ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-৬

মেঘেঢাকা অপার্থিব সৌন্দর্যের নেফিউ

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
মেঘেঢাকা অপার্থিব সৌন্দর্যের নেফিউ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে ফিরে: মহা আকাঙ্ক্ষিত এক সকাল হলো। আকাঙ্ক্ষিতই তো! সারা রাত পায়ে ঘুম হারাম করা চুলকানির ঠেলায় একটুও ঘুম হয়নি।

ভোররাতের দিকে তন্দ্রা মতো পেলো। জেগে দেখি সকাল। ঘর থেকে বের হয়েই আগের রাতের কষ্ট ভুলে গেলাম। অভিযানে এই প্রথম একেবারে সকালেই সূর্যের দেখা পেলাম।

নেফিউ পাড়া থেকে তলাংময়ের চূড়া দেখা যাচ্ছিল। রোদের আঁচে সোনালি আভা। তৌহিদ তাড়া দিলো বেরুতে। কোনো রকমে আগেরদিনের বাসি খিঁচুড়ি আর মুরগির মাংস খেয়ে ব্যাগপ্যাক কাঁধে চড়িয়ে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।

বলে রাখি, আগের রাতে ভোজটি কিন্তু জম্পেশ হয়েছে। ঈদের দিন বলে কথা। রাতে তৌহিদের রান্না করা মুরগির মাংসের চরম ঝাল তরকারি খিঁচুড়ি দিয়ে খাওয়া হয়েছে গলা পর্যন্ত। তার রেশ আছে এখনও। সকালের খাওয়া তাই জমলো না।

নেফিউপাড়ার কারবারির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়া থেকে নামবার খাড়াইয়ের মুখে এসে চোখ একেবারে ছানাবড়া। সামনে অনেক নিচে ধূ ধূ শূন্যতা ঢেকে আছে মেঘের চাদরে। আমরা তার উপরে। অপার্থিব সে দৃশ্য। সিনেমায় দেখতে পারেন, কিন্তু কথা দিচ্ছি বাস্তবে দেখলে ব্যাপারটি আপনার আরও অবিশ্বাস্য মনে হবে। যতই নামতে লাগলাম নেফিউয়ের জঙ্গলে মেঘ তত আমাদের ঢেকে ফেলতে লাগলো। গায়ে ঠান্ডা স্পর্শ পাওয়া যাচ্ছে।

হাজরায় পাড়া এসে আর দাঁড়ানো হলো না। রেমাক্রি পার হয়ে একটানে উঠে গেলাম নয়াচরন পাড়া। যেতে হবে বুলং পাড়ার দিকে। সকাল থেকেই রোদ বেশ চড়িয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ রেমাক্রি ধরে এগিয়ে আবার উঠছি চড়াই বেয়ে। এ চড়াইয়ের উচ্চতা হাজার ফুট তো হবেই। তার উপর চড়া রোদ। দরদর করে ঘামছি আর ঘন ঘন গলা শুকিয়ে আসছে।

সাধারণত ট্রেকিং/ হাইকিং যেসব ট্রেইলগুলোতে হয় তার চারপাশ ঘিরেই থাকে ভুবন ভোলানো সুন্দরের ছড়াছড়ি। কিন্তু চড়াইয়ের পথে ফুসফুস যখন আরেকটু বেশি অক্সিজেনের জন্য হাশফাশ করে, পা আর চলতে চায় না তখন সৌন্দর্য দেখার চেয়ে পথটুকু পেরিয়ে যাওয়ার তাড়াই থাকে বেশি। আমারও হলো তাই।

কোনো রকমে চড়াই পেরিয়ে নিচে ঝিরিতে নেমে ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে বাঁচলাম। বিশ্রাম নিয়ে আবার ওঠা। থামলাম একেবারে বুলং পাড়ায় গিয়ে। এই পাড়ায় মুরং জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়া থেকে নেমে আবার দেখা পাওয়া গেলো রেমাক্রির। ট্রেক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে রেমাক্রি আমাদের সঙ্গেই চলবে।

বর্ষার শেষ বেলায় এখন ভয়ংকর স্রোত। বারবার আমাদের এপার ওপার করতে হচ্ছিলো স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করে। একটা পয়েন্টে এসে স্রোতের কাছে পরাজিত হওয়ার উপক্রম হলো। কাঁধের ব্যাকপ্যাক মাথায় নিয়ে খাল পার হতে গিয়ে স্রোতের সঙ্গে আর পারলাম না। নিজেকে স্রোতের কাছে সমর্পণ করতে হলো। তৌহিদ এগিয়ে গিয়েছিলো খানিকটা। সে এসে ধরতে ধরতে কয়েক ঢোক পানি খাওয়া হয়ে গেছে।

ভয় ধরিয়ে দিলো ব্যাপারটা। কিন্তু স্রোতের মুখে পা ফেলার কৌশলটা মনে গেঁথে যাওয়াতে আর সমস্যা হয়নি এরপর। ঘণ্টা দেড়েকের মতো হেঁটে অবশেষে দেখা পেলাম দিনের প্রথম বিস্ময়ের। মাথভারা খুম। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতোই জায়গাটি। দুই পাশে পাথুরে ডাঙা শিল্পীর বাটালির ছাঁচে পড়ে হয়ে উঠেছে নিজেই এক শিল্প। মাঝখানে নিচ দিয়ে বয়ে গেছে রেমাক্রি খাল। মাথভারা খুমের বর্ণনা মুখে দেওয়ার চেয়ে ছবিতে দিলেই বোধহয় মানায় ভালো।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৫
এএ

** দেশের সর্বোচ্চ চূড়ায় শ্রেষ্ঠ ঈদ উদযাপন
** জোঁকে রক্তাক্ত হয়ে আমার দেখা সুন্দরতম পাড়ায়
** বর্ণনাতীত কষ্ট, তবু স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় পাড়ি
** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-১: পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা
** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-২: মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।