটেল বিড়ম্বনা ও রাতে টুকটাক কেনাকাটা শেষে পরেরদিন সকালে দার্জিলিং শহর দেখার পালা। এ কাজে সাহায্য নিতে পারেন সংশ্লিষ্ট হোটেলের।

ফাইভ পয়েন্ট, সেভেন পয়েন্ট, টেন পয়েন্ট- এমন ভাগ অনুযায়ী ঠিক করে নিতে পারেন গাড়ি। দলে কম লোক হলে হোটেল কর্তৃপক্ষ অন্য গ্রুপের সঙ্গে ট্যাগ করে দেবে। আর ন্যূনতম আটজন হলে নিজেরাই নিতে পারেন একটি টাটা সুমো।

আমাদের সঙ্গে পাঁচদিনের জন্য যেহেতু গাড়ি ছিলো তাই সে চিন্তা করতে হয়নি।  

দার্জিলিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সূর্যোদয় দেখা। এর জন্য শীতের আড়মোড় ভেঙে রওয়ানা দিতে হয় ভোর ৪টায়। তবে দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। কুয়াশা বেশি থাকলে দেখা যায় না। গ্রীষ্ম হলেও কুয়াশা ছিলো বেশি। তাই আমরা সে চেষ্টা করিনি। পরে শুনলাম ওইদিন দেখাও যায়নি।


সকালে ফাইভ পয়েন্ট দেখার জন্য বের হলাম। মানে পাঁচটি স্পট। প্রথম গন্তব্য ছিলো দার্জিলিং শহরের কাছাকাছি একটি চা-বাগান। কিন্তু যে বাগান দেখতে যাওয়া সেখানে পর্যটক ভ্রমণ নিষিদ্ধ বর্তমানে। তাই নেমে পড়লাম তেনজিং রক।

পাহাড় ট্রেকিংয়ের আগে এ বড় পাথরখণ্ডে চড়ে অভিযাত্রীরা অনুশীলন করেন। চাইলে পর্যটকরাও এখানে উঠতে পারেন। জনপ্রতি খরচ মাত্র ৫০ টাকা। কোমরে দড়ি বেঁধে আমরা চারজন লেগে পড়লাম উঠতে। শুধু শামীম ভাইয়ের শুরু হয়েছিলো কাঁপুনি। ওপরে উঠেও ভয়ে কাঁপছিলেন তিনি। প্রথম এভারেস্টজয়ী তেনজিং নোরগের নামে এ পাথরখণ্ডটির নামকরণ।

এর একটি ইতিহাস আছে। সেটা সংক্ষেপে বলে রাখা ভালো। তেনজিং এভারেস্ট জয় করেন ১৯৫৩ সালে। ‍আর তেনজিং রক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। এটি একটি প্রাকৃতিক পাথরখণ্ড। জানা যায়, তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয়ের আগে এতে অনুশীলন করেন। পরের বছর পর্বতারোহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।  

জওহর লাল নেহেরু সেসময় দার্জিলিং ভ্রমণে এলে কোনো নিরাপত্ত সরঞ্জাম ছাড়াই এই পাথরখণ্ডে ওঠেন তেনজিং। দার্জিলিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হিমালয়ান মাউন্টেইনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম ডিরেক্টরও হন নোরগে। এই রকটি এখনও পর্বতারোহী ও ভারতীয় সেনাদের মহড়ার জন্য আদর্শ। হিমালয় মাড়ানোর আগে এই ছোট্ট এই রকে আরোহন এখনও ‍মানা হয় আশীর্বাদ হিসেবে।

দার্জিলিং শহর থেকে গাড়িতে তেনজিং রক যেতে সময় লাগে আধাঘণ্টার মতো। কোমরে দড়ি বেঁধে দিলে আরেকটি দড়ি ধরে পাথরের শরীর বেয়ে উঠতে হয়। উপরে কোমরের দড়িটি ধরে রাখেন আরেকজন। চূড়ায় উঠে একটু গা কাঁপে বটে। মনে হয় শূন্যে দাঁড়িয়ে। এখান থেকে পাহাড় ও দার্জিলিং দেখার আলাদা মজা রয়েছে। শারীরিক ভারসাম্যের অনুভূতির জন্য জায়গাটা চমৎকার।  

রকের নিচের জায়গাটি ছোটখাটো একটি মার্কেট। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার, চা পাতা, নেপালি ও ভুটিয়া গহনা পাওয়া যায়। কেনাকাটার জন্য জায়গাটি একেবারে মন্দ নয়।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৬
এএ

**দার্জিলিংয়ে হোটেল বিপত্তি, অতঃপর...
**শুটিংয়ের চা বাগান, আকাশছোঁয়া পাইনের লামাহাটা
** পাহাড় থেকে পাহাড় দেখার দেলো-কালিম্পং-দুরপিনদাড়া
**পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরতম গ্রাম রিশপে
** মেঘে ভিজে লোলেগাঁও ক্যানোপিতে
** গরুবাথানের পাথুরে স্বচ্ছ পাহাড়ি ধারায়
** ফুলবাড়ি হয়ে দার্জিলিং, হ্যাপা কম নয় ২৫ রুপির ঘোষণায়
** ৭ হাজার ফুট উচ্চতার লাভা শহরে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।