ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

‘হ্যাপি জার্নি বাই শাহপরাণ!’

সাজেদা সুইটি, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
‘হ্যাপি জার্নি বাই শাহপরাণ!’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাওয়া ফেরিঘাট থেকে: কুয়াশা কমেছে, রোদের দেখাও মিলেছে। তাই কিছুক্ষণ হল ফেরি ছেড়েছে।



সামনের দৃশ্যটা মজার ছিল। রাস্তায় প্রতিপত্তি দেখিয়ে চলা বড় গাড়িগুলো এখানে কেমন নিরীহ চেহারায় দাঁড়িয়ে। মায়ের বাধ্য ছেলের মতো সার বেঁধে জায়গা
করে নিয়েছে তারা। ছোট্ট গাড়িটিকে টুক করে ধাক্কা লাগিয়ে পালানোর সুযোগ নেই।

গাড়ি, মানুষ আর অনেক অনেক মুরগি নিয়ে ছাড়ার অপেক্ষায় থাকা সামনের ফেরিটা দেখছিলাম। নাম তার 'রাণীক্ষেত'। রোগের নামে নাম বলে চেহারাটা রুগ্ন, নাকি রুগ্ন চেহারা বলে এমন নাম সেটাই ভাবছিলাম।  

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তিমির দত্ত নৌ-পরিবহন বিটে দীর্ঘদিন কাজ করছেন।

মনোভাব দাদাকে বলতেই তিনি হাসলেন, 'আরে পাগলি! এগুলোতে পাকিস্তান আমলে পাট বহন হতো। '

আরেকটি ফেরি দেখিয়ে বলেন, এগুলো টানা ফেরি। টেনে নিয়ে যাওয়ার সিস্টেম। বাংলাদেশ গরিব দেশ বলে না অনেকে? আসলে কি গরিব? এগুলো আমাদের সম্পদ। নতুন-পুরাতন সবইতো দরকাররে।

কথাটা মনে ধরলো আমার। এ রুটে ৮টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করে বলেও জানালেন দাদা।

আমরা বসে আছি শাহপরাণ নামের ফেরির ডিলাক্সে। বরগুনার পথে গাড়িতে চড়েছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আট সাংবাদিক।

বেশ ঘন কুয়াশা ভেদ করে পাখিদের উড়ে চলা দেখতে দেখতে আসছিলাম। আর কিছু খুব ভালো দেখা না গেলেও আকাঙ্খার পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞ কিছুটা দেখার সুযোগ হল।

কাজ করছেন আমাদের শ্রমিক ভায়েরা। রডে গড়া পিলারের বিশাল অবয়বের পেটে আরেক ভাইকে নামতে দেখা গেল। চোখ বুঁজে স্বপ্নটা আরেকটু দেখতে
মন চায়। একদিন এখানে পুরো অন্য চিত্র দেখার অপেক্ষায় আছে মন। আমাদের অহঙ্কারের পদ্মাসেতু!

মাওয়া এসে নাস্তাটা তড়িঘড়ি সেরে নিতে হল। এখানে এসে ইলিশ না খেলে আফসোস থাকবে। কিন্তু সময়ের অভাব।

তবে ইলিশ না খেতে পারলেও পরোটার সঙ্গে নেওয়া ডাল, সবজি ভাজিতে ইলিশের অস্তিত্ব পেয়ে সান্ত্বনা নিলাম। ডিম প্লেটে রেখেই দৌঁড়ে ফেরিতে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের অবগতি ও বিআইডব্লিউটিসি'র তদারকিতে যাচ্ছি বলে যাত্রা নির্বিঘ্নের আশা করছেন সবাই।

ফেরি ছাড়তেই পানির চঞ্চলতা, ঘোলা হয়ে যাওয়ার দৃশ্য, আর গাঙচিলের পিছু নেওয়া দুষ্টুমি দেখতে ভালো লাগছিল।

এর আগে বরিশাল গিয়েছি দু'বার, লঞ্চে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার জনসভাকেন্দ্রিক সে সফরগুলো ছিল রাতের। এবার ফেরিযাত্রা, দিনের। তুলনা করে কোনটি মন্দ- বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছে, দুটোই চমৎকার।

খুব ভিড় নেই ফেরিতে, সিস্টেমও মনে হচ্ছে মন্দ নয়। অনেকের কাছে অনিয়মের গল্প শুনে অন্যচিত্র আশঙ্কা করছিলাম। কিন্তু জটিলতা সেভাবে চোখে পড়লো না স্বল্প সময়ে। ভাবছি, ঈদ বা কোন উপলক্ষকেন্দ্রিক ঘটনা-দুর্ঘটনার গল্পই হয়তো শুনে আসছিলাম এতদিন।

জলে বিলি কেটে একের পর এক নৌযান চলার দৃশ্যে মনটা অদ্ভূতরকম ভালো হয়ে যায়। এ দেশটা এত সুন্দর কেন? এত মায়া বলেই কি এর জন্য এত ধাপধুপ জীবনটা দিয়ে দিতে মন চায়!

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসকেএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।